বিজ্ঞান প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ভাবনা (৬৪): যুদ্ধ তুমি কার?

– বিজন সাহা

বিজন সাহা (ফাইল ছবি)

যুদ্ধ চলছে তার নিজের গতিতে। অনেক সময় মনে হয় সে যেন সবার নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেছে। আসলেই কি তাই? প্রথমেই বলে নিই এই যুদ্ধ আসলে রাশিয়ার সাথে ইউক্রেনের নয়, এটা আমেরিকার সাথে রাশিয়ার যুদ্ধ যেখানে ইউক্রেন একান্তই যুদ্ধক্ষেত্র আর এই যুদ্ধের প্রধান বলি ইউরোপ। আমাদের পণ্ডিত স্যার বলতেন, তোর শিল তোর নোড়া তোরই ভাঙি দাঁতের গোঁড়া। হ্যাঁ, ইউরোপ আর ইউক্রেনের পয়সায় আমেরিকা ইউক্রেন নামক দেশ আর ইউরোপের অর্থনীতি ধ্বংস করছে আর সেটা করে এক দিকে যেমন স্লাভিয়ান জনসমষ্টি ক্ষয় করছে, অন্যদিকে বিশ্বের অর্থনৈতিক মঞ্চ থেকে ইউরো জোন নামে তার এক অতি শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে দেউলিয়া করছে। আজ যারা রাশিয়াকে আক্রমণকারী বলে বয়ান দিচ্ছে তাদের বলব গত ৩২ বছরের ইতিহাস নতুন করে পড়ে দেখতে। ২০১৪ সালে কিয়েভে ক্যুর আগে পর্যন্ত রাশিয়া কখনই ইউক্রেনের জন্য হুমকি ছিল না, অন্তত ইউক্রেন সীমান্তের জন্য। যখনই ইউক্রেন ন্যাটোয় যোগ দেবার ইচ্ছে প্রকাশ করল, শুরু হল সমস্যা। এরপর এলো ব্ল্যাক সীর সেভাস্তোপোলে নৌ ঘাঁটির লিজ স্থগিত করার কথা। তখন থেকেই শুরু হয় সম্পর্কের অবনতি। শুধু ক্রিমিয়া নয়, দক্ষিণ পূর্ব ইউক্রেনের ৭০% থেকে ৯০% মানুষ রুশপন্থী যা ১৯৯১ সাল থেকে আয়োজিত প্রতিটি নির্বাচনেই প্রমানিত হয়েছে। ফলে যখন কিয়েভে ২০১৪ সালে পশ্চিমা বিশ্বের মদদে অবৈধভাবে ক্ষমতার পরিবর্তন হয় আর তার প্রতিবাদে ক্রিমিয়া আর দনবাস বিদ্রোহ করে তখন রাশিয়া বিনা রক্তক্ষয়ে ক্রিমিয়া দখল করে নেয়। এটা ছিল পশ্চিমা বিশ্বের জন্য অবিশ্বাস্য, কেননা তারা নিজেরা চেয়েছিল সেভাস্তোপোলে  ন্যাটোর সামরিক ঘাঁটি তৈরি করে রাশিয়াকে ব্ল্যাক সী থেকে বিদায় করতে। এরপর শুরু হয় দনবাসের ৮ বছর ব্যাপী যুদ্ধ। ইউক্রেন বাহিনী যখন পরাজয়ের মুখে রাশিয়ার মধ্যস্থতায় তখন মিনস্ক চুক্তি হয়। তাতে এসব এলাকায় স্বায়ত্ত শাসন কায়েম, মাতৃভাষা মানে রুশ ভাষার অবাধ ব্যবহার সহ বিভিন্ন প্রশ্নে দু’ পক্ষ এক সমঝোতায় পৌঁছে। কিন্তু ইউক্রেন কখনই সেই চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য কোন পদক্ষেপ নেয়নি। বরং বারবার বলেছে এই চুক্তি আসলে নিজেদের শক্তি সংগ্রহের জন্য সময় নেয়া। শুধু তাই নয়, দিনের পর দিন আক্রমণ চলে দনবাসের সাধারণ মানুষের উপর। শেষ পর্যন্ত রাশিয়া বাধ্য হয় দানিয়েৎস্ক ও লুগানস্ককে স্বীকৃতি দিতে। এখানেও নিশ্চয়ই রাজনীতি ছিল। কিন্তু অনেক সময় রাজনীতি আসে বাধ্য হয়ে। আমাদের দেশে অনেকেই শুধুমাত্র মুসলিম বলে রোহিঙ্গাদের