চলমান সংবাদ

অধিকার আদায়ে গৌরবান্বিত সংগ্রামের জন্য চা শ্রমিকদের অভিনন্দন জানিয়েছে স্কপ

-চা শ্রমিকদের আন্দোলন নিস্ক্রিয় করতে সরকারের ভুমিকায় ন্যায্যতা প্রতিফলিত হয়নি

অধিকার আদায়ে টানা ১৯ দিনের গৌরবান্বিত সংগ্রামের জন্য চা শ্রমিকদের অভিনন্দন জানিয়েছে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদ। গত ২৮ আগষ্ট ২০২২, বিকাল ৪টায়, স্কপ কার্যালয়ে যুগ্ম সমন্বয়কারী চৌধুরী আশিকুল আলম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভা পরিচালনা করেন যুগ্ম সমন্বয়ক আহসান হাবিব বুলবুল। সভায় বক্তব্য রাখেন স্কপ নেতা শহীদুল্লাহ চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন, সাইফুজ্জামান বাদশা, ডাঃ ওয়াজেদুল ইসলাম খান, নঈমুল আহসান জুয়েল, শাকীল আক্তার চৌধুরী, আব্দুল ওয়াহেদ, নুরুল আমিন প্রমুখ।
সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, যে সময় সরকার দেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে বলে ঘোষণা দিচ্ছে, যখন বলা হচ্ছে আমাদের মাথাপিছু আয় ৩০০৭ ডলার অর্থাৎ প্রায় ৩ লক্ষ টাকা, সেই সময় দৈনিক মাত্র ১২০ টাকা মজুরি অর্থাৎ ৪ সদস্যের পরিবারে ২ জন উপার্জনকারী ধরলেও মাথাপিছু বার্ষিক আয় মাত্র ২২ হাজার টাকা বা ২২৮ ডলারে আটকে রাখা হয়েছে চা শ্রমিকদের। চা বাগান মালিকদের অপকৌশল আর চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃত্বের দুর্বলতায় গড়ে ওঠা বঞ্চনার বেড়াজালের বিরুদ্ধে চা শ্রমিকদের এই বিদ্রোহ দেশের শ্রমিক আন্দোলনের জন্য শিক্ষণীয়। চা বাগান মালিকদের অমানবিক শোষণের চিত্রটি সাহসী সংগ্রামের মাধ্যমে দেশবাসীর সামনে বৃহৎ ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলার জন্য চা শ্রমিকদের অভিনন্দন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, মজুরি বৃদ্ধিসহ ৭ দফা দাবিতে চা শ্রমিকদের আন্দোলন অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকারের প্রয়োজনীয়তা, শ্রম আইনের সীমাবদ্ধতা, অকার্যকর মজুরি বোর্ড, শ্রম দপ্তর এবং প্রশাসনের ব্যর্থতার চিত্র স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিয়েছে। শিল্প বিরোধ মিমাংসায় দায়িত্বপ্রাপ্ত রাস্ট্রীয় সংস্থাগুলি ১৯ মাসেও মিমাংসার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে পারেনি। অথচ চা শ্রমিকরা ১৯ মাস অপেক্ষা করার পরে দাবি আদায়ে আন্দোলন শুরু করলে চা বাগান মালিকদের উপর চাপ প্রয়োগের পরিবর্তে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানাভাবে শ্রমিক আন্দোলন কে নিস্ক্রিয় করার চেষ্টা করা হয়েছে। বিনা রেশন এবং বিনা মজুরিতে অনাহারক্লিষ্ট চা শ্রমিকরা যখন রাস্তায় সেই সময়ও চা বাগান মালিকরা শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়ার পরিবর্তে সোনারগাঁও হোটেলে বসে ভুল তথ্য উপস্থাপন করে অমানবিক শোষণের চিত্র আড়াল করতে ব্যস্ত ছিলেন। একটি মানবিক মজুরির জন্য ১৯ দিনের মরনপণ লড়াই করে চা শ্রমিকরা রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহীর হস্তক্ষেপ আদায় করেছে। তবে ৫০ টাকা বৃদ্ধি করে দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণের যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠা করতে যেয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মালিকদের সরবরাহকৃত ভুল তথ্য ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যা একে বারেই অগ্রহণযোগ্য। উৎপাদনে শ্রমিকের প্রধান ভুমিকা আড়াল করে মালিক তোষণের নীতিতে ন্যায্যতা প্রতিফলিত হয়না। নেতৃবৃন্দ, চাপিয়ে দেওয়ার ঝোঁক বাদ দিয়ে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ন্যায্যতার ভিত্তিক সমাজ গঠনের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান।
নেতৃবৃন্দ, অনতিবিলম্বে চা শ্রমিকদের মজুরির নতুন নির্ধারিত হারে চুক্তি সম্পাদন করে বকেয়া মজুরি একত্রে পরিশোধ এবং কর্মবিরতীকালিন সময়ের মজুরি ও রেশন পরিশোধের জন্য আহবান জানান। এছাড়া, আন্দোলনে অংশগ্রহন বা নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে কোনো শ্রমিককে হয়রানি করলে সহ্য করা হবেনা বলে হুঁশিয়ারী ব্যক্ত করেন।
সভা থেকে, জাতীয় ন্যূনতম মজুরি, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিতে শ্রম আইন সংশোধন, সামাজিক নিরাপত্তা (মহার্ঘ্য ভাতা, রেশন) এবং কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শ্রমিক সমাবেশ করার ঘোষণা দেওয়া হয়।

# ৩০/০৮/২০২২, ঢাকা #