বিজ্ঞান প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ভাবনা (৬০): পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র

– বিজন সাহা

গত কয়েক সপ্তাহ হল বিশ্ব আবার পারমাণবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। রাশিয়া ও ইউক্রেন পরস্পরকে দোষারোপ করছে জাপারঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আক্রমণের জন্য। কিন্তু প্রশ্নটা হল এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে এখন রুশ সেনারা। শুধু তাই নয়, জাপারঝিয়া অঞ্চল এখন রুশ অধিকারে। সেখানকার মানুষও তাদের উপস্থিতির প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে এবং গণ ভোটের আয়োজন করতে যাচ্ছে তারা রাশিয়ার সাথে যোগ দেবে কি দেবে না সেই প্রশ্নে। তাই রুশরা নিজেরা নিজেদের উদ্দেশ্য করে রকেট হামলা করবে সেটা শুধু পাগলই বিশ্বাস করবে। যাহোক, এর আগে যুদ্ধের শুরুতে মার্চ মাসে ইউক্রেন সেনারা প্রথম বারের মত এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র আক্রমণ করে। তখন পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে লিখেছিলাম। তাই অন্য কথার আগে সেটাই আবার বলি।

সোভিয়েত নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টে সেফটি ব্যাপারটা কতখানি ছিল সেটা দিয়েই শুরু করি। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হাই রিস্ক সেন্টার, তাই সেই সময়ের সবচেয়ে জোরদার নিরাপত্তা ব্যবস্থা যে অবলম্বন করা হয়েছিল তাতে সন্দেহ নেই। বিশেষ করে তখন আমেরিকা আর সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে যে শত্রুতা ছিল, তাতে বাইরে থেকে বোমা মেরে বা মিসাইল দিয়ে এসব কেন্দ্র যাতে সহজে ধ্বংস করতে না পারে সে ব্যবস্থা ছিল। তবে এটাও ঠিক, এই নিরাপত্তার প্রথম স্টেপ ছিল বিমান বা ক্ষেপানাস্ত্র আগেই ধ্বংস করা। এখন রাশিয়া সেটাই করছে – কেন্দ্রে আঘাত হানার আগেই ওয়ার হেড ধ্বংস করছে। যাহোক, আমরা জানি যে ইউরেনিয়ামে নিয়ন্ত্রিত চেইন রিয়াকশন ঘটিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। আর তা যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায় সে জন্য কয়েক ধাপ নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে। এমনকি কোন কারণে বিদ্যুৎ সাপ্লাই বন্ধ হয়ে গেলে তুলনামূলক দীর্ঘ সময়ের জন্য রিয়াক্টর নিরাপদ অবস্থানে চলে যায় আর ধীরে ধীরে চেইন রিয়াকশন বন্ধ হয়ে যায়। অর্থাৎ এখানে এক্সটারনাল কন্ট্রোলের সাথে সাথে অনেক অটোম্যাটিক কন্ট্রোল কাজ করে। চেরনোবিলের ইতিহাস থেকে জানা যায় এই অটোম্যাটিক সিস্টেম বিভিন্ন স্টেজে আসন্ন বিস্ফোরণের ইঙ্গিত দেয়, তবে একটার পর একটা সিকিউরিটি সিস্টেম বন্ধ করার ফলে এক সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। আসলে এখানে তখন কিছু এক্সপেরিমেন্ট চালানো হচ্ছিল – কতটুকু চাপ রিয়াক্টর নিতে পারে সেটা জানার জন্য। যেহেতু দেশের অর্থনীতি তখন নাজুক অবস্থায় ছিল তাই নিরাপত্তা খাতে খরচ কমানো যায় কিনা সেটাই পরীক্ষা করা হচ্ছিল। এই কাজের দায়িত্বে ছিলেন ইউক্রেনের এক পার্টি লিডার, যিনি মস্কোয় বসে এসব দেখছিলেন। যেসব বিজ্ঞানীরা চেরনোবিলে এক্সপেরিমেন্ট চালাচ্ছিলেন তারা বার বার তাঁকে সতর্ক করলেও তিনি সেটা চালিয়ে যাওয়ার আদেশ দেন। সেই সময়ে পার্টির নেতারা ছিলেন সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী। অনেকের ধারণা এটা ছিল সেই নেতার পক্ষ থেকে নাশকতামূলক কাজ, অন্তত যারা চেরনোবিলের দুর্ঘটনা পরবর্তী বিভিন্ন কাজে জড়িত ছিলেন তাদের অনেকেই এই মত প্রকাশ করেন। এর ফলে কি ঘটেছিল তা আমরা সবাই জানি। আসলে এসব জায়গায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা এত বেশি যে সেটা নষ্ট করতে অনেক ঘাম ঝরাতে হয়। আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ছাড়াও আছে এক্সটারনাল নিরাপত্তা। যেমন সোভিয়েত আমলের এসব রিয়াক্টর যে স্থাপনায় অবস্থিত তা (১) ৩০ কিলো পাস্কেল শক্তির শক ওয়েভের চাপ বহন করতে পারে। এই চাপে বিমান দুমড়ে মুচড়ে চ্যাপ্টা হয়ে যায়; (২) ২০ টন ওজনের প্লেন ৭২০ কিমি/ঘন্টা বেগে এর উপর পড়লে ঠিক দাঁড়িয়ে থাকবে; (৩) ৫৬ মি/সেকেন্ড (২০১.৬ কিমি/ঘন্টা) বেগের ঝড় সইতে পারে; (৪) বন্যায় টিকে থাকতে পারে; (৫) রিখটার স্কেলের ৮ নম্বর ভুমিকম্পে দাঁড়িয়ে থাকে। অর্থাৎ নিউক্লিয়ার পাওয়ার স্টেশনের ক্ষতি করা বেশ শ্রম সাধ্য।

