চলমান সংবাদ

মিথ্যা ঘোষণায় ও আইপি জালিয়াতির মাধ্যমে পণ্য আমদানি রোধে তৎপরতা জোরদার

-বিভিন্ন সরকারি সংস্থার সমন্বয়ে শক্তিশালী টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব চট্টগ্রাম কাস্টমসের

মিথ্যা ঘোষণায় ও আইপি জালিয়াতির মাধ্যমে পণ্য আমদানি রোধে তৎপরতা জোরদার
বিভিন্ন সরকারি সংস্থার সমন্বয়ে শক্তিশালী টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব চট্টগ্রাম কাস্টমসের

সম্প্রতি মিথ্যা ঘোষণা ও আইপি (ইমপোর্ট পারমিট) জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে আমদানি করা মদ বোঝাই ৫টি কনটেইনার জব্দ করার পর এ ধরনের ঘটনা বন্ধে তৎপরতা জোরদার করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ। ইতোমধ্যে মদের বড় চালান আটকের ঘটনায় মামলা দায়ের ও তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কাস্টম হাউজ। চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর থানায় ফৌজদারি আইনে এসব চালানের সংশ্লিষ্ট সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে পণ্য চালানগুলো আমদানি করা হয়েছে, সেগুলোর মালিক পক্ষের লোকজনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। এছাড়া চোরাচালান রুখতে কদিন আগে চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে থাকা ১৫০টি আমদানি কনটেইনার স্বয়ংক্রিয়ভাবে লক (খালাস স্থগিত) করেন কাস্টম কর্মকর্তারা। এসব কনটেইনার কায়িক পরীক্ষার পর ডেলিভারির অনুমতি দেওয়া হবে বলে কাস্টমসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

এদিকে মিথ্যা ঘোষণায় ও আইপি (ইমপোর্ট পারমিট) জালিয়াতির মাধ্যমে মদসহ নানা পণ্য আমদানি রুখতে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি সংস্থার সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ কর্তৃপক্ষ। কাস্টম, পিবিআই, সিআইডি, র‌্যাব, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিনিধির সমন্বয়ে এই টাস্কফোর্স গঠনের সুপারিশ করেছেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার মো. ফখরুল আলম। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর গত সোমবার পাঠানো চিঠিতে তিনি এ সুপারিশ করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের উপ-কমিশনার (এআইআর শাখা) মো. সাইফুল হক।

এনবিআর চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো চিঠিতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার বলেন, ‘অতীতেও বিভিন্ন সময়ে আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট কর্তৃক দলিলাদি জাল বা কর্মকর্তা-কর্মচারীর সিল-স্বাক্ষর জাল করার মাধ্যমে পণ্যচালান খালাস করার ঘটনা উদঘাটিত হয়েছে। এসব ঘটনায় অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা না হলে জালিয়াতি বন্ধ হবে না। এমতাবস্থায় আলোচ্য মদের চালানগুলো মিথ্যা ঘোষণা ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে আমদানি ও খালাসের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিহ্নিত করে বিচারের সম্মুখীন ও কঠোর শাস্তি প্রদান নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে অথবা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কাস্টমস, সিআইডি, পিবিআই, র‌্যাব, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং দুদকের প্রতিনিধির সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠন করা যেতে পারে।’

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ সূত্র জানায়, মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার রোধে কাস্টম হাউজে পৃথক একটি অ্যান্টি মানি লন্ডারিং শাখা রয়েছে। এই শাখা থেকে মানি লন্ডারিং ঘটার আলামত রয়েছে এমন সব মামলার অনুসন্ধান, তদন্ত ও মামলা করা হয়। মদের ৫টি চালানের তথ্যসহ নথি মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত অনুসন্ধান, তদন্ত ও মামলা দায়েরের জন্য অ্যান্টি মানি লন্ডারিং শাখায় পাঠানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত গত ২৩ থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত ৩ দিনে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আনা মদ বোঝাই ৫টি কনটেইনার জব্দ করে কাস্টম ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মিথ্যা ঘোষণায় আনার পর আইপিসহ কাগজপত্র জাল করে দেশের বিভিন্ন ইপিজেডের ৪টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের নামে চালানগুলো আমদানি করা হয়। এসব চালানের মাধ্যমে প্রায় ৬০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করে চোরাচালানি চক্র। মিথ্যা ঘোষণায় ও আইপি জাল করে মদ আমদানির মাধ্যমে বড় অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকির অপচেষ্টার ঘটনায় ৫টি মামলা করে কাস্টম হাউস। নগরের বন্দর থানায় গত সোমবার (১ আগস্ট) মামলাগুলো করা হয়। সব মামলার বাদি কাস্টম হাউসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা। কাস্টম হাউসের অডিট, ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখার ডেপুটি কমিশনার মো. সাইফুল হক জানান, দ্য কাস্টমস অ্যাক্ট ১৯৬৯, স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট ১৯৭৪, বাংলাদেশ পেনাল কোড ১৮৬০ এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর বিভিন্ন ধারায় মামলাগুলো করা হয়।

বন্দর-কাস্টমস সূত্র জানায়, পণ্য আমদানি থেকে শুরু করে শুল্কায়ন এবং ডেলিভারি গ্রহণ পর্যন্ত কাস্টমস ছাড়াও বিভিন্ন পক্ষ জড়িত থাকে। পণ্য আমদানির শুরুতেই ব্যাংকে এলসি খুলতে হয়। অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে কামস্টম কর্মকর্তাদের নামে থাকা আইডি থেকে আমদানি চালান অ্যাসেসমেন্ট করা হয়। জালিয়াত চক্র মাঝেমধ্যেই এসব আইডি হ্যাক করে সিস্টেমে ঢুকে পড়ে। এরপর জাল-কাগজপত্র ব্যবহার করে পণ্য চালান ডেলিভারি নেওয়ার চেষ্টা চালায়। কখনো কখনো তারা আমদানিকারক হিসাবে অন্য প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে। এমনকি সেইসব প্রতিষ্ঠানের লোকজন জানতেও পারেন না, তাদের নামে পণ্য আমদানি করা হয়েছে। যদি চালান ধরা পড়ে শুধু তখনই বিষয়টি জানাজানি হয়। নিরপরাধ হওয়া সত্ত্বেও তখন ওই আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে ঘাটে ঘাটে ঘুরতে হয়। অনেক সময় অপরাধ না করেই হতে হয় মামলার আসামি। ওদিকে তথ্য-প্রমাণের অভাবে আড়ালেই থেকে যায় জালিয়াত চক্র। আইনি সীমাবদ্ধতাসহ নানা কারণে কাস্টম কর্মকর্তাদের একার পক্ষে অনেক ক্ষেত্রেই জালিয়াত চক্রকে শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, কাস্টমসসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো একসঙ্গে কাজ করলে জালিয়াত চক্রকে চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা সম্ভব।

# ০৩.০৮.২০২২ চট্টগ্রাম #