মতামত

বিধিমালা ২০১৫: তদন্ত কমিটিতে শ্রমিকের প্রতিনিধি নিয়োগ প্রসঙ্গে

-ফজলুল কবির মিন্টু

শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা-২৪,  উপধারা ১ এর দফা ‘ঘ’ তে উল্লেখ আছে শ্রমিকের অসদাচরনের তদন্ত করার জন্য গঠিত তদন্ত কমিটিতে মালিক এবং শ্রমিক পক্ষের সমান সংখ্যক প্রতিনিধি থাকতে হবে। এ সংক্রান্ত শ্রম বিধিমালা-২০১৫ এর বিধি ২৯ এ আছে শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্য হতে মনোনয়ন দিতে হবে।

এ সংক্রান্ত আমার একটা বাস্তব অভিজ্ঞতা পাঠকদের সাথে শেয়ার করার প্রয়োজন বলে আমি মনে করি- ঘটনাটি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের। আগ্রাবাদস্থ একটি পোশাক কারখানায় আমরা ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছিলাম। এরুপ অবস্থায় কারখানা কর্তৃপক্ষ আমাদের প্রস্তাবিত ইউনিয়নের নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে কারন দর্শানো নোটিশ দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে অসদাচরনের দায়ে কার্যক্রম শুরু করে। আমরা ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করার জন্য অভিযুক্তদের পক্ষের প্রতিনিধি হিসাবে আমাদের পক্ষের একজন শ্রমিকের নাম দিই। পরে দেখা গেল কোন নিয়মের তোয়াক্কা না করে একদিন অভিযুক্ত শ্রমিক এবং তদন্ত কমিটিতে তাদের পক্ষের প্রতিনিধিকে সহ গায়ের জোরে বের করে দেয়। এব্যাপারে পরবর্তীতে শ্রম দপ্তরকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। শ্রম দপ্তরে মালিকের বিরুদ্ধে অসৎ শ্রম আচরণ এবং এন্টি ট্রেড ইউনিয়ন ডিস্ক্রিমিনেশনের অভিযোগে শ্রম দপ্তরে অভিযোগ দেয়া হলেও দপ্তর থেকে আমরা কোন সহযোগিতা পাইনি।  শ্রম আদালতে মামলা করার পর মামলার দীর্ঘসূত্রতার জন্য ভুক্তভোগী শ্রমিকেরা হাল ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন পেয়েও পরবর্তীতে আর কাজ করা যায়নি। এর মাধ্যমে বুঝা যায় শ্রম আইন এবং বিধিতে নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করার স্বার্থে তদন্ত কমিটিতে মালিক এবং শ্রমিক পক্ষের সমান সংখ্যক প্রতিনিধির কথা বলা হলেও তা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্য হতে মনোনয়ন দিতে হবে উল্লেখ থাকায় তার কোন সুফল শ্রমিকেরা পাচ্ছেনা। বরং তদন্ত কমিটিতে শ্রমিকের পক্ষের প্রতিনিধিও বিপদগ্রস্ত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে। এতে নিরপেক্ষ তদন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক সময় শ্রমিকের পক্ষে প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তর থেকে শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি হতে কেউ আগ্রহ প্রকাশ করেনা। কিংবা শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি হলেও মালিকের ফরমায়েশ অনুযায়ী তাকে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। শ্রম বিধিলামালা – ২০১৫ এর সংশোধনীতে বিধি ২৯ এর উপবিধি ৭ এর শেষে নতুন অনুচ্ছেদ যুক্ত করে তাতে বলা হয়েছে – “অভিযুক্ত শ্রমিক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তার প্রতিনিধি মনোনয়ন প্রদান না করলে কর্তৃপক্ষ সিবিএ বা অংশগ্রহণকারী কমিটির নিকট প্রতিনিধি মনোনয়নের জন্য অনুরোধ করবে”।  এ অনুচ্ছেদ যুক্ত করার পরেও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করা স্পম্ভব নয় বলে আমি মনে করি। কেননা অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে সিবিএ বা অংশগ্রহণকারী কমিটি মালিক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় তাদের মনোনীত প্রতিনিধি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে কিনা কিংবা স্বাধীনভাবে কাজ করতে আগ্রহী হবে কিনা সেটাও বিবেচনায় নিতে হবে। বলা  বাহুল্য এ সংক্রান্ত আমাদের অভিজ্ঞতা খুব সুখকর নয়। তাই নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করার স্বার্থে তদন্ত কমিটিতে শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি শ্রমিক তার ইচ্ছামত প্রতিষ্ঠানের বাহিরে থেকেও যাতে নিয়োগ দিতে পারে সে সুযোগ থাকা উচিৎ। তাহলেই কেবল ন্যায় বিচার নিশ্চিত হবে। অবশ্য রাষ্ট্রের সদ ইচ্ছা থাকাটা খুবই জরুরি।

লেখকঃ সংগঠক, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, কেদ্রীয় কমিটি