তাহলে কেন এই আক্রমণ? বিশেষ করে আক্রমণ যখন প্রায় প্রতিদিন করা হচ্ছে তার মানে এর পেছনে নিশ্চয়ই কোন অভিসন্ধি আছে। ধরুন আপনার মাথায় খুব শক্ত হেলমেট আছে। আপনি জানেন সেটা নির্দিষ্ট পরিমাণ আঘাত সহ্য করতে পারবে। তার মানে এই নয় আপনি এক নাগারে অনেকক্ষণ তার চেয়ে দুর্বল আঘাত সহ্য করতে পারবেন। এমনকি তাতে যদি আপনার মাথা বেঁচেও যায় সাইকোলজিক্যাল এফেক্ট এর ভীষণ। বিভিন্ন কারণে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের আগ্রহ কমছে। যদিও আমার বিশ্বাস ক্ষমতাসীনরা মোটেই নিরুৎসাহী নয়। তারা এই যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার যুদ্ধে বিনিয়োগ করছে সেটা কি শুধুই মানবাধিকারের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য? না, তারা কখনই আমাদের সব দেশে গণতন্ত্র নিয়ে মোটেই ভাবিত নয়, এমনকি নিজেদের দেশেও। তাই যদি হত, বিএলএমের জন্ম নেবার পরিবেশ সৃষ্টি হত না, বাল্টিকের দেশগুলোতে রুশরা বিভিন্ন ধরণের ডিসক্রিমিনেশনের শিকার হত না। গণতন্ত্র – এটা আমাদের ধোঁকা দেবার মহৌষধ, অনেকটা স্বর্গের অপসরাদের মত। এটা অনেকটা পোষা বাঘের মত, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনাকে না ছুঁইছে ওর মত ভাল আর কেউ নেই, কিন্তু ছুঁইলেই বুঝবেন তার মাহাত্ম্য। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় এই বিনিয়োগের একটাই কারণ – মুনাফা। হ্যাঁ, ইউক্রেনের জমি, সেখানকার খনিজ সম্পদ ইত্যাদি। এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকাকে পশ্চিমারা চুষে শেষ করে ফেলেছে অনেক আগেই – এখন বাকি আছে রাশিয়া আর এক্স সোভিয়েত দেশগুলো। কি করতে হবে – ছলে বলে কৌশলে এসব দেশের মধ্যে বিবাদ লাগাতে হবে আর তারপর গণতন্ত্রের নামাবলি গায়ে দিয়ে শোষণ করতে হবে। ব্যাস, তাহলেই ষোল কলায় পূর্ণ।

যাহোক এখন দু’ ধরণের কথা শোনা যায় জাপারঝিয়ার পারমাণবিক বিপর্যয় নিয়ে। এক দলের ধারণা যদি বিপর্যয় ঘটে তার প্রভাব ইউক্রেন বাদেও রাশিয়া, বেলারুশ, বাল্টিকের দেশগুলো, পোল্যান্ড, রুমেনিয়া, বুলগেরিয়া এমনকি জার্মানির উপরে পড়বে। এবং যেহেতু এতে ন্যাটোর দেশ ক্ষতিগ্রস্থ হবে তাই তখন ন্যাটো ৫ নম্বর আর্টিকেল ব্যবহার করে সরাসরি যুদ্ধে নামবে। কিন্তু কার বিরুদ্ধে? আক্রমণ তো করছে ইউক্রেন। অবশ্যই রাশিয়ার বিরুদ্ধে। কারণ এখন মহাবিশ্বের সমস্ত রকমের দুর্ঘটনার কেন্দ্র মস্কো। এমনকি পাঁচ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে একটা ব্ল্যাক হোল যদি একটা নক্ষত্র গ্রাস করে সেটাকেও আজ আপনি পুতিনের আগ্রাসন বলে চালিয়ে দিতে পারবেন। শুধু তাই নয় বিগ ব্যাং-এর জন্য পুতিনকে দায়ী করতে পারবেন। এই যুক্তি নিশ্চয়ই ইউক্রেন এলিটদের উৎসাহিত করবে আরও জোশের সাথে বিদ্যুৎ কেন্দ্র আক্রমণে। কারণ তাদের একটাই লক্ষ্য – ন্যাটোকে যুদ্ধে নামানো।

