চলমান সংবাদ

বলসোনারোকে হারিয়ে ব্রাজিলের নতুন প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা

জইর বলসোনারোকে হারিয়ে ব্রাজিলের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন বামপন্থি নেতা লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর সামান্য ব্যবধানে জয় পান লুলা। বলসোনারোর সরকার গত চার বছরে একের পর এক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। তার কোভিড নীতির কারণে ব্রাজিল ভুগেছেও প্রচুর। এবার এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তার পতন হলো।

বিবিসি জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনে শেষ ধাপের ভোট গণনার পর দেখা গেছে লুলা ৫০.৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। অপরদিকে বলসোনারো পেয়েছেন ৪৯.২ শতাংশ ভোট। এর আগে ২০০৩ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করেন লুলা। সেসময় যদিও তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। পরবর্তীতে দেশ পরিচালনায় রাজনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর শপথ নিয়েছিলেন তিনি।

২০১৯ সালের ১লা জানুয়ারি ব্রাজিলের ৩৮তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন বলসোনারো। কিন্তু তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন তার লাগামহীন কথাবার্তা এবং দেশের স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্তের জন্য।

দেশের মধ্যেতো বটেই, গোটা বিশ্বেই বিভিন্ন সময় সমালোচিত হয়েছেন তিনি। কোভিডের সময় তিনি ব্রাজিলকে রক্ষায় কার্যত বিশেষ কোনো পদক্ষেপ নেননি। এ ছাড়া মহামারির সময় অব্যবস্থাপনার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আমাজন বন উজাড় করার বিষয়ে কথা বলে সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হন তিনি।

কট্টর ডানপন্থি রাজনৈতিক বলসোনারো আগে সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ছিলেন। অপরদিকে লুলা দা সিলভা বামপন্থী রাজনীতিবিদ হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। লাতিন আমেরিকার দেশটিতে গত ২রা অক্টোবর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সে ভোটে লুলা পেয়েছিলেন ৪৮.৩ শতাংশ ভোট। বলসোনারো পান ৪৩.৩ শতাংশ। কিন্তু নিয়ম অনুসারে প্রয়োজনীয় ৫০ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় প্রার্থীদের ভোট গড়ায় দ্বিতীয় দফায়। যেখানে উৎরে যান লুলা।

দ্বিতীয় দফার এ নির্বাচন ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা চলছিল ব্রাজিলে। দুই পক্ষ থেকেই নানা অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ, ভুল তথ্য ছড়ানোর কথাও শোনা যায়। প্রেসিডেন্ট হলেও লুলার দায়িত্ব গ্রহণে সময় লাগবে অন্তত ২ মাস। অর্থাৎ আগামী বছর জানুয়ারিতে ব্রাজিলের মসনদ আরোহণ করবেন তিনি। এ ক্ষেত্রে করোনার পর বিপর্যস্ত অর্থনীতিতে গতি আনা ও নিম্ন আয়ের মানুষের দুর্দশা দূর করার মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে লুলাকে।

প্রেসিডেন্ট পদে লুলার বিজয় নিশ্চিতের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট লুলাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। নির্বাচন অবাধ, মুক্ত ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে বলে মন্তব্য করে বাইডেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়ের ম্যাঁক্রো টুইটারে দুই নেতা দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক নতুন করে ঠিক করবেন উল্লেখ করে লুলাকে অভিনন্দন জানান। অভিনন্দন জানিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও।

লুলার বর্তমান বয়স ৭৭ বছর। একসময় শ্রমিক হিসেবে কাজ করা লুলা লাতিন আমেরিকার প্রভাবশালী বামপন্থী নেতা হয়ে ওঠেন। প্রেসিডেন্ট থাকার সময় লাখ লাখ ব্রাজিলীয়কে দারিদ্রতা থেকে বের করে এনেছিলেন তিনি। এটিই ছিল তার জনপ্রিয়তার মূল ভিত্তি। ২০১৮ সালে তাকে কারাবন্দীও করা হয়েছিল। তবে পরবর্তীতে তার ওপর থেকে অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয়।