সমর্থন করে এবং চায় সরকার তাদের জন্য আরও বেশি কিছু করুক। এখানে দনবাসের মানুষ শুধুমাত্র ধর্ম নয় সব অর্থেই রুশ। ফলে এ নিয়ে সরকারের উপর চাপ ছিল – রাজনৈতিক, সামাজিক, সাইকোলজিক্যাল, এবং প্রতিরক্ষামূলক। রাশিয়া যদি ইউক্রেন দখল করার নীতিতে বিশ্বাস করত তাহলে সেটা তারা আগেই করতে পারত, বা অন্তত এসব এলাকাকে আগেই স্বীকৃতি দিতে পারত। করেনি। কারণ শেষ পর্যন্ত বিশ্বাস করেছে যে দনবাস ইউক্রেনের মধ্যে থেকেই তাদের সমস্যা সামাধান করতে পারবে। ইউক্রেন কেন চায়নি? হয়ত ভেবেছে, তাহলে অন্যরাও স্বায়ত্তশাসন চাইবে। আর একবার ফেডেরেটিভ ব্যবস্থা চালু হলে তাদের আর ন্যাটোতে যোগ দেওয়া হবে না। হয়তো ভেবেছে তাহলে দক্ষিণ পূর্ব ইউক্রেনে রুশপন্থীরা আরও শক্তিশালী হবে। যে কারণেই হোক, কিয়েভ নিজেই নিজের পায়ে কুড়াল মেরেছে, তার আঞ্চলিক অখণ্ডতা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হবার পরে মার্চে ইস্তানবুল চুক্তি হয়। তখনও  সময় ছিল দনবাস বাদে বাকি অংশে নিজের কর্তৃত্ব বজায় রাখার। কিন্তু পশ্চিমা মনিবদের আদেশে কিয়েভ সেই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসে। শুধু তাই নয় বুচায় রুশপন্থীদের মেরে সেই দায় রাশিয়ার উপর চাপিয়ে দিতে তৎপর হয়। এটা রাশিয়াকে পরবর্তী কোন চুক্তি করা থেকে সাবধান করে দেয়। কিন্তু তখনও পর্যন্ত রাশিয়া দনবাসের বাইরে নিজের কর্তৃত্ব প্রকাশের কথা ভাবেনি। বুচার ঘটনা থেকে তারা বোঝে রুশপন্থী ইউক্রেনের জনগণের রক্ষার দায়িত্ব তাদেরই নিতে হবে। ফলে হেরসন ও  জাপারোঝিয়ার লোকজন যখন তাদের কাছে যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে নিরাপত্তার গ্যারান্টি চায় তারা সেটা দিতে রাজী হয়।

এ প্রসঙ্গে একটু আমাদের দেশের দিকে ফিরে যাই। পূর্ব পাকিস্তানে স্বাধীনতার আগে পর্যন্ত পাকিস্তানি শাসকদের আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য ছিল সংখ্যালঘু হিন্দুরা যদিও এখন যে অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়েছে সেটা বলা যাবে না। তাদের এটা করার এক ধরণের ম্যান্ডেট ছিল। কারণ পূর্ব বাংলার মুসলিম জনগোষ্ঠীই এক সময় ভোট দিয়ে পাকিস্তান তৈরি করে আর দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে গঠিত এই দেশে হিন্দুরা স্বাভাবিক ভাবেই হয়ে পড়ে অপাংক্তেয়, তারা হয় নিজ দেশে পরবাসী। এমনকি ভাষা আন্দোলনের পরেও হিন্দু বিতাড়ন চলতেই থাকে। সেটা যারা দ্বিজাতিতত্ত্বে বিশ্বাসী তাদের জন্য সুখবর হলেও বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী মানুষের কাছে দুঃসংবাদ। কেননা এতে করে দেশে শুধু হিন্দুই কমেনি, বাঙালিও কমেছে। আর তখন পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে দর কষাকষির অন্যতম