চলমান সংবাদ

নৌ কমান্ডো বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মুছা চৌধুরীকে মরণোত্তর রাষ্ট্রীয় সম্মাননায় ভূষিত করার দাবি

৭১’র মুক্তিযুদ্ধে মাত্র ১৬ বছর বয়সে বুকে-পেটে মাইন বেঁধে কর্ণফুলী নদীতে দুঃসাহসিক অভিযান চালিয়ে বিদেশি জাহাজ ধ্বংস করে দেয়া নৌ কমান্ডো বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মুছা চৌধুরীর নাগরিক শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে অনুষ্ঠিত এই শোকসভায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক নৌকমান্ডো আবু মুছা চৌধুরীর বীরত্বের কথা স্মরণ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে জীবনের মায়া তুচ্ছ করে তিনি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে উনার অবদানকে সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করছি। তিনি অপারেশন জ্যাকপট, অপারেশন আউটার অ্যাংকর, অপারেশন অ্যাভলুজ ছাড়াও বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, নারায়ণগঞ্জের নিকটে জাতিসংঘের পণ্যবাহী জাহাজ ডুবিয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।’

মন্ত্রী বলেন, ‘গোপনে নৌকমান্ডোদের প্রশিক্ষণ হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ১৫ অগাস্টে উনারা একযোগে ১১টি জাহাজ উড়িয়ে দেন। এই প্রথম পাকিস্তান বিশ্বের কাছে স্বীকার করতে বাধ্য হয় মুক্তিযুদ্ধ চলছে। এর আগে পর্যন্ত পাকিস্তান মিথ্যাচার করছিল। নৌকমান্ডোদের অভিযানের পর আর বিশ্বের কাছে মিথ্যাচার করতে পারেনি। আবু মুছা চৌধুরীর মৃত্যুতে দেশ ও জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মুছা চৌধুরীকে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য মরণোত্তর রাষ্ট্রীয় সম্মাননায় ভূষিত করার উচিত বলে মনে করেন মন্ত্রী।

সভাপতির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য একুশে পদকপ্রাপ্ত সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন বলেন, ‘জীবন-মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে জীবন উৎসর্গ করতে ছুটে গিয়েছিলেন আবু মুছা চৌধুরী। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে যে গণহত্যা তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আজো মিলেনি। বাঙালিকে প্রথম স্বাধীনতা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। আর দেশকে আজ এক সমৃদ্ধির স্থানে পৌঁছে দিয়েছেন তার কন্যা।’

শোকসভায় প্রয়াত আবু মুছা চৌধুরীর স্ত্রী মরিয়ম আক্তার এই সাহসী মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতি সংরক্ষণের অনুরোধ করেন। এছাড়া শোকসভা থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মুছা চৌধুরীকে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য মরণোত্তর রাষ্ট্রীয় সম্মাননায় ভূষিত করার দাবি জানানো হয়। সুলতানা কাজীর সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন নৌকমান্ডো অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব অনিল বরণ রায়, নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফাহিম উদ্দিন আহমেদ, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবু মোহাম্মদ হাশেম, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রথম কণ্ঠস্বর রাখাল চন্দ্র বণিক, নৌকমান্ডো বদিউল আলম শাহ, ও আনোয়ার মিয়া এবং শোকসভা কমিটির সদস্য সচিব ও বিএফইউজে’র যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী। সভায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মুছা চৌধুরীর স্মরণে স্মারক গ্রন্থের পাঠ উন্মোচন করা হয়।

প্রসঙ্গত গত ৭ জুলাই রাতে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার হাইদচকিয়া গ্রামে নিজ বাড়িতে আবু মুসা চৌধুরী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে নদীপথে দুঃসাহসিক সেই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘অপারেশন অ্যাভলুজ’ আর সেই অভিযানের নেত্বত্ব দিয়েছিলেন কিশোর আবু মুসা চৌধুরী। একাত্তরে দশম শ্রেণীর ছাত্র থাকাবস্থায় নৌ কমান্ডো আবু মুসা চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধে অপারেশন জ্যাকপট ও অপারেশন আউটার অ্যাঙ্করসহ ছয়টি সফল নৌ অভিযানে অংশ নেন। অ্যাভলুজ তার তৃতীয় অপারেশন। ১৯৭১ সালের ২ অক্টোবর আবু মুসার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম বন্দরে গ্রিসের পতাকাবাহী তেলভর্তি জাহাজ এমটি অ্যাভলুজ ধ্বংসের পর বিশ্বব্যাপী মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাঁথা ছড়িয়ে পড়ে।

তার প্রথম অপারেশন আগস্টের অপারেশন জ্যাকপট, দ্বিতীয় অপারেশন আউটার অ্যাঙ্কর। অ্যাভলুজের পর বুড়িগঙ্গা-ধলেশ্বরী মোহনায় এমভি তুরাগ ধ্বংস, নারায়ণগঞ্জে বিশ্ব গোডাউনের সামনে জাতিসংঘের রসদবাহী জাহাজ মিনি লেডি ও মিনি লায়ন ধ্বংস এবং কাঁচপুর ফেরি ও পন্টুন উড়িয়ে দেওয়ার অভিযানে ছিলেন এই অন্যতম বীর। এসব নৌ অপারেশন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। অ্যাভলুজ ধ্বংসের সময় তার মাথায় সৃষ্ট ক্ষত যুদ্ধের দুই দশক পর কঠিন ব্যাধিতে রূপ নেয়। আমৃত্যু যুদ্ধের সেই ক্ষত তিনি বয়ে বেড়িয়েছেন। তবে মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেও তিনি কোনো রাষ্ট্রীয় খেতাব পোননি।

# ১২.১০.২০২২ চট্টগ্রাম #