বিজ্ঞান প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ভাবনা (৬২): মিখাইল গর্বাচভ

-বিজন সাহা

বিজন সাহা (ফাইল ছবি)

গত পর্বে আমরা শেষ করেছিলাম এই বলে যে কেন গর্বাচভ তাঁর চলার পথের শুরুতে পেরেস্ত্রোইকা, গ্লাসনস্ত, নভোয়ে মিশলেনিয়ে বা নতুন ভাবনা এসব বহুল আলোচিত ও পরবর্তীতে জনপ্রিয় ধারণার জন্ম দিলেও কিছুদিনের মধ্যেই নিজের দেশের জনগণের কাছে অবোধ্য হয়ে ওঠেন। কেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলার পরেও তিনি মানুষের মাঝে কোন মেসেজ পৌঁছে দিতে ব্যর্থ হন? এটা কি শুধু জনগণের বোঝার ভুল নাকি তাঁর নিজের ভাবনা ও সেই ভাবনা বাস্তবায়ন করার রোড ম্যাপ মানুষের কাছে প্রাঞ্জল ও বোধগম্য ভাষায় পৌঁছে দেবার অপারগতা?

আসলে যখন রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকে তখন নেতাদের মানুষের মন জয় করতে হয়। এখানে এক পার্টি সিস্টেম থাকায় রাজনৈতিক নেতৃত্ব নয়, গড়ে উঠেছিল পার্টির আমলাতন্ত্র বা নমেনক্লাতুরা। তার মানে জনগণের কাছে নয়, তাদের সমস্ত কিছুর জন্য জবাবদিহি করতে হত উপরের কর্মকর্তার কাছে। আর এ জন্যেই সাংগঠনিক দক্ষতার চেয়েও বসদের মনোরঞ্জন করার দক্ষতা ছিল পদন্নোতির প্রধান উপায়। বাংলায় যাকে বলে তেল মারা। বসদের তেল মেরে উপরে ওঠা যায়, তবে নিজে সবার উপরে উঠে গেলে তখন সাহায্য করার কেউ থাকে না।  এই সময় দরকার সাংগঠনিক দক্ষতা, দরকার অন্যদের দিয়ে কাজ আদায় করিয়ে নেবার মত মনের দৃঢ়তা।  এখানেই গর্বাচভ ফেল করেছেন। সেই সময় তাঁর হাতে ছিল নিরঙ্কুশ ক্ষমতা। পলিটব্যুরো থেকে ব্রেঝনেভের আমলের সবাইকে বিদায় দিয়েছেন, এমনকি যে গ্রোমিকো তাঁকে ক্ষমতায় আসতে সাহায্য করেছেন তাঁকেও অবসরে পাঠিয়েছেন। এই ক্ষমতা নাকি অন্য কিছু – তাঁকে অন্ধ করে। তিনি পরীক্ষিত সৈনিকদের ত্যাগ করে নিজের অনুগত পলিটব্যুরো গঠনে মত্ত হন।

অনেকের মতে গর্বাচভের অন্যতম প্রধান ভুল ছিল শুখোই জাকন বা অ্যান্টি অ্যালকোহল মুভমেন্ট। এর আগে আমেরিকা এই মুভমেন্ট করে ব্যর্থ হয়। তাঁর মেন্টর ইউরি আন্দ্রোপভ সেটা করার চেষ্টা করেছিলেন, কিছুটা সফল হয়েছিলেন, তবে তিনি মূলত সেটা করেছেন শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর নির্ভর করে। গর্বাচভ শুরু করেন যাকে বলে মূল উৎপাটন করে। ফলে আঙ্গুরের ইউনিক সব প্ল্যান্টেশন ধ্বংস করা হয় যা কিনা এ দেশের অর্থনীতিতে বিরাট প্রভাব ফেলে। বাজেট হারায় ৬০ বিলিয়ন সোভিয়েত রুবল যা দেশের অর্থনীতি ধ্বংসে বিরাট ভূমিকা রাখে। অন্যান্য জিনিসের সাথে সাথে মদও কালো বাজারে চলে যায়, বাড়ে নারকটিক্সের ব্যবহার। লোকজন ঘরে ঘরে সামাগন বা চোলাই মদ তৈরি করতে শুরু করে। দেখা দেয় চিনির অভাব। আর অভাব এমন একটা জিনিস যা সব সময় সাথী খোঁজে। ফলে এই অভিযান কতটুকু সফল আর কতটুকু ব্যর্থ সেটাই প্রশ্ন সাপেক্ষ।

