চলমান সংবাদ

শিক্ষক হত্যা ও শিক্ষককে লাঞ্চিত করার প্রতিবাদে সমাবেশে বক্তারা

-‘সাম্প্রদায়িক বর্বরতার অবসান চাই, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই’

শিক্ষক হত্যা ও শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে নগরের চেরাগি পাহাড় মোড়ে মানববন্ধন করেছে সর্বস্তরের সংস্কৃতিকর্মী ও সচেতন নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রাম। মানববন্ধন থেকে সাম্প্রদায়িক বর্বরতার অবসান এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। বুধবার (২৯ জুন) বিকেলে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। গত ২৭ জুন একজন উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থীর আঘাতে সাভারের আশুলিয়ায় কলেজ শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, খেলাঘরের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, কমিউনিস্ট পার্টি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি অধ্যাপক অশোক সাহা, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি-বাকবিশিস কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর, কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল, নাট্যকার প্রদীপ দেওয়ানজী, অধ্যক্ষ ড. আনোয়ারা আলম, উদীচী চট্টগ্রামে সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপত শীলা দাশগুপ্তা, গণজাগরণ মঞ্চ চট্টগ্রামের সমন্বয়কারী শরীফ চৌহান, আবৃত্তিকার রাশেদ হাসান, কবি-অনুবাদক আলম খোরশেদ, অধ্যাপক কাঞ্চন চক্রবর্তী, চবি নাট্যকল বিভাগের অধ্যাপক অসীম দাশ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ চৌধুরী, আবৃত্তি শিল্পী দেবাশীষ রুদ্র, চবি নাট্যকলার শিক্ষক মোস্তফা কামাল যাত্রা প্রমুখ। কবি সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, একের পর এক সাম্প্রদায়িক সহিংস ঘটনার বিচার না হওয়ায় এই ধরনের ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। রাজনৈতিক সামাজিক অবক্ষয় সাম্প্রদায়িকতাকে আরো উসকে দিচ্ছে। সমাজের অভ্যন্তরে সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা বিস্তার লাভ করেছে। ধর্মভিত্তিক দলগুলো এতে ভর করে আগাচ্ছে। একাত্তরের চেতনার বাংলাদেশকে গড়তে হলে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সিপিবি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি অশোক সাহা বলেন, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল করার সুযোগ দিল জিয়াউর রহমান। তারই হাত ধরে দেশে রগ কাটার রাজনীতি এলো। জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দর্শনে আজও দেশ চলছে। এ থেকে বের হবার সাহস কারো হলো না। ধর্মে ধর্মে বিভেদ লাগিয়ে মানুষের মধ্যে দ্বন্ধ বাড়ানো হচ্ছে। সাম্প্রদায়িকতা, নারী বিদ্বেষ, জাতি বিদ্বেষ দিন দিন এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী। সংঘবদ্ধ প্রতিবাদ না হলে এমন ঘটনা আরো ঘটবে। বঙ্গবন্ধুর হত্যার আগে যে রাষ্ট্রনীতি ছিল আমরা সে বাংলাদেশ চাই। প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, দেশে কয়েক দশক ধরে যে সংস্কৃতির চর্চা হচ্ছে তাতে এ ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। যখন সাম্প্রদায়িক শক্তির বিচরণ অবাধ করা হলো, পাঠ্যক্রম তাদের কথা বদলানো হলো আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসা কেন্দ্রে পরিণত করা হলো তখন এমনটাই স্বাভাবিক। অথচ এরজন্য মানুষ ৭১’এ প্রাণ দেয়নি। যদি দুর্বৃত্তকে লালন করেন তাহলে মানুষ লড়াইয়ে নামবে। দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, অত্যন্ত লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে আজ এখানে দাঁড়াতে হচ্ছে। শিক্ষকরা হলো আদর্শ। নারায়নগঞ্জ, নড়াইল, সাভাবে আমাদের নেতাকর্মীরা কি করছিল? পুলিশ বলে তারা কিছু করতে পারেনি! সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প যারা ছড়াচ্ছে তাদের চিহ্নিত করার সময় এসেছে। সাম্প্রদায়িকতার মূল উৎপাটন করতে হবে। শুধু বিচার করলে হবে না। শিক্ষামন্ত্রীর একটি বিবৃতি চাই এ বিষয়ে। সাম্প্রদায়িক করাল শক্তি উপমহাদেশে থাবা ফেলেছে। আমাদের গ্রাস করতে চায়। তাদের উচিত শিক্ষা দিতে হবে মামুনুল হকের মত। অধ্যাপক মো জাহাঙ্গীর বলেন, প্রশাসন ও পুলিশের দুই সর্বোচ্চ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে সেদিন ঘটনা ঘটেছে। কারা আজ দেশকে এ পরিস্থিতিতে নিয়ে এসেছি? সবাই এমন ভাব করছে যেন কিছু ঘটেনি। ক্ষমতার ভাগের জন্য সবাই ঘুরছেন কিন্তু সঠিক পরিস্থিতি কেউ তুলে ধরছে না। একজন শিক্ষক কেন খুন হয়ে গেলেন। শিক্ষকদের একটা বিরাট অংশেরও কোনো সাড়া নেই। ঢাবি শিক্ষক সমিতি বিবৃতি দিলেন ১১ দিন পর। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা যদি মনে করেন আপনারা দূরে বাকিরা নির্যাতিত হচ্ছে তা ভাবলে চলবে না। তিনি বলেন, সমস্ত শিক্ষা ব্যবস্থাকে একটা কঠিন অবস্থায় এনে দাঁড় করিয়েছেন। পাঠ্যক্রম পাল্টানো হলো। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাদের স্বীকৃতি দিলেন যারা এসএসসি, এইচএসসি, স্নাতক কিছুই পাসস করেনি। দেশটাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন। সাম্প্রদায়িকতা ও দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে কঠিন কর্মসূচি দিতে হবে। কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল বলেন, রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণার পর থেকে বাকিরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। এরপর থেকে সেই ধারা আর থামেনি। এই আওয়ামী লীগ কি মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছিল? মূল কথা রাষ্ট্র রাজনীতি থেকে ধর্মকে বিযুক্ত করতে হবে। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি কেউ করতে যেন না পারে। ধর্মীয় উন্মাদনা বন্ধ করতে হবে। প্রকাশ্যে সত্য কথা বলতে হবে।
# ২৯.০৬.২০২২ চট্টগ্রাম #