উল্লেখ করা যেতে পারে যে ইউক্রেন শুধু সরাসরি এনারগোদারের এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রই আক্রমণ করছে না, আক্রমণ করছে কাখভ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এখান থেকেই জাপারঝিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র কুলিং সেন্টারের জন্য জল পায়, তাই এই আক্রমণ এমনকি সরাসরি আক্রমণের চেয়ে ভয়ঙ্কর হতে পারে। তাছাড়া কাখভ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিপর্যয় ঘটলে বিশাল এলাকার লোকজন ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সেদিন থেকে দেখলে ইউক্রেনের এই আক্রমণ সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ ছাড়া কিছু নয়।

অনেকেই প্রশ্ন তুলছে এসব আক্রমণ হচ্ছে আমেরিকার হাইমারস দিয়ে যেটা মূলত আমেরিকানরাই নিয়ন্ত্রণ করে। তারা কেন এই রিস্ক নিচ্ছে? প্রথমত আমেরিকা অনেক দূরে। যদি রাশিয়া বা ইউরোপ ক্ষতিগ্রস্থ হয় তাতে আমেরিকার ক্ষতি তেমন হবে না, বরং লাভের সম্ভাবনা আছে যথেষ্ট। এছাড়া অনেক আমেরিকান বিশেষজ্ঞের মতে যদি জাপারঝিয়ার পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটানো হয় তবে এর প্রতিক্রিয়া হবে গড়পড়তা ২০ কিলোমিটার রেডিয়াসের মধ্যে। আর যেহেতু এই এলাকার লোকজন মূলত রুশ বা রুশ সমর্থক – এদের মরা বাঁচায় না ইউক্রেন, না ইউরোপ না আমেরিকা – কারোই কিছু এসে যায় না। রুশ বা রাশিয়ান – আজ তাদের চোখে আর মানুষ নয়, আর যাদেরকে তারা মানুষ বলে মনে করে না, তাদের ভালোমন্দ দেখার দায়িত্ব পশ্চিমা বিশ্ব নেবে কেন।  তাই জাপারঝিয়ার ক্ষেত্রে পশ্চিমা বিশ্ব এখন সব অর্থেই উইন উইন সিচুয়েশনে। কিন্তু মনে রাখা দরকার – রাশিয়াকে যুদ্ধে নামানোর সময়ও এদের এই একই হিসাব ছিল – কয়েক দিনের মধ্যেই রাশিয়ার অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাবে, তারা বিজয়ী বেশে মস্কো দখল নেবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে ইউরোপের অর্থনীতিরই নাভিশ্বাস উঠেছে। কিন্তু অর্থনীতি আর পারমাণবিক বিপর্যয় এক জিনিস নয়। যদি তাদের হিসেবে ভুল হয় খেসারত দিতে হবে সারা বিশ্বকে। কেঁচো খুড়তে সাপ বেরুতে পারে। কিন্তু এখানেও আমেরিকার লাভ। কেন?

এখনও পর্যন্ত যেসব মানব নিয়ন্ত্রিত শক্তির উৎসের কথা আমরা জানি এদের মধ্যে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সবচেয়ে পরিবেশ বান্ধব। সোলার বা উইন্ডের উপর আমাদের হাত নেই, তাই সেখানে আমাদের সূর্য মামার দয়ার উপর নির্ভর করতে হয়, নির্ভর করতে হয় হনূমানের বাবা পবন দেবতার মর্জির উপর। অনেকেই বলবেন চেরনোবিল বা ফুকুসিমার কথা। কিন্তু এখানে একটাই প্রশ্ন – আমরা নিরাপত্তার পেছনে কতটুকু ব্যয় করতে রাজী। বিমান দুর্ঘটনায় বাঁচার সম্ভাবনা কম, একসাথে প্রচুর মানুষ মারা যায় – তবে সড়ক দুর্ঘটনা হয় প্রায় প্রতিদিন তাই অনেক বেশি মানুষ মারা যায় সড়ক দুর্ঘটনায়। কারণ দুটোর নিরাপত্তা লেভেল দুই ধরণের। তাছাড়া সোলার প্ল্যান্ট বা উইন্ড মিল বসাতে যে পরিমাণ গাছ কাটা হয় আর এতে পরিবেশের যে ক্ষতি হয় সেটার হিসাব কি কেউ তেমন একটা করেছে? তাই বিদ্যুতের জন্য পারমানিবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যোগ্য বিকল্প এখনও নেই বললেই চলে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছে কে? রসঅ্যাটম। তাই যদি জাপারঝিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কিছু একটা ঘটানো যায় তবে ইন্ডিয়া, বাংলাদেশ, তুরস্ক, ইজিপ্ট, হাঙ্গেরি – ইত্যাদি যেসব দেশে রাশিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করছে সেখানে এর বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত গঠন করা যাবে। আমাদের সব দেশে নেতারা যেমন ভোটের রাজনীতি করে, আমেরিকায় ওরা করে বাজারের রাজনীতি, মুনাফার রাজনীতি। যতক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ মুনাফা নিয়ে আসবে ততক্ষণ যুদ্ধ চলবেই – আর চলবে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতা ইত্যাদি গালভরা বুলি বিক্রির রমরমা বাজার।