গণতন্ত্রের চর্চা করতে গিয়ে কলকারখানা এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডাইরেক্টর, রেক্টর এদের নির্বাচন করা হয়। আমার মনে আছে ছাত্রদের সোভিয়েতের মেম্বার হিসেবে আমি নিজেও গণ মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর নির্বাচনে ভোট দেই। এখন বুঝি কত হাস্যকর ছিল এসব ঘটনা। কেননা ডাইরেক্টর, রেক্টর এরা প্রাশাসনিক কাজকর্ম করেন, তাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্মীরা যাতে কাজ করতে পারে, সময় মত বেতন পায়, উৎপাদিত পণ্য সময় মত বিক্রি হয় এসব দেখা। তাই এসব ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তার চেয়ে প্রাশাসনিক যোগ্যতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে উৎপাদন ব্যবস্থায় আরও অরাজকতা দেখা দেয়। ভেঙ্গে পড়ে দেশের অর্থনীতি। দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক পরিবেশ উন্নত করার জন্য তাঁর গৃহীত প্রায় প্রতিটি পদক্ষেপ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

বিয়ের আগে পাত্র পাত্রীর গুনটাই শুধু জানা যায়, দোষ প্রকাশ পায় বিয়ের পরে। রাজনীতির ক্ষেত্রেও তাই। বিগত বছরগুলোতে গর্বাচভের ছাত্র জীবন ও স্তাভ্রপোলে কর্ম জীবন নিয়ে বিভিন্ন তথ্য বেরিয়েছে। ফিওদর কুলাকভ, যিনি ছিলেন গর্বাচভের রাজনৈতিক মেন্টর, একজন সফল পার্টি কর্মী হিসেবে সকলের প্রশংসা কুড়ান, অনেকের মতে ব্রেঝনেভ পরবর্তী সোভিয়েত নেতা হতে পারতেন। কিন্তু কি এক অজ্ঞাত কারণে মাত্র ৬০ বছর বয়সে তিনি মারা যান। এখানে অনেকেই ষড়যন্ত্রের গন্ধ পায়। আসলে সে সময় অনেকেই, বিশেষ করে যারা অপেক্ষাকৃত তরুণ ও উদ্যোগী ছিলেন, অকালে মারা যান অজ্ঞাত কারণে। আর এ কারণেই পার্টি শ্রমিক শ্রেণীর ভ্যানগার্ড থেকে পরিণত হয় কাগুজে বাঘে। গর্বাচভ নিজেও ছিলেন এই ব্যবস্থার ফসল। তিনি নিজেও আন্দ্রোপভ, চেরনেঙ্কো এদের সাথে সুসম্পর্কের জোরেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আসেন। হয়তো এ কারণেই সমস্যার সমাধানে তিনি যতটা না মানসিক দৃঢ়তার উপর  নির্ভর করতেন তারচেয়ে বেশি নির্ভর করতেন অনুরোধ উপরোধ, ঊর্ধ্বতন নেতাদের সাথে সমঝোতা আর ছাড় দেবার মধ্য দিয়ে। অন্তত পশ্চিমা বিশ্বের সাথে শান্তি স্থাপন করতে গিয়ে তিনি বার বার সোভিয়েত ইউনিয়নের স্বার্থকেই ছাড় দিয়েছেন। পরে জর্জ বুশ, হেলমুট কোহল ও অন্যান্য নেতারা নিজেরাই বলেছেন যে তাঁরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছাড় দিতে রাজি ছিলেন, কিন্তু গর্বাচভ তাদের অবাক করে দিয়ে এমন সব ব্যাপারে ছাড় দিয়েছেন যা তাঁরা কল্পনাও করতে পারেনি। এর ফলে গেন স্টাব ও সেনাবাহিনীর উচ্চপর্যায়ের লোকদের সাথে তাঁর মতবিরোধ দেখা দেয়। শান্তির জন্য যে যুদ্ধ করতে হয়, দুর্বলকে যে শান্তির পরিবর্তে শান্ত হতে বাধ্য করা হয় এই সহজ সত্যগুলো তিনি জানতেন না। পরিণামে শুধু দেশটাই ভাঙ্গেনি, সেই ভাঙ্গন সারা বিশ্বকে এমনভাবে নাড়া দিয়েছে যে আমরা আজ পর্যন্ত তার ফল ভোগ করছি।

