মতামত

বাংলাদেশের শ্রমিক শ্রেণি সুবর্ণ জয়ন্তীতে কেমন দিন কাটাচ্ছেন?

-অধ্যাপক এম এম আকাশ

অধ্যাপক এম এম আকাশ (ফাইল ছবি)

আমরা জানি যে, সুযোগের অভাবের বিরুদ্ধে আমাদের সংবিধানেই আছে। যেখানে লেখা আছে –

১) সামর্থ্য অনুযায়ী সকলে কাজ করবেন এবং কাজের পরিমান ও গুন অনুযায়ী পাবেন। অর্থাৎ অসমতা থাকবে কিন্তু তা হতে হবে বাস্তব কাজ ও অবদানভিত্তিক। অথচ আমাদের নাগরিকদের উপযুক্ত কাজের সুযোগই নেই –আয়ই শূন্য –আয় বৈষম্যের প্রশ্ন তো পরের প্রশ্ন।

২) সংবিধানের আরেক জায়গায় বলা আছে, ‘অনুপার্জিত আয় অনুমোদিত হবেনা’। তার মানে ঘুষ, দুর্নীতি, উপহার, বকশিস, ভিক্ষা ইত্যাদি সংবিধান পছন্দ বা অনুমোদন করছে না। কিন্তু সেটাই আজ অহরহ ছোট-বড় অনেকেই করছেন।

৩) সর্বোপরি সংবিধানে লেখা আছে, “শ্রমিক কৃষককে শোষণ করা যাবে না”। তার মানে উদ্বৃত্ত মূল্য রাস্ট্রের মাধ্যমে সামাজিক কল্যাণে ব্যয় হতে হবে, কিন্তু আমরা ধনীদের উদ্বৃত্ত থেকে কর আদায় না করে গরিবদের থেকে পরোক্ষ কর আদায় করে ধনীদের জন্য তা ভুর্তকি দিচ্ছি, বৃহৎ ঋন খেলাপীদের ক্রমাগত বেল-আউট করা হচ্ছে।

তথাকথিত মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সংবিধানের তিনটি নির্দেশনা লঙ্ঘিত হতে বাধ্য। কারন এখানে প্রতিযোগিতা হয় অসম। ফলে ধনীরাই এখানে ক্রমাগত জিততে থাকেন এবং দরিদ্ররা ক্রমাগত হারতে থাকেন। ধনীদের আয় বাড়ে রকেটের গতিতে কিন্তু গরিব্দের আয় বাড়ে শামুকের গতিতে। এই ব্যবস্থায় উদ্বৃত্ত মূল্য ধনীদের পকেটেই জমা হয়। সৃষ্টি হয় একচেটিয়া হাউজের আধিপত্য। বাংলাদেশে পুরানো ২২ পরিবারের বদলে তৈরি হয়েছে ২২০০ পরিবার।

তবে বিপদ ঘনিয়ে আসে যখন বাইরের কোন শকের ফলে ধ্বস নামে। তখন গরিবদের আয় দ্রুত আরো কমে যায় অথচ ধনীরা টিকে থাকেন বা খুব শীঘ্রই পুষিয়ে নিয়ে আরো উপরে উঠে যান। এর নীট ফলাফল হচ্ছে ঝড়ের মধ্যেই ক্রমাগত সম্পদ ও আয়ের অসমতা ও কেন্দ্রীভবন। বড় নৌকা ঝড়ে ডুবে না –ছোট ডিঙি ডুবে যায়। আমরা চোখের সামনে দেখতে পাই ঝড়ের পর শুধু অর্থনৈতিক ক্ষমতা নয়, রাজনৈতিক ক্ষমতাও কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ছে এবং অবশেষে গণতন্ত্রই বিপন্ন হচ্ছে।

চলবে  . . .

লেখকঃ রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ এবং অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, অর্থনীতি বিভাগ