চলমান সংবাদ

সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য জঙ্গল সলিমপুর দখলমুক্ত করতে নেয়া হয়েছে মহাপরিকল্পনা

সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের জঙ্গল সলিমপুর। নাম শুনলেই গা শিউরে ওঠে। সরকারি পাহাড় কেটে গড়ে উঠেছে বিশাল অবৈধ সাম্রাজ্য। পাহাড় কেটে বানানো হয়েছে এই সাম্রাজ্য। তিন হাজার একরেরও বেশি জায়গা দখল করে এ সাম্রাজ্য গড়ে তোলা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে অপরাধীরা স্থান নেয় এখানে। ছিন্নমূলের নামে সেখানে দখল করা হয়েছে পাহাড়ি দুর্গম সরকারি এই খাসজমি। স্থানীয়রা ছাড়া বাইরের কেউ প্রবেশ করতে পারে না। প্রবেশের জন্য নিতে হয় অনুমতি। এ রাজ্যে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রবেশও অনেকটা চ্যালেঞ্জ ছিল। সন্ত্রাসীদের সেই অভয়ারণ্যে ১১টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মহাপরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। জঙ্গল সলিমপুরের বাসিন্দাদের বেশির ভাগই চট্টগ্রামের বাইরের। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পালিয়ে আসা দাগী আসামিরা এখানে অবস্থান করে। ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, বরিশাল, বরগুনা, রংপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা এসব লোক ছিন্নমূলের নামে সরকারি এই খাসজমি দখল করেছেন। এখানকার পাহাড়গুলো অপরাধীদের অভয়ারন্য বলে অভিযোগ আছে। অপরাধ জগতের সাথে যুক্ত অনেকেই জঙ্গল সলিমপুরে আসা-যাওয়া করেন বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে। একেক জনের বিরুদ্ধে ৪-৫টি করে খুনের মামলাও রয়েছে বলে জানা গেছে। বিভিন্ন সময় সেখান থেকে গ্রেফতার হয়েছে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী, উদ্ধার হয়েছে অস্ত্রশস্ত্র। সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জঙ্গল সলিমপুরে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজে গেলে সেখানে সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান ইয়াসিনের নেতৃত্বে প্রশাসনের গাড়ি বহর থেকে স্থানীয় ইউপি মেম্বারকে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর করা হয়। এরপর মামলা হলে ইয়াসিনসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জঙ্গল সলিমপুর ও জঙ্গল লতিফপুরসহ আশেপাশের সরকারি খাস জমি দখল করে বিশাল অবৈধ সাম্রাজ্য গড়ে তোলা হয়েছে। ১৫টি সমবায় সমিতির নামে এ রাজ্য গড়ে তোলা হয়েছে। ১৩টি সমবায় সমিতি নিয়ন্ত্রণ করছে এ জঙ্গল সলিমপুর। এসব সমিতির অধীনে আলাদা আলাদা সমাজ রয়েছে। সমাজপতিও রয়েছে। সমাজপতিরা একেক জন মাফিয়া ডন। আবার তাদের নিয়ন্ত্রণ করে ওই রাজ্যের শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রুপ। এক সময়ে আক্কাস ও মশিউর বাহিনী এ রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করেছিল। আক্কাস ক্রসফায়ারে নিহত হয়। মশিউর ও ইলিয়াছ বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। জঙ্গল সলিমপুর নিয়ে মহাপরিকল্পনা : সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত সেই জঙ্গল সলিমপুরকে ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীদের হাত থেকে মুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেখানে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। জঙ্গল সলিমপুর এলাকার মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন সংক্রান্ত সরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা শনিবার (৩০ জুলাই) দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস জঙ্গল