গর্বাচভ কি বিশ্বাসঘাতক ছিলেন বা পশ্চিমের দালাল? এ প্রশ্ন আজ অনেকের। তিনি যে সোভিয়েত ইউনিয়নের অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্থবিরতা দূর করতে সত্যিকার অর্থেই যত্নবান ছিলেন তাতে কোনই সন্দেহ নেই। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে তিনি দেশের চেয়েও বিশ্ব রাজনীতির পরিবর্তনে বেশি মনোযোগী হন। ওনার ধারনা ছিল যদি পশ্চিমা বিশ্বের সাথে আদর্শগত দূরত্ব ঘুচিয়ে আনা যায় অনেক সমস্যা এমনিতেই উধাও হয়ে যাবে। কি সেই সমস্যা? বিভিন্ন ধরণের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও অস্ত্র প্রতিযোগিতা। এ দুটো কারণে সোভিয়েত অর্থনীতি তখন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। আমেরিকা সৌদি আরবকে কনভিন্স করতে পেরেছিল তেলের দাম কমাতে যা ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের প্রধান উৎস। অন্যদিকে রিগ্যান ঘোষিত স্টার ওয়ার এদের প্রতিরক্ষা খাঁতে ব্যয় বাড়ানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করছিল। এখানে তিনি যে ভুল করেছিলেন তা হল ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নেয়া। তাঁর কাছে জারের রাশিয়া ছিল শ্রেণী শত্রু আর শত্রুর শত্রু বন্ধু এই সূত্র অনুযায়ী পশ্চিমা বিশ্বের সাথে রাশিয়ার হাজার বছর যাবৎ ঐতিহাসিক শত্রুতাকে তিনি সঠিক ভাবে মূল্যায়ন না করে শুধু পুঁজিবাদী ও সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার আদর্শগত কোন্দল হিসেবে দেখেছেন। এর ফলে পররাষ্ট্র নীতিতে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। যেখানে আন্দ্রে গ্রোমিকো, যিনি সবার উপরে সোভিয়েত ইউনিয়নের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে মি: নট হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছিলেন, গর্বাচভের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেভারনাদজে হয়েছেন মি: ইয়েস। তিনি ও পরবর্তীতে ইয়েলৎসিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোজিরেভ আক্ষরিক অর্থেই ছিলেন পর রাষ্ট্র মন্ত্রী যারা বিদেশের স্বার্থ রক্ষায় স্বদেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতে দ্বিধা করেননি। ফলে গর্বাচভের রাজনীতি পশ্চিমা বিশ্বের জন্য অনেক পজিটিভ রেজাল্ট নিয়ে এলেও সোভিয়েত ইউনিয়ন ও রাশিয়ার জন্য সেটা ছিল ধ্বংসাত্মক। সেই রাজনীতির ফলে দুই জার্মানি এক হয়েছে কিন্তু ভেঙ্গেছে ওয়ারশ জোট, যুগোস্লাভিয়া, সোভিয়েত ইউনিয়ন। যেহেতু সে সময় তৃতীয় বিশ্ব ছিল শুধুই পুঁজিবাদী ও সমাজতান্ত্রিক ক্যাম্পের প্রভাব বিস্তারের আঙ্গিনা, সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভাবে প্রায় দেউলিয়া তাই অনেকেই পেরেস্ত্রোইকা পুঁজিবাদী বিশ্বের জন্য যে পজিটিভ পরিবর্তন এনেছিল সেটাকে বিশ্ব রাজনীতিতে গর্বাচভের পজিটিভ ভূমিকা হিসেবে দেখে যে জন্য তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। কিন্তু তাঁর রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা যে এককেন্দ্রিক বিশ্ব ব্যবস্থার জন্ম দিয়েছে, ন্যাটোর সম্প্রসারণ ঘটিয়েছে এবং আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া, ইউক্রেন সহ বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার বীজ যে তাঁর নতজানু পররাষ্ট্রনীতির ফল সেটা ভুললে চলবে না। আর এসব কারণেই গর্বাচভ পশ্চিমা বিশ্বের কাছে মহানায়ক হলেও সোভিয়েত ইউনিয়ন, বিশেষ করে রাশিয়ার ও তৃতীয় বিশ্বের কোটি কোটি মুক্তিকামী মানুষের কাছে একজন পরাজিত সেনাপতি যিনি তাঁর দেশ, আদর্শ ও স্বপ্নের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন এমন একজন খলনায়ক হিসেবেই গণ্য হবেন। যে গর্বাচভ ১৯৮৮ সালে টাইম ম্যাগাজিনের মান অফ দ্য ইয়ার নির্বাচিত হয়েছিলেন সেই গর্বাচভই ১৯৯৬ সালের রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাত্র ০.৫১% ভোট পান।  এটা ভালো বা মন্দ কিছু নয়। গর্বাচভ সোভিয়েত ইউনিয়নে যে পেরেস্ত্রোইকা বা পুনর্নির্মাণ শুরু করেছিলেন সারা বিশ্বের মানুষ ইচ্ছা অনিচ্ছায় তাতে জড়িয়ে পড়ে নিজ নিজ আশা ও স্বপ্ন নিয়ে। কারও স্বপ্ন পূর্ণতা পায়, কারও হয় স্বপ্নভঙ্গ। এই পাওয়ার আনন্দ আর হারানোর বেদনা থেকেই মানুষ গর্বাচভকে বিচার করবে। তিনি ইতিহাসের একজন বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব হিসেবেই পরিচিত হবেন।