প্রধান যুক্তি ছিল আমাদের মানে বাঙ্গালিদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা। সেটাই প্রমাণ করে যে পাকিস্তানের কাছে বাঙালির বা বাংলা অঞ্চলের মানুষের চেয়েও অনেক বেশি দামী ছিল এখানকার মাটি, যে মাটি সোনা ফলায় আর যে সোনা পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষের জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য আনে। ঠিক একই ঘটনা ঘটে ইউক্রেনের রুশপন্থী মানুষের ক্ষেত্রেও। রুশপন্থী মানে এই নয় যে তারা রুশ দেশের সাথে যোগ দিতে চায়। এরা চেয়েছে এমন এক ইউক্রেন যে রাশিয়ার সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখবে। কেননা এদের আছে হাজার বছরের কমন ইতিহাস, কমন সুখ দুঃখ। সবচেয়ে অবাক ব্যাপার হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে সফল যে দেশ – সেই আমেরিকাকে বলা হয় ইমিগ্রান্টদের দেশ। সেখানে বিভিন্ন দেশের, বিভিন্ন জাতির, বিভিন্ন ধর্মের, বিভিন্ন বর্ণের মানুষ একত্রিত হয়ে একটা সমাজ গড়ছে এবং এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন ভুল ত্রুটির পরেও সে নিজেকে একটা সফল ব্যবস্থা হিসেবে প্রমাণ করতে পেরেছে। অথচ এই আমেরিকাই অন্য দেশগুলোতে বিভিন্ন ভাবে বিভাজন তৈরি করে, এমনকি যে সব দেশে যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন জাতি ও ধর্মের মানুষ বোঝাপড়ার মধ্যে বসবাস করছে তাদেরকেও পরপস্পরের শত্রুতে পরিণত করে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য আর এটা করে নিজেদের গণতন্ত্র ও মানবতার রক্ষাকর্তা হিসেবে ঘোষণা দিয়ে। ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ড স্বীকার করেছেন যে আমেরিকা ইউক্রেনে ২০১৪ সালের আগে ৬ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে সেখানে অ্যান্টিরুশ মনোভাব জোরদার করতে। কিন্তু সমস্যা হল, অ্যান্টিরুশ মতবাদ শুধু রাশিয়া বিরোধী করে না, যা কিছু রুশ তারও বিরোধী করে। আর যে দেশের সিংহভাগ মানুষ রুশ ভাষায় কথা বলে, নিজেদের রুশ সংস্কৃতির অংশ মনে করে সেখানে এ ধরণের মতবাদ যে আজ হোক কাল হোক গৃহযুদ্ধ ডেকে আনবে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। সেদিক থেকে দেখলে আমেরিকা কখনই ইউক্রেনের মানুষের গণতান্ত্রিক বা নাগরিক অধিকারের কথা ভেবে এসব করেনি, বরং এ দেশকে দুর্বল করার জন্য, এ দেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভিত্তি ধ্বংস করার জন্য সুপরিকল্পিত ভাবে অগ্রসর হয়েছে। কারণ? কারণ একটাই – ইউক্রেন ছিল তাদের জন্য শুধুই দাবার ঘুঁটি, রাশিয়া ও ইউরোপকে দুর্বল করার অস্ত্র।