এখানে আরও একটা ব্যাপার উল্লেখ করা দরকার। সোভিয়েত আমলে পারমানবিক অস্ত্রের উপস্থিতি এক ধরণের রেস্ট্রেইনিং ফ্যাক্টর অর্থাৎ শত্রুর হাতে পারমাণবিক অস্ত্র এক ধরণের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করত। দুই মাস্তান যখন সমান শক্তিশালী হয় ও উভয়ে জানে প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করলে উল্টো মার খাবার প্রায় শতভাগ সম্ভাবনা আছে তখন তারা মারামারি এড়িয়ে আপোষ করার চেষ্টা করে। কিন্তু একজন যদি নিজেকে অনেক বেশি শক্তিশালী মনে করে আর কোন রকম প্রত্যুত্তর আসবে না এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয় তবে সে অনায়াসে দুর্বলের উপর আঘাত হানে। সোভিয়েত আমলে সামরিক দিক থেকে নিজের নিরঙ্কুশ শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে কেউই নিশ্চিত ছিল না আর এটাই বিশ্বকে বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করেছে। তখন ধারণা করা হত যে এক পক্ষ যুদ্ধ শুরু করলে সেটা হবে গ্লোবাল লড়াই আর এক অর্থে শেষ লড়াই। বর্তমানে টেকনোলোজির উন্নতির সাথে সাথে অনেকেই বিশ্বাস করে যে লোকাল পারমাণবিক যুদ্ধ সম্ভব, মানে এই যুদ্ধ কোন এক ছোটখাটো যুদ্ধ ক্ষেত্রের মধ্যে যেমন ইউক্রেনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা সম্ভব। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে প্রথম আঘাত হেনে প্রতিপক্ষের হেড কোয়ার্টার ধ্বংস করতে পারবে সে যুদ্ধে জয়ী হবে, কারণ এক্ষেত্রে অটোম্যাটিক রিপ্লাই নাও আসতে পারে আর এলে সেই সব ওয়ার হেড লক্ষ্যে পৌঁছুনর আগেই ধ্বংস করার সময় তাদের হাতে থাকবে। রুশ সামরিক হাই কম্যান্ড বলে তাদের সিস্টেম এমন ভাবে তৈরি যে এমন কি হাই কম্যান্ড ধ্বংস হয়ে গেলেও এদের সমস্ত ক্ষেপণাস্ত্র স্বয়ংক্রিয় ভাবে কাজ করবে এবং শত ভাগ গ্যারান্টি সহ প্রতিপক্ষ মানে আমেরিকা ও ইউরোপ ধ্বংস করবে। আমেরিকা ও ইউরোপ কারণ এসব দেশ লক্ষ্য করেই পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছে। এটা সত্য না মিথ্যা সেটার প্রমাণ পাওয়া যাবে শুধু যুদ্ধ শুরু হলে বা এরকম পরিস্থিতি তৈরি হলে। প্রশ্ন হল আমেরিকা কি সেই রিস্ক নিতে রাজি? নাকি আসল যুদ্ধ ভূমি থেকে অনেক দূরে অবস্থিত বলে নিজেকে নিরাপদ মনে করে? তবে রাশিয়ার হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র সেই সুযোগ নাও দিতে পারে। সেদিক থেকে দেখলে বর্তমান বিশ্ব পারমাণবিক বিপর্যয়ের সামনে আগের চেয়ে অনেক বেশি দুর্বল। রুশে একটা কথা আছে – গায়ের জোর যখন আছে তখন আর বুদ্ধির দরকার নেই। অনেক সামরিক বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক নেতাদের কথাবার্তা শুনলে মনে হয় এরা এই নীতিতেই আজকাল বেশি বিশ্বাস করে।

 

গবেষক, জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ
শিক্ষক, রাশিয়ান পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি, মস্কো