সোভিয়েত ইউনিয়নের সমস্যা ছিল বহুমাত্রিক। একই ভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙ্গনও একটা বহুমাত্রিক সমস্যা। জাহাজের ক্যাপ্টেন যেহেতু অন্যদের চেয়ে বেশি ক্ষমতার অধিকারী তাই তার দায় ও দায়িত্ব দুটোই বেশি। স্ট্যালিনের পরে গর্বাচভের মত নিরঙ্কুশ ক্ষমতা আর কারও ছিল না। শুধু তাই নয় ফর্মালি গর্বাচভের সাংবিধানিক ক্ষমতা ছিল আরও অনেক বেশি। এটাও হয়তো তাঁর ব্যর্থতার অনেকগুলো কারণের একটা। কারণ ক্ষমতা অনেক সময় মানুষকে নিজের শক্তি সম্পর্কে ভুল ধারণা দেয়। সে তখন এমন কাজেও হাত দিতে পারে যেটা সফল ভাবে শেষ করার ক্ষমতা, দক্ষতা, এমনকি মানসিক দৃঢ়তা তার নেই। আরও একটা জিনিস মনে রাখতে হবে যে একজন ডাক্তারকে প্রথমত ও প্রধানত ভালো চিকিৎসক হতে হয়। তিনি যত ভালো গায়ক বা লেখকই হন না কেন সেটা অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করে তুলবে না। মিখাইল গর্বাচভের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নকে রোগমুক্ত করা, তার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা আর এখানেই তিনি চরম ব্যর্থ। তাঁর কারণেই বিশ্ব সর্বহারা ও মেহনতি মানুষের একনায়কতন্ত্রের পরিবর্তে পেয়েছে বিশ্বব্যাপী আমেরিকার একনায়কতন্ত্র।

