চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বছর পূর্তির আলোচনা সভা

-সরকারের সদিচ্ছার অভাবের কারণে পার্বত্য চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হচ্ছেনা

আজ ২ ডিসেম্বর ২০২২ ইং রোজ শুক্রবার, বিকাল ৩:০০ ঘটিকায় চট্টগ্রামের জেএম সেন হল প্রাঙ্গনে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বছর উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির রজতজয়ন্তী উদযাপন কমিটি, চট্টগ্রাম এর উদ্যোগে র‍্যালী, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। রজতজয়ন্তী উদযাপন কমিটির  আহ্বায়ক তাপস হোড়ের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত এবং প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আলা উদ্দিন মহোদয়।
আলোচনা সভায় আরো সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি চট্টগ্রামের সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার,  বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান, প্রমা আবৃত্তি সংঘের সভাপতি রাশেদ হাসান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আনন্দ বিকাশ চাকমা, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষ,  ঐক্য ন্যাপ চট্টগ্রামের যুগ্ম সম্পাদক পাহাড়ী ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট প্রদীপ কুমার চৌধুরী, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম সীতাকুণ্ডের সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্র ত্রিপুরা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক রুমেন চাকমা প্রমুখ।
আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের সহ-সভাপতি অনিল বিকাশ চাকমা এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক বিনিময় চাকমা ও পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের সহ-সভাপতি অনিল বিকাশ চাকমা।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে কয়েক দশক আগে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল তা নানা সময়ে শাসকগোষ্ঠীর বাধার সম্মুখীন হয়। এই আন্দোলনকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে অপপ্রচার চালানো হয়। বর্তমানে আমরা এমন বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আছি যেখানে রাজনৈতিকভাবে সাম্প্রদায়িকতা বিদ্যমান। পার্বত্য এলাকা স্থানীয় আওয়ামী লীগ, বিএনপি, সেনাবাহিনী মিলে পাহাড়ের আদিবাসীদের শোষণ করছে।
তিনি আরো বলেন, পার্বত্য জনগণের ত্যাগ-তিতিক্ষা ও কঠোর আন্দোলনের ফলে অর্জিত হয়েছিল পার্বত্য চুক্তি, কারোর দয়ায় নয়। সেই চুক্তির ২৫ বছর পরেও পার্বত্যবাসীর মৌলিক কোন কিছুর পরিবর্তন হয়নি। সেখানে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়নি। তাই আজকের এই চুক্তির দিনকে আমরা উৎসবে পালন করতে পারছিনা। অথচ পার্বত্যবাসীর স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা ও অস্তিত্ব রক্ষার জন্যে এই চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরী।
অধ্যাপক ড. আলা উদ্দিন বলেন, চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ায় পার্বত্যবাসীর মনে অসন্তোষ বিরাজ করছে। চুক্তির ২৫ বছর পরে এসে আশংকা জাগে এই চুক্তি বাস্তবায়ন হবে কিনা। চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে পাহাড়ে নানা উপদলের সৃষ্টি হচ্ছে। চুক্তির বাস্তবায়ন সংখ্যায় নির্ধারণ করার বিষয় নয় বরং পাহাড়ের মানুষ নিরাপদে আছে কিনা, মৌলিক অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকতে পারছে কিনা সেদিকে নজর দিতে হবে। পাহাড়ের উন্নয়ন প্রকল্প যেন এক একটা প্রহসন। পাহাড়ীরা ক্রমশ ভূমি থেকে উচ্ছেদ হচ্ছে, স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হচ্ছে। আদিবাসীদের ভূমি সমস্যার সমাধান সহ মৌলিক ধারাগুলোর বাস্তবায়ন করতে হবে।
এর আগে অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী পর্ব চট্টগ্রামের নন্দনকানন বৌদ্ধ মন্দির চত্বরে অনুষ্ঠিত হয়। এসময় উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক প্রফেসর ড. রনজিত কুমার দে। তিনি বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
এসময় তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বছরে মাত্র ২৫টি ধারা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। পাহাড়ে উন্নয়নের ফলে ভূমি উচ্ছেদ করা হচ্ছে, বন-প্রকৃতি উজাড় হচ্ছে। নির্দিষ্ট টাইম ফ্রেম নির্ধারণ করে চুক্তি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিতে হবে।
উদ্বোধনী পর্ব শেষে একটি র‍্যালী নন্দনকানন থেকে প্রধান প্রধান সড়ক হয়ে প্রেসক্লাব ঘুরে জেএম সেন হলে শেষ হয়। এরপরে জেএম সেন হল প্রাঙ্গণে গণসংগীত ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় গণসংগীত পরিবেশনা করেন রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীবৃন্দ। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রায় হাজারধিক ছাত্র ও জনতার সমাবেশ ঘটে।