চলমান সংবাদ

হালদায় তৃতীয়বারের মতো ডিম ছেড়েছে মা মাছ

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র চট্টগ্রামের হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছেড়েছে। এ বছর এই নদীতে তৃতীয়বারের মতো ডিম ছেড়েছে কার্প জাতীয় রুই, কাতলা, মৃগেলের মা মাছ। বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) দিবাগত রাত ২টার পর থেকে নদীর কয়েকটি স্থানে ডিম ছাড়তে শুরু করে মা মাছ। তবে সে সময় নৌকার সংখ্যা কম ছিল। শুক্রবার (১৭ জুন) সকাল থেকে ২ শতাধিক ডিম সংগ্রহকারীরা নৌকা ও জাল নিয়ে নেমে পড়েন ডিম সংগ্রহে। ডিমের পরিমাণ কম থাকলেও অনবরত বৃষ্টি থাকলে ভালো ডিম পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী বলেন, গভীর রাতে নদীতে মা মাছ ডিম ছেড়েছে। আপস্ট্রিমে সংগ্রহকারীরা ডিম পেলেও ডাউনস্ট্রিমে তেমন ডিম মেলেনি। এখনও নদীতে সংগ্রহকারীরা আছেন। যারা রাতে ও ভোরে ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছেন তারা ডিম নিয়ে হ্যাচারিতে গেছেন। আরও কিছু ডিম মিলতে পারে বলে আশা করছেন হালদা পাড়ের মানুষ। হ্যাচারিগুলোও প্রস্তুত আছে। হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, হালদা নদীতে এই বছর তৃতীয়বারের মতো মা মাছ ডিম ছেড়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে বজ্রসহ বৃষ্টির মধ্যে জোয়ার শুরু হয়। রাত ২টার পর বিক্ষিপ্তভাবে ডিম সংগ্রহ করছেন সংগ্রহকারীরা। এখনও ডিম সংগ্রহের কাজ চলছে। মা মাছ ডিম ছাড়লেও তা আশানুরূপ নয়। রাত ২টা থেকে যারা ডিম সংগ্রহ করছেন তারা মোটামুটি ভালো পরিমাণে ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছেন। রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশ মাছের কিছু ডিম সংগ্রহ করেছেন। রাতে জোয়ারের সময় ডিমের পরিমাণ বেশি থাকলেও এখন ভাটায় তেমন ডিম মিলছে না। তিনি বলেন, ডিমের পরিমাণ কম হলেও যদি এমন লাগাতার বৃষ্টি থাকে তাহলে ভালো পরিমাণে ডিম পাওয়ার আশা করতে পারি। এই দফায় সব মিলিয়ে আগের দুবারের চেয়ে বেশি ডিম মিলতে পারে বলে আশাকরি। এখন মৌসুমের শেষ সময়। ভারি বৃষ্টি হলেই মা মাছ ডিম ছেড়ে দেবে। এবারের পাঁচটি জো শেষ হলো। আগামী ২৩ থেকে ৩০ জুন শেষ জো। তখনও ডিম ছাড়তে পারে। তিনি আরও বলেন, রাতে ডিম সংগ্রহকারীর নৌকা কম ছিল যার কারণে ডিম সংগ্রহ করা যায়নি। তবে এসময় যারা নদীতে ছিল তারা ভালো পরিমাণে ডিম সংগ্রহ করেছেন। কি পরিমাণ ডিম সংগ্রহ হয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, শুক্রবার (১৭ জুন) সকাল থেকে ৩ শতাধিক নৌকা নিয়ে জেলেরা ডিম সংগ্রহ করতে নেমেছেন। এখনো ডিম সংগ্রহের কাজ চলছে। পরিপূর্ণ হিসাব করতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। এর আগে পর্যাপ্ত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল ছাড়াই হালদা নদীতে গত ১৬ মে দুই দফায় ডিম ছেড়েছিল মা মাছ। গত ১৬ মে ভোরে প্রথম দফায় এবং সেদিন রাতে দ্বিতীয় দফায় ডিম ছাড়ে মা মাছ। তবে ওইসময় সংগ্রহ করা ডিমের পরিমাণও ছিল খুবই কম। জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাবে প্রথম দুই দফায় ৩২০০ কেজির মত ডিম মিলেছিল। বছরের এই সময়ে (এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুন পর্যন্ত) বজ্রসহ বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢল নামলে অমাবস্যা বা পূর্ণিমা তিথিতে নদীতে জোয়ার ও ভাটার সময়ে নিষিক্ত ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় মাছ। সেই নিষিক্ত ডিম জাল দিয়ে নদী থেকে সংগ্রহ করেন ডিম সংগ্রহকারীরা। পরে হ্যাচারিতে রেনু তৈরি করা হয়। ডিম ছাড়ার অল্প সময়ের মধ্যেই তা সংগ্রহ করতে হয়। তাই মা মাছের ডিম ছাড়ার অপেক্ষায় নদীতে নৌকা নিয়ে অবস্থান নেন ডিম সংগ্রহকারীরা। কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে হালদা নদীর মোহনাস্থল চট্টগ্রামের মদুনাঘাট থেকে সমিতির হাট পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার অংশে হাটাহাজারী ও রাউজান উপজেলা সংলগ্ন অংশেই পাওয় যায় মা মাছের নিষিক্ত ডিম।

# ১৮.০৬.২০২২ চট্টগ্রাম #