মতামত

বি এম কন্টেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ প্রসঙ্গে

– ফজলুল কবির মিন্টু

বিগত ৪ জুন দিবাগত রাতে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়িতে অবস্থিত বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ক্যামিকেল ভর্তি কন্টেইনার বিস্ফোরিত হয়ে ৯ জন দমকল বাহিনীর কর্মীসহ অর্ধশতাধিক শ্রমিক নিহত হয়েছে্ন এবং ৪ শতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন। এখনো বেশ কিছু শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন। বিস্ফোরনের ভয়াবহতা এত তীব্র ছিল যে, নিহত অনেকের শরীর ছিন্ন-ভিন্ন হয়েছে। অনেকের মুখ মণ্ডল বিকৃত হয়ে গেছে। ফলে নিহতদের অনেকের লাশ তাদের আত্মীয় স্বজনের নিকট হস্তান্তর করা সম্ভব হয়নি। এরচেয়ে চরম বঞ্চনা আর কী হতে পারে? এ যেন চট্টগ্রামের কেটিএস গার্মেন্টস, তাজরীন ফ্যাশনে আগুন, রানা প্লাজা ধ্বস, হাসেম ফুডস এর মালিকানাধীন সেজান জুস কারখানায় আগুনে শ্রমিক নিহতের ধারাবাহিক ঘটনা। বিগত বছরের ৮ জুলাই  নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জে সেজান জুস কারখানায় আগুনে ৫২ জন শ্রমিক নিহতের পর মালিক হাসেম সাহেব কোন রাখঢাক না করেই বলেই ফেলেছিলেন, কারখানা থাকলেতো দুর্ঘটনা ঘটবেই এবং দুর্ঘটনা ঘটলে শ্রমিক মারা যাবে। অর্থাৎ সেজান জুসের মালিকের বক্তব্যে একটা বিষয় পরিস্কার হয়েছে কলকারখানায় বা কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যু যেন খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।

বাংলাদেশে এযাবৎকালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় দায়ী মালিক কিংবা সংশ্লিষ্ট সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তা কারো বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হয় নাই। শুধু তাই নয় এ সকল ঘটনা সমূহের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলেও প্রশাসন তাতে বাধা দেয়। বিগত ২ জুন ১ জন জাহাজ ভাঙ্গা শ্রমিক নিহতের প্রতিবাদে আমরা প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করতে চাইলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। বিএম কন্টেইনার ডিপোতে বিস্ফোণে শ্রমিক হতাহতের প্রতিবাদে আমরা বিগত ৮ জুন প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করতে চাইলে পুলিশ তাতেও বাধা প্রদান করে।  অর্থাৎ প্রশাসন দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাতো নিচ্ছেইনা এমনকি প্রতিবাদ করতে চাইলে তাতেও বাধা দিচ্ছে। এতে রাষ্ট্রের শ্রেণি চরিত্র উম্মোচিত হচ্ছে এবং রাষ্ট্রের অবস্থান যে ব্যবসায়ী-ধনিক শ্রেণি এবং দুর্নীতিবাজ সরকারী কর্মকর্তাদের পক্ষে তা পরিস্কার করেছে।

সম্প্রতি বিএম কন্টেইনার ডিপোর ঘটনায় মালিকপক্ষকে বাদ দিয়ে ৮ জন ডিপো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পুলিশ কর্তৃক মামলা দায়েরের ঘটনায় প্রহসনের ষোল কলা পূর্ণ করা হয়েছে।

বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদ হতে জানা যায়, কন্টেইনারে ক্যামিকেল রাখার বিষয়টি ডিপো কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ফায়ার সার্ভিসের অগ্নি নির্বাপক দলকেও জানানো হয়নি। যার ফলশ্রুতিতে ফায়ার সার্ভিস বিভাগের ৯ জন কর্মী প্রাণ হারান এবং আরও ৩/৪ জন কর্মী আহত ও নিখোঁজ রয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে আগুন নেভাতে গিয়ে এত বেশী সংখ্যক ফায়ার সার্ভিস বিভাগের কর্মী নিহত-আহত বা নিখোঁজ  হয়নি। সুতরাং এটাও এক নজিরবিহীন ঘটনা। শুধুমাত্র তথ্য গোপন করে মালিক পক্ষ যে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন তারজন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিতো দূরের কথা বরং তাদেরকে বাঁচানোর নানা প্রক্রিয়, ফন্দিফিকির আমরা অবলোকন করছি।

এ ধরণের অপচেষ্টা নতুন কিছুই নয়। মালিক বাঁচার জন্য নানা অপচেষ্টা করছে কিন্তু এ অপচেষ্টা প্রশাসনের ছত্র-ছায়ায় হলে  সেটা মহা-মুশকিলে পরনত হয়। এটা খুবই খারাপ লক্ষন। অসহায় গরীব মানুষগুলোকে দুর্বল বা বোকা মনে করার কোন কারন নাই। মার খেতে খেতে একদিন নিশ্চয়ই তাদের পিট দেয়ালে ঠেকে যাবে। তখন তারা যদি ঘুরে দাঁড়ায়- রাষ্ট্রের কর্ণধার, মালিক পক্ষ কারও পিঠের চামড়া থাকবেনা। আমরা এ ধরণের পরিস্থিতি দেখতে চাইনা-কিন্তু রাষ্ট্র যদি নির্বিকার থাকে এটাইতো অনিবার্য।

লেখকঃ সংগঠক, কেন্দ্রীয় কমিটি, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র।