যদি ইতিহাসের দিকে তাকাই দেখব গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে জার্মানি আর সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন গ্যাস লাইন তৈরির চুক্তি করে তখন থেকেই আমেরিকা এর বিরোধিতা করে আসছে। আর একই কারণে নর্থ স্ট্রীম ২ তৈরি হবার পরেও সেটা চালু করতে দেওয়া হয়নি। তার চেয়েও মজার ব্যাপার এই যে ইউক্রেন আর পোল্যান্ড বিশেষ ভাবে এর বিরোধিতা করেছে, যদিও এই বিরোধিতার কারণ ছিল ভিন্ন। আমেরিকা শুধু নর্থ স্ট্রীম নয় রাশিয়া থেকে সকল ধরণের গ্যাস লাইনের বিরোধিতা করেছে, তা সে উত্তর দিক থেকেই হোক আর দক্ষিণ দিক থেকেই হোক। কারণ আমেরিকা চায় ইউরোপের বাজার দখল করতে। ইউক্রেন চায় গ্যাস অন্য পথে না গিয়ে তার উপর দিয়ে যাক – তাতে সে ট্র্যানজিট থেকে ইনকাম করবে আর সময়ে অসময়ে রাশিয়া ও ইউরোপকে সাবোটেজ করবে। কিন্তু সে ভুলে গেছে রাশিয়া থেকে গ্যাস রপ্তানি বন্ধ হলে সে নিজেও ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সমস্যা হল আমরা অন্যের ক্ষতি করতে গিয়ে প্রায়ই এতটাই দিগবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ি যে নিজের ভালোমন্দ পর্যন্ত বুঝতে পারি না। অন্যদিকে পোল্যান্ড সেটা করে নিজের স্বার্থ থেকে। যদি রাশিয়া থেকে গ্যাস প্রবাহ বন্ধ হয় তাহলে আমেরিকান গ্যাস আসবে তার টার্মিনালে, ফলে জার্মানি নয় পোল্যান্ড হবে ইউরোপের গ্যাসের হাব – আর এটা শুধু ইকনমি নয়, রাজনৈতিক ক্ষমতা। তাছাড়া রাশিয়ার তেল, গ্যাস মানে জার্মানিতে উৎপাদিত পণ্যের স্বল্প মূল্য। আমেরিকার গ্যাসে আর যাই হোক জার্মানির ইন্ডাস্ট্রি চলবে না। ফলে ইউরোপ বিশেষ করে জার্মানি থেকে সব শিল্প আমেরিকায় যাচ্ছে, যাবে। ইউরোর দাম ইতিমধ্যে ডলারের চেয়ে কম। কি দেখছি তাহলে? আমেরিকা তার অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইউরোপকে বশে এনেছে। একই সাথে দুর্বল করছে প্রধান সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়াকে। এছাড়া চীন বানিজ্য ক্ষেত্রে ইউরোপের অন্যতম প্রধান পার্টনার। কিছুদিন আগেও কাজাখস্তান ও রাশিয়ার মধ্যে দিয়ে ইউরোপের সাথে চীনের স্থলপথে যোগাযোগের সম্ভাবনা গড়ে উঠছিল। আর সেটা হলে আমেরিকা সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না যেটা সে করত প্রশান্ত মহাসাগরে। এখন কোথায় সেই প্ল্যান। তার মানে এক ঢিলে তিন পাখি আহত। যখন ইউরোপে, বিশেষ করে জার্মানিতে নর্থ স্ট্রীম ২ চালু করার জন্য জনমত তৈরি হচ্ছে, তখন সেটা উড়িয়ে দেয়া হয়েছে। চেষ্টা চলছে সেই দোষ রাশিয়ার ঘাড়ে চাপাতে। রাশিয়া নিজেই নিজের পায়ে কুড়ুল মেরেছে। তবে একটু যুক্তি দিয়ে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করলে আমেরিকা আর ইংল্যান্ড যে এই আক্রমণের পেছনে সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না। ঘটনার পর পর