চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামের মেয়রের ঘরেও হাঁটুপানি

-সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা ও মেগাপ্রকল্পের ধীরগতিতে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগে নগরবাসী

বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই টানা দুইদিনের বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে নিচু এলাকায় বসবাসরত এবং অফিসগামী লোকজনকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

এদিকে টানা দুদিনের বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার মধ্যে সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীর বাড়িতেও পানি ঢুকেছে। শনিবার সকালে নগরীর বহদ্দারহাটের বহদ্দার বাড়ি এলাকা ও মেয়রের বাড়ি সংলগ্ন মূল সড়ক থেকে বাড়ির ভেতর পর্যন্ত জলাবদ্ধতা দেখা যায়।

বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার এই দুর্ভোগের জন্য নগরের সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা ও খামখেয়ালিপনাকে দুষছেন নগরবাসী। নগরবাসীর অভিযোগ, জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের ধীরগতি ও নানা অসঙ্গতির কারণে বছরের পর বছর জলাবদ্ধতার দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। এই মেগা প্রকল্পের আওতায় খালে দেয়া বাঁধ অপসারণ না করা এবং বিভিন্ন নালা-নর্দমা ময়লা-আবর্জনা ভর্তি থাকায় বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের সুযোগ পাচ্ছে না। তাই অল্প বৃষ্টিতেই পানি জমে যাচ্ছে নি¤œাঞ্চলের মূল সড়কে।

সিটি মেয়র রেজাউল করিম বলেন, “আমাদের এলাকায় পানি উঠেছে। এমনকি আমার বাড়ির উঠানে এবং ঘরের ভেতরও এক হাঁটু পানি। পানি ডিঙিয়েই দুপুরে বাড়ি থেকে বেরিয়েছি। জলাবদ্ধ কয়েকটি এলাকায় গিয়েছি। পাহাড় ধসের পর ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ দেখতে গিয়েছি। জলাবদ্ধতার বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, “আমরা বারবার খাল থেকে বাঁধ অপসারণের জন্য বলেছি। মাটি যতক্ষণ খালে থাকবে ততক্ষণ পানি সরতে পারবে না। আবার কাজ শেষ না করে বাঁধ সরালেও সমস্যা। কারণ ২ মাস পর আবার সেখানে কাজ শুরু হবে।

তিনি বলেন, “পুরো কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই সমস্যা থাকবে। তা ছাড়া প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাতও হয়েছে। আর পাহাড় কাটা মাটি ও আবর্জনা জমে অনেক পরিষ্কার করা খাল নালাও ভরাট হয়ে পানি চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে।”

আমবাগান আবহাওয়া অফিস শনিবার বেলা ৩টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে ১৭২ দশমিক ৫ মিলিমিটার। তার আগে বেলা ১২টা পর্যন্ত ছিল ২০৪ দশমিক ৫ মিলিমিটার। যদিও বন্দর নগরীতে অন্য সময় ৫০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হলেই বিভিন্ন নিচু এলাকা ডুবে যায়।

শনিবার (১৮ জুন) নগরের নিচু এলাকা মরাদপুর, বহদ্দারহাট, ষোলশহর ২ নম্বর গেইট, কাতালগঞ্জ, শুলকবহর, বাদুরতলা, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, পাঁচলাইশ, আগ্রাবাদ, হালিশহর এলাকায় রাস্তায় পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। পর্যাপ্ত যানবাহন না থাকায় রিকশায় অথবা পায়ে হেঁটে হাঁটু পানি মাড়িয়ে যাত্রা করতে হয়েছে কর্মস্থলে। শনিবার সকালে নগরীর চট্টেশ্বরী রোডে একটি সীমানা দেয়াল ধসে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে সিটি কর্পোরেশনের কর্মীরা দেয়ালের ভাঙ্গা অংশ সরিয়ে নেয়। শুক্রবার (১৭ জুন) ভোর থেকে চট্টগ্রাম নগরী এবং আশপাশের এলাকায় বৃষ্টিপাত শুরু হয়। যা শনিবার সকাল থেকেও থেমে থেমে অব্যাহত তাকে। কখনো হালকা, কখনো আবার টানা ভারী বৃষ্টিপাত হয়।

চসিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও জলাবদ্ধতা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মোবারক আলী বলেন, ‘কয়েকটি এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়েছিল। তবে বৃষ্টি থেমে যাবার পর পানিও নেমে গেছে। কিন্তু জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজের আওতায় কয়েকটি খাল ও ড্রেনে বাঁধের কারণে পানি নামতে পারছিল না। এরকম পাঁচটি স্পট থেকে আমরা বাঁধ কেটে দিয়েছি। নাসিরখাল, টেক্সটাইল, মাইজপাড়া, এক কিলোমিটার, বিজয়নগর এলাকায় ড্রেন থেকে বাঁধ সরিয়ে আমরা পানি চলাচল স্বাভাবিক করেছি।’
নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের আহবায়ক প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের জন্য খালগুলোতে বাঁধ দেয়া হয়েছে। এই বাঁধ সরানো হয়নি। জোয়ারের পানি প্রবেশরোধে রেগুলেটর বসানো কথা ছিল। কিন্তু এখনো তা হয়নি। এছাড়া নালা-নর্দমা আবর্জনামুক্ত না হওয়ায় বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এসব কারণেই চট্টগ্রামে অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।

এদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার জন্য কন্ট্রোল রুম খুলেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। শনিবার (১৮ জুন) টাইগারপাসে নগর ভবনের কনফারেন্স রুমে এ কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চসিকের কর্মকর্তারা। কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগের নম্বর হলো ০১৭১৭-১১৭৯১৩ অথবা ০১৮১৮-৯০৬০৩৮। চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে নগরীর কোথাও কোনো ধরনের মানবিক বিপর্যয় ঘটলে চসিকের কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি প্রকল্পের কাজ চলছে। তবে প্রকল্পগুলোর কাজের অগ্রগতি নেই।

# ১৮।০৬।২০২২ চট্টগ্রাম #