চলমান সংবাদ

জীবাশ্ম জ্বালানিতে খুব দ্রুত সব ধরনের বিনিয়োগ বন্ধ করতে চট্টগ্রামে ক্লিন ও সংশপ্তকের উদ্যোগে এক র‌্যালি অনুষ্ঠিত

জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ করতে এশিয়ার কোম্পানিগুলোর উপর চাপ বাড়িয়ে দিল পরিবেশ আন্দোলনকারীরা। জীবাশ্ম-জ্বালানিতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চারটি প্রতিষ্ঠানকে তাৎক্ষনিকভাবে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ করতে বলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ক্লিন আজকে চট্টগ্রামে একটি র‍্যালির আয়োজন করেছে।

এসএমবিসি গ্রুপ মে ২০২১-এ ঘোষণা করেছে যে এটা নতুন কোন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বা বৃদ্ধিকরণে আর সহায়তা করবে না। তার পরের আগস্টে, এটা ২০৫০ সালের মধ্যে নেট-জিরো লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের একটা পলিসি ঘোষণা করেছে। অক্টোবরে এটা দি নেট জিরো ব্যাংকিং এলাইএন্সের সদস্য হয়েছে। তা সত্ত্বেও তারা ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে তেল, গ্যাস এবং কয়লায় বিনিয়োগে ১০৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ করেছে যা তাদের ২০৫০ এর মধ্যে নেট-জিরো এমিসনের লক্ষ্যমাত্রার জন্য ঋণ এবং বিনিয়োগ নীতির বিরুদ্ধে যায়। এটা জাপানে এবং জাপানের বাইরে তেল এবং গ্যাসের প্রজেক্টগুলোকে সহায়তা চালিয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে গুরুতর প্রজেক্টগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে দি ইস্ট আফ্রিকান ক্রুড অয়েল পাইপলাইন (ইএসিওপি) যাতে ফরাসি জায়ান্ট কোম্পানি টোটাল এনার্জির উপদেশদাতা হিশেবে এবং প্রজেক্টের ঋণ সংগ্রাহক হিসেবে এসএমবিসি সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছে।

ক্লিনের প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী বলেন, “আমরা পরিবেশ নিয়ে একটি জরুরি অবস্থার মধ্যে আছি এখন। আমরা এসএমবিসিসহ এশিয়ার অন্যান্য  কোম্পানিগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানিতে খুব দ্রুত সব ধরনের বিনিয়োগ বন্ধ করতে আহ্বান করছি। এখুনি সব কয়লা, গ্যাস এবং তেলের বিনিয়োগ বন্ধ করতে পদক্ষেপ নিন। বিশ্ব আপনাদেরকে দেখছে। আমরা এখন কোন নতুন জীবাশ্ম জ্বালানির প্রজেক্ট নিতে পারি না এবং সকল বিদ্যমান প্রজেক্টগুলোকে অবশ্যই শেষ করতে হবে যদি আমরা বৈশ্বিক উষ্ণতাকে সম্ভাব্য সর্বনিম্ন পর্যায়ে দেখতে চাই।” তিনি আরও বলেন, “আমরা এসএমবিসি ও অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে পৃথিবী ও পৃথিবীর বাসিন্দানের কথা মাথায় রেখে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমদের পৃথিবী এখন একটা জলবায়ু বিপর্যয়ের মধ্যে আছে যার জন্য প্রয়োজন তাৎক্ষনিকভাবে এবং দ্রুত বৈশ্বিক পর্যায়ে জীবাশ্ম-জ্বালানির উৎপাদন কমানো।”

 

চট্টগ্রামের অবস্থিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সংশপ্তক এর লিটন চৌধুরী বলেন, “এই পৃথিবীতে থেকে এইভাবে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ করা যা দেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক। তারাও তো এই পৃথিবীরই বাসিন্দা। এমনতো না যে তাদের কাজের জন্য যদি একটা বড় বিপর্যয় আসে তারা মঙ্গলগ্রহে যেয়ে আশ্রয় নেবে; তাদেরও সেই বিপর্যয়ের ফল ভোগ করতে হবে। তাই তারা যদি অন্যদের ব্যাপারে নাও চিন্তা করে, অন্তত তাদের নিজেদের স্বার্থ বা তাদের সন্তানদের স্বার্থ বিবেচনা করে হলেও তাদের উচিত খুব দ্রুত কোন রকম অজুহাত না দেখিয়ে বা আইনের কোন ফাঁকফোকরের ফায়দা না নিয়ে সম্পূর্ণভাবে জীবাশ্ম জ্বালানির বিনিয়োগ থেকে বের হয়ে আসা। আমি আমাদের সরকার এবং জাপান সরকারকেও আহ্বান করছি জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে।”

বৈশ্বিক কয়লা বিষয়ক ডেটাবেস (জিসিইএল) দেখায় যে জানুয়ারি ২০১৯ এবং নভেম্বর ২০২১ সালের মধ্যে ৩৭৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংক কয়লা ইন্ডাস্ট্রিতে ৩৬৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ দিয়েছে, এর মধ্যে শুধুমাত্র ১২টি ব্যাংক-ই সম্পূর্ণ ঋণের ৪৮ শতাংশ দিয়েছে। সর্বোচ্চ ৫ টি ঋণ দাতাদের মধ্যে ৩ টি-ই জাপানি ব্যাংক। জাপানি ব্যাংক গুলো হচ্ছে মিঝুহো ফাইনেন্সিয়াল, মিতসুবিসি ইউএফজে ফাইনেন্সিয়াল এবং এসএমবিসি। আর দুটি হচ্ছে ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান বার্‌কলেইজ এবং মার্কিন প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপ।

এছাড়াও র‌্যালিতে অন্যান্য এর মধ্যে অংশগ্রহন করেন, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক বিদ্যুৎ  কান্তি নাথ, স্বপ্নিল  ব্রাইট বাংলাদেশ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মোঃ আলী সিকদার , শ্রমিক নারী নেত্রী বাপ্বি দেব বর্মন, সংশপ্তক এর ডেপুটি ডিরেক্টর অগ্রদূত দাশগুপ্ত সহ বিভিন্ন পেশার সাধারন জনগন।