সলিমপুরে সরকারি জমি দখলমুক্ত করার, অবৈধভাবে পাহাড় কাটা বন্ধ করতে নির্দেশনা দেন। সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্যরোধ করতে র‌্যাব-পুলিশকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব। তাঁর নির্দেশের পর র‌্যাব’র দ্রুততম সময়ে অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করার প্রতিশ্রুতি দেন র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. ইউসুফ। জঙ্গল সলিমপুরের পুলিশ ক্যাম্পও জনবল বাড়িয়ে পরিধি বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ প্রশাসনও। জঙ্গল সলিমপুরে স্পোর্টস ভিলেজ, হাট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল, সাফারি পার্ক, ইকো পার্কসহ বিনোদনকেন্দ্র, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার, উচ্চক্ষমতার বেতার সম্প্রচারকেন্দ্র, পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির কার্যালয় ও প্রশিক্ষণ, কাস্টমস ডাম্পিং হাউস, সবুজ শিল্প এলাকা, চট্টগ্রাম সেনানিবাস ও বিএমএ এবং আনসার ভিডিপি প্রশিক্ষণকেন্দ্র, ভূমিহীনদের পুনর্বাসন করতে ইতিমধ্যেই জায়গা বরাদ্দ চেয়ে জেলা প্রশাসনে কাছে চিঠি দিয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এছাড়া সেখানে জমি অধিগ্রহণ ছাড়াই সরকারি খাস জমিতে সরকারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে। এতে প্রকল্প ব্যয় অনেকাংশে কমে আসবে। এছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগরী, চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমান বন্দর হতে সহজেই যোগাযোগ সুবিধা রয়েছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ-প্রতিবেশ অক্ষুন্ন রেখে পরিকল্পিত উপায়ে সবুজায়ন ও বনায়ন করা সম্ভব হবে। এতে মহানগরীর উপর চাপও কমে আসবে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, জঙ্গল সলিমপুরে সরকারের যে মহাপরিকল্পনাটি গ্রহণ করা হয়েছে সেটির একটি মাষ্টার প্ল্যান আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। পরিবেশ অক্ষুন্ন রেখে চট্টগ্রামবাসীর জন্য চমৎকার একটি জায়গায় যাতে আমরা করতে পারি সেই সহযোগিতা কামনা করছি। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে ৩ হাজার ১০০ একর খাস জায়গা রয়েছে। এই ৩ হাজার ১০০ একর খাস জায়গা বিভিন্ন ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীরা দীর্ঘ দিন ধরে পাহাড় দখল এবং পাহাড় কেটে বসতি স্থাপনের করছে। তারই আলোকে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহম্মদ নাজমুল আহসান বলেন, এখানে সবুজায়ন পাহাড় ছিল। মানুষের বসতি ছিল না। ২০০০ সালের পর থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে অপরাধীরা এখানে আশ্রয় নেয়। তাদের নেতৃত্বে পাহাড় কেটে বসতি গড়ে তোলা হয়। প্রায় ৪শ একর পাহাড় কেটে ন্যাড়া করে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে ২৪ হাজার পরিবারের লক্ষাধিক লোকের বসবাস রয়েছে। তিনি বলেন, জঙ্গল সলিমপুর দেশের অভ্যন্তরে আরেক সাম্রাজ্য। আলীনগরে প্রবেশ করতে পরিচয়পত্র দেখাতে হয়। কোন এন্ড্রয়েট মোবাইল নেওয়া যায় না। প্রবেশমুখে সোর্স থাকে। অপরিচিত লোক ঢুকলে ভেতরের লোকজনদের জানিয়ে দেওয়া হয়। পরে ভেতরে থাকা লোকজন মহিলাদের অগ্রভাগে দিয়ে ভেতরে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। ২০১৭ সালে এবং ২০১৯ সালে উচ্ছেদে গেলে বাধার মুখে পড়ে প্রশাসন। এমনকি ১৪ মে প্রধানমন্ত্রী মুখ্যসচিবের সলিমপুর পরিদর্শনের সময় একইভাবে মহিলাদের দিয়ে মানববন্ধন সৃষ্টি করা হয়। এখানে ২০০৭ সালের পর থেকে বেশি দখল হয়েছে। # ৩১/০৭/২০২২ চট্টগ্রাম #