চলমান সংবাদ

চোখের জলে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানিয়েছেন ভক্তরা চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে উপচে পড়া ভিড়

সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও চোখের জলে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানিয়েছেন ভক্তারা। বিজয়া দশমীর আনুষ্ঠানিকতা শেষে সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে প্রতিবছরের মতো এবারও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়।

বুধবার (৫ অক্টোবর) দুপুরের পর থেকেই পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে মহানগরীর প্রায় দেড় শতাধিক মন্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়। এর আগে সকাল থেকে নগরের মন্ডপে মন্ডপে বাজে বিদায়ী সুর। ষোড়শ উপাচারে দশমীর বিহিত পূজা, দর্পন বিসর্জন, শাস্ত্রীয় আচার, দেবীর চরণে অঞ্জলি নিবেদন, দেশ-জাতি, ব্যক্তিগত ও পরিবারের সুখ-শান্তি, মঙ্গল কামনায় ব্যস্ত ছিলেন পূজার্থীরা। তেল-সিঁদুর পরিয়ে, মুখে মিষ্টি আর পান খাইয়ে মা দুর্গাকে বিদায় জানাতে সৈকত লাখো পুণ্যার্থীর পদভারে মুখরিত।

নানা ধর্মের, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান হাজারো মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। সকাল ১১টা থেকে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন পূজা মন্ডপ থেকে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য ট্রাকবাহী প্রতিমা নিয়ে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে পূজারী ও ভক্তরা জড়ো হতে শুরু করেন পতেঙ্গা সৈকতে। এরপর শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জনের পালা। সুষ্ঠু ও শান্তি-শৃঙ্খলার মধ্যে পূজারীরা যাতে প্রতিমা নিরঞ্জন করতে পারেন সে লক্ষ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে আলোকবাতি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সাজসজ্জা, মঞ্চ নির্মাণ, মাইকিং, পানীয় জলের ব্যবস্থাসহ সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

বিজয়া দশমী বুধবার প্রশাসনের নির্দেশ মোতাবেক দুপুরের পর প্রতিমা নিরঞ্জণ করতে বিভিন্ন পূজামন্ডপ থেকে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের প্রতিমা নিরঞ্জন দেবার জন্য গাড়িতে করে পতেঙ্গা সৈকতে প্রতিমা নিয়ে যান। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ছাড়াও নগরের কাট্টলী সৈকত, নেভাল-২, কালুরঘাট, সদরঘাট বাঁশঘাটা, ফিরিঙ্গিবাজারের অভয়মিত্র ঘাটে, কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীতে এবং পারকি সমুদ্র সৈকতসহ বড়পুকুর, দীঘি, খাল ও নদীতে মা দেবী দুর্গার প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়। প্রতিমা নিরঞ্জন উপলেক্ষ পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে শারদীয় দুর্গোৎসব সম্পন্ন করায় সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মেয়র বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। শারদীয় দুর্গোৎসব ধর্মীয় গন্ডি পেরিয়ে সর্বজনীনতায় রূপ পেয়েছে। এই উৎসব সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মাধ্যমে বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যেকে তুলে ধরে। তৈরি হয় সামাজিক মেলবন্ধন। এই মেলবন্ধন দলমত নির্বিশেষে সকলকে অক্ষণ্ন রাখতে হবে।

এদিকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় হাজার হাজার ভক্ত ও পূজারীর উপস্থিতিতে কোথাও যেন তিল মাত্র ঠাঁই ছিল না। সুন্দর পরিবেশে সুশৃংখলভাবে প্রতিমা বিসর্জন করতে পেরে পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ এবং হাজার হাজার পূজার্থী সন্তোষ প্রকাশ করেন। এ উপলক্ষে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের যৌথ উদ্যোগে নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

গতকাল বুধবার সকালে মায়ের পায়ে বিজয়া দশমীর পুষ্পাঞ্জলি দিতে মন্ডপে মন্ডপে শিশু, কিশোর, তরুণ, যুবা নির্বিশেষে সবাই ছুটে আসে। মূলত দশমী পূজা ও পুষ্পাঞ্জলি প্রদানের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের ইতি টানেন ভক্তরা। এরপর ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয় মন্ডপ থেকে। এর আগে গত ৩ দিন নগরীসহ জেলার বিভিন্ন পূজামন্ডপে ছিল দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়।

এদিকে প্রতিমা বিসর্জন নির্বিঘ্ন করতে বিভিন্ন প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে প্রশাসন। পতেঙ্গা থানার ওসি মো. মাহফুজুর রহমান জানান, প্রতিমা নিরঞ্জন নির্বিঘ্ন ও শান্তিপূর্ণভাবে করতে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পতেঙ্গা সৈকতে একটি অস্থায়ী পুলিশ কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়। তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়। র‌্যাবের টহল, নিয়মিত পুলিশ, নারী পুলিশ সদস্য, টুরিস্ট পুলিশসহ সাদা পোশাকে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এছাড়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের টিমসহ ডুবুরিরাও ছিল।

চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি আশীষ কুমার ভট্টাচার্য বলেন, এবছর চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রধান পূজামণ্ডপ জেএম সেন হলসহ ১৬টি থানায় ব্যক্তিগত, ঘটপূজাসহ ২৮২টি মণ্ডপে পূজা উদযাপন হয়। পরিষদের পক্ষ থেকে সবাইকে বুধবার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নেয়া হয়। তিনি বলেন, ধর্মীয় রীতি মেনে নগরের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, নেভাল-২, কাট্টলী সৈকত, অভয়মিত্র ঘাট এবং কালুরঘাট সেতু এলাকায় কর্ণফুলী নদীতে, বিভিন্ন নদী-পুকুর-দীঘিতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছর করোনার কারণে পূজার্থীরা প্রতিমা বিসর্জনে স্বতঃস্ফূত অংশগ্রহণ করতে পারে নি। এ বছর কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় সকলে নির্বিঘ্নে বিসর্জন দিতে পেরেছে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিমা নিরঞ্জন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের সার্বিক ব্যবস্থায় এবং সিএমপি’র জোরদার নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে কোন ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি।

# ০৫.১০.২০২২ চট্টগ্রাম #