পোল্যান্ডের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আমেরিকাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ট্যুইট, মার্কিন স্টেট সেক্রেটারির এই বিস্ফোরণের ফলে আমেরিকার জন্য বানিজ্যের দ্বার খুলে যাওয়া নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ সেই ইঙ্গিতই দেয়। পশ্চিমা বিশ্বের অনেকেই এখন সেটাই বলছেন। জেফ্রি স্যাক্সসের মত অর্থনীতিবিদ সেটা বলছেন। রাশিয়ানরা বলে যদি নিজের সেনাবাহিনীকে খাওয়াতে না চাও তাহলে অন্যের সেনাবাহিনীর ভরণপোষণ করতে হবে। ইউরোপ নিজের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেরা নেয়নি বলে আজ আমেরিকান বাহিনীর হাতে জিম্মি। তাই আজ তাদের তেল গ্যাস কোনটাই নিরাপদ নয়। মজার ব্যাপার হল ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এনার্জির জন্য রাশিয়ার উপর অতিরিক্ত নির্ভরতার কথা বলে। কিন্তু রাশিয়া কখনই তাদের অন্য দেশ থেকে তেল গ্যাস বা অন্য কিছু কিনতে বাধার সৃষ্টি করে না, করেনি। এরা তুলনামূলক কম দামে পণ্য সরবরাহ করে বলেই এদের কাছ থেকে ওরা কেনে। শুধুই বিজনেস। কিন্তু এখন কি দাঁড়াচ্ছে? পশ্চিমা বিশ্ব নিজেদের জন্য কোন অল্টারনেটিভ রাখছে না। আর যখনই কারো মনপলি তৈরি হয় তখন সব ভ্রাতৃত্ববোধ, সব মানবতা, সব গণতন্ত্র জানালা দিয়ে পালিয়ে যায়। টেকনোলজি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ, তবে সেটা এখনও পর্যন্ত প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভরশীল। আর এটার নিয়ন্ত্রণ করে রাশিয়া, এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। ওপেক এখন আর আঙ্কেল স্যামের কথায় ওঠবস করে না, নিজেদের স্বার্থে কাজ করে। আর এটাই আমেরিকা আর পশ্চিমা বিশ্বের গাত্রদাহের কারণ। অনেকটা পাড়ার মাস্তানের মত। সে জানে একজন যুক্তিবাদী ও স্বাধীনচেতা মানুষ তার ক্ষতি করতে পারবে না, তবুও চায় সেই লোককে পদানত করতে, সেই লোককে দিয়ে তাকে কুর্নিশ করাতে। কারণ একবার কেউ কুর্নিশ করা বাদ দিলে আরও দশ জন তার সামিল হতে পারে। প্রতিবাদ বড়ই সংক্রামক। আর এ কারণেই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়াটা আমেরিকার জন্য অত্যন্ত জরুরি। সারা বিশ্ব রসাতলে গেলেও তার ব্যবসা ঠিকই ফুলে ফেঁপে উঠছে। তবে রাশিয়া ইউক্রেনের চারটি এলাকা গনভোটের ভিত্তিতে নিজেদের বলে ঘোষণা দেওয়ায় ঘটনা অন্য দিকে মোড় নিচ্ছে। অনেকে এমনকি পারমাণবিক যুদ্ধের আশংকা করছে। রাশিয়াতে শুরু হয়েছে মবিলাইজেশন। সেটা বোঝার জন্যই দরকার এই যুদ্ধটা কেন এবং কার স্বার্থে। এ জন্যেই আজকের এই আলোচনা। মবিলাইজেশন নিয়ে পরে কখনও বলব।

 

গবেষক, জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ
শিক্ষক, রাশিয়ান পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি, মস্কো