সোভিয়েত ইউনিয়নে যে পরিবর্তন দরকার ছিল এ নিয়ে কারও কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কোত্থেকে সেটা শুরু করতে হত। অনেকের ধারণা তিনি যদি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন একসাথে শুরু না করে চীনের মত আগে অর্থনৈতিক পরিবর্তনে মনোযোগী হতেন তাহলে হয়তো এমন লেজেগবুরে অবস্থা হত না। আমার ব্যক্তিগত ধারণা সবার আগে দরকার ছিল সমমনাদের একটা শক্তিশালী টিম তৈরি করা যারা যেকোনো অবস্থাতেই তাঁর সাথে থাকবেন এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের স্বার্থে কাজ করবেন। তিনি যাদের নিয়ে শুরু করেছিলেন তাঁদের প্রায় সবাই সমাজতন্ত্রের বা মার্ক্স লেনিনের আদর্শের চেয়েও পশ্চিমা জৌলুসে বেশি বিশ্বাস করতেন এবং তাঁরা সোভিয়েত ইউনিয়নকে সংস্কার করার চেয়ে এর ভাঙ্গনেই বেশি আগ্রহী ছিলেন। অন্তত আলেক্সান্দর ইয়াকভলেভ, যাকে বলা হত পেরেস্ত্রোইকার রূপকার তিনি সেটাই স্বীকার করেছেন। তবে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি, সোভিয়েত ইউনিয়ন নিয়ে মানুষের নস্টালজিয়া, তৃতীয় বিশ্বের দেশে দেশে মুক্তির পতাকা উড়াতে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা আমাদের বার বার মনে করিয়ে দেয় বিশ্বে সার্বিক ভারসাম্য রক্ষায় এরকম একটা দেশের উপস্থিতির গুরুত্বের কথা। তাই যারা সমাজতন্ত্র বা সোভিয়েত ব্যবস্থার পতন অবশ্যম্ভাবী বলে মনে করেন আমি তাদের সাথে দ্বিমত প্রকাশ করতে চাই। একই সাথে সোভিয়েত ইউনিয়নের অভিজ্ঞতা, গর্বাচভের ব্যর্থতা এসব থেকে শিক্ষা নিয়ে কীভাবে এমন একটা বিশ্ব তৈরি করা যায় যেখানে থাকবে সম্পদের সুষম না হলেও ন্যায্য বন্টন, থাকবে গণতান্ত্রিক অধিকার, থাকবে বাকস্বাধীনতা আর ভোগের পেছনে পাগলের মত না ছুটে মানুষ গড়বে পরিবেশ ও প্রকৃতি বান্ধব নতুন সমাজ। পদার্থবিদ্যায় একটা কথা আছে – নেগেটিভ রেজাল্টও রেজাল্ট, কেননা সেটা আমাদের বলে দেয় কোন পথে যাওয়া ঠিক হবে না। আশা করি গর্বাচভ আমাদের এই শিক্ষাটা অন্তত দিতে পেরেছেন। এ নিয়ে আগামী পর্বে আমরা আবার কথা বলব। তার আগে একটা জানা গল্প।
এক ভদ্রলোক জরুরী কাজে বিদেশ যাবেন। কয়েক ঘন্টা পরে ফ্লাইট। বাসা থেকে বেরুবেন এমন সময় পাহারাদার এসে কাঁচুমাচু হয়ে বলল
স্যার, আজকে যাবেন না।
কেন?
আমি রাতে দুঃস্বপ্ন দেখেছি যে বিমানটা আক্সিডেন্ট করেছে।

কি একটা ভেবে ভদ্রলোক ফ্লাইট ক্যান্সেল করলেন। পরের দিন খবরে জানা গেল যে বিমানটি সত্যি সত্যি আক্সিডেন্ট করেছে। তিনি পাহারাদারকে ডেকে তার হাতে বড় অংকের টাকা দিয়ে বললেন
অনেক ধন্যবাদ আমার জীবন রক্ষার জন্য। কিন্তু আমি তো তোমাকে বাড়ি পাহারা দেবার জন্য রেখেছি, ঘুমুনের জন্য নয়। এই নাও টাকাটা। আশা করি তুমি শীঘ্রই নতুন কাজ খুঁজে পাবে।

হ্যাঁ, গর্বাচভকে একেবারেই ভিন্ন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
গবেষক, জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ
শিক্ষক, রাশিয়ান পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি, মস্কো