চলমান সংবাদ

চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনের সমর্থনে চট্টগ্রামে সংহতি সমাবেশ

-শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি মেনে প্রয়োজনীয় সকল সুবিধা নিশ্চিত করার দাবি

চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনের সমর্থনে চট্টগ্রামে সংহতি সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন শ্রমিক নেতা ফজলুল কবির মিন্টু

চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির যৌক্তিক দাবি অবিলম্বে মেনে নিয়ে তাদের জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সকল সুবিধা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে ‘সচেতন নাগরিকবৃন্দ, চট্টগ্রাম’ আয়োজিত সমাবেশ থেকে। সোমবার বিকেলে নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, বছরের পর ভচর ধরে চা শ্রমিকরা নির্যাতন-নিপীড়ণ, শোষণ-বঞ্চনা-বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন। চা বাগানের মালিকরা শ্রমিকদের রক্তের উপর হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। অথচ চা শ্রমিকদের মজুরী মাত্র ১২০টাকা। শ্রমিকদের উপর এ অত্যাচার বন্ধ করতে হবে। চা শ্রমিকসহ সকল শ্রমিকের ঘামের শ্রমের ন্যায্য মজুরি দিতে হবে। দ্রব্যমূল্যের চরম উর্ধগতিতে সাধারণ মধ্যবিত্তই চলতে পারে না, চা শ্রমিকরা কিভাবে চলবে? তাদের সন্তানদের শিক্ষার ব্যবস্থা নেই। তাদের চিকিৎসা নেই, বাসযোগ্য ঘর নেই। এ বৈষম্য-জুলুম স্বাধীন দেশে কল্পনা করা যায় না। অবিলম্বে চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিসহ সকল যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে তাদের জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সকল সুবিধা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, নাট্যকার প্রদীপ দেওয়ানজী, প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, ওয়ার্কার্স পার্টির চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান, ন্যাপ কেন্দ্রীয় নেতা মিটুল দাশগুপ্ত, বিএফইউজ’র যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী, জাসদ নেতা জসিম উদ্দিন বাবুল, শ্রমিক নেতা ফজলুল কবির মিন্টু, আবৃত্তি শিল্পী রাশেদ হাসান। সাংবাদিক প্রীতম দাশের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন আবৃত্তি শিল্পী প্রণব চৌধুরী, যুব ইউনিয়ন সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেদুল সামির, আবৃত্তি শিল্পী ও সাংবাদিক অনুপম শীল, সাংবাদিক সোলাইমান আকাশ, বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদার স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সিঞ্চন ভৌমিক, আইনজীবী আবিদুর রহমান। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ঋতিক নয়ন, মিঠুন চৌধুরী, আমিনুল ইসলাম মুন্না, মিনহাজুল ইসলাম, সংস্কৃতিকর্মী সজল চৌধুরী, আরকে দাশ, নারী নেত্রী মিনু মিত্র, মোহাম্মদ জাফর, মো. রিয়াদ প্রমুখ। সমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, চা শ্রমিকদের বেতন মাত্র ১২০টাকা। অথচ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করার লোক এ দেশে আছে। এর স্থায়ী সমাধান করতে হলে রাষ্ট্রীয় কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে চা শ্রমিকদের অনেক ত্যাগ। মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় কেন্দ্র ছিল চা শ্রমিকদের বাড়ি। তাদের জীবনমান আজো মানবেতর। আশা রাখি প্রধানমন্ত্রী কিভাবে এর সমাধান দেন। সমাধান না হলে আবার আমরা পথে নামব। আওয়ামী লীগ নেতা মফিজুর রহমান বলেন, শ্রমিকদের রক্তের উপর হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন মালিকরা। অথচ ৩০০ টাকা মজুরি দিতে পারছে না। শ্রমিকদের উপর এ অত্যাচার বন্ধ করতে হবে। রক্ত চুষে যারা সম্পদ গড়েছেন তারা দাবি মেনে নিন। সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয়কে বলবো অবিলম্বে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মত সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণ করা হোক। তা যেন কমপক্ষে গার্মেন্টস শ্রমিকদের সমান হয়। চা শ্রমিকসহ সকল শ্রমিকের ঘামের শ্রমের ন্যায্য মজুরি দিতে হবে। চা শ্রমিকদের বছরের পর বছর যে শোষণ করা হয়েছে এর জবাব একদিন দিতে হবে। নাট্যকার প্রদীপ দেওয়ানজী বলেন, চা বাগানের মালিকদের একটা কুকুরের পিছনে যা খরচ হয় তা ১০ জন চা শ্রমিকের এক মাসের বেতনের চেয়ে কম। বাগান মালিকরা শুধু ধনী না, অতি ধনী। বাংলাদেশে যারা চা শ্রমিকদের পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন না, তারা মানবিক মানুষ নন। এ আঘাত শুধু চা শ্রমিকদের উপর নয়, সব পেশার মানুষের উপর আসবে। চা শ্রমিকদের বেতন যদি ৩০০ টাকাও করা হয় তাও কি যৌক্তিক? ৯০০০ টাকায় কেউ একটা সংসার চালাতে পারবে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার অগোচরে যদি হয়ে থাকে ১৪৫ টাকা বেতন তাহলে আপনি সেটা দেখুন। একটা মানুষ হিসেবে বাঁচতে যে মজুরি প্রয়োজন হয় সেটা আপনি নিশ্চিত করুন। প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, নিরীহ-নির্যাতিত, শোষিত-বঞ্চিত চা শ্রমিকরা জীবনের প্রয়োজনে পথে নেমেছেন। তাদের যে ঘর দেয়া হয় তা মানুষের বাসযোগ্য নয়। স্কুল থাকা বাধ্যতামূলক। অথচ অনেক চা বাগানে স্কুলই নেই। প্যারাসিটামল ছাড়া ওষুধ নেই। পরিবার নিয়ে ১২০ টাকায় কি করে চলেন? শ্রমিকরা কেউ ১৪৫ টাকা মানেননি। তারা হয়ত পেটের জ্বালায় বাগানে ফিরেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, সংবেদনশীল হোন। চা বাগান মালিকদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য করুন। এ বর্বরতা মেনে নেয়া যায় না। শরীফ চৌহান বলেন, দ্রব্যমূল্যের চরম উর্ধগতিতে সাধারণ মধ্যবিত্তই চলতে পারে না, চা শ্রমিকরা কিভাবে চলবে? তাদের সন্তানদের শিক্ষার ব্যবস্থা নেই। তাদের চিকিৎসা কিভাবে চলে? তাদের ন্যায্য দাবির প্রতি সমর্থন জানাই। সরকারের উচিত এ যৌক্তিক দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে চা শ্রমিকদের দাবি অবিলম্বে মেনে নেয়া। মহসীন কাজী বলেন, চট্টগ্রামের ২২টি চা বাগানের মধ্যে ১৮টি ফটিকছড়িতে। শৈশব থেকে দেখেছি চা শ্রমিকদের দুর্দশা। তাদের সকালের নাস্তা চাল ভাজা আর চিনি ছাড়া লাল চা। তারা একবেলা শুধু ভাত খায়। আর চা বাগানের উচ্চপদস্থদের যে বেতন ও সুযোগ-সুবিধা তা আকাশচুম্বী। দেশে ১৬৫ বছর ধরে চা শিল্প আছে। অথচ তারা ১৬৫ টাকা দৈনিক বেতনও পায় না। চা শ্রমিকদের দাবি মানা না হলে আমরা রাজপথে নামব। ন্যাপ নেতা মিটুল দাশগুপ্ত বলেন, গত ১৫ দিন ধরে চা শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধির জন্য আন্দোলন করছেন। অথচ মাত্র ২৫ টাকা বেতন বাড়ানো হলো। এটা লজ্জাকর। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছেই দাবি জানাই। আশাকরি তাদের নূন্যতম দাবি অবশ্যই ঘোষণা করবেন। জাসদের জসিম উদ্দিন বাবুল বলেন, তারা এতদিন যে মজুরি পেতেন তা নূন্যতমের চেয়েও অনেক নূন্যতম। এ বৈষম্য জুলুম যন্ত্রণা স্বাধীন দেশে কল্পনা করা যায় না। যে বাংলাদেশ আমরা চেয়েছিলাম এটা তা নয়। আজকে বাংলাদেশ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হাতে। যতদিন দেশ রাজনীতিবিদের হাতে ফিরবে না ততদিন শ্রমজীবী মানুষ মুক্তি পাবে না

# ২২/০৮/২০২২, চট্টগ্রাম #