চলমান সংবাদ

দীর্ঘ ১৯ বছর পর চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত, নতুন কমিটি কেন্দ্র থেকে

দীর্ঘ ১৯ বছর পর চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের মতো মহানগরের কমিটিও ঘোষণা করা হয়নি। কেন্দ্র থেকে পরে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সোমবার (৩০ মে) দুপুরে নগরের কিং অব চিটাগং কনভেনশন সেন্টারে মহানগর যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। এর আগে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সম্মেলন উদ্বোধন করেন আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। সংবিধানের বাইরে কোনো নির্বাচন হতে পারবে না। আগামী নির্বাচন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হবে। অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশ- ভারত, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডায় যেভাবে নির্বাচন হয়, সেভাবে নির্বাচন হবে। ইয়াজউদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো আর কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরে আসবে না। কারা আজ আমাদের গণতন্ত্র শেখায় ? বিএনপি? এই বিএনপি ক্যান্টনমেন্টে জন্ম নেওয়া দল। তারা কখনোই গণতান্ত্রিক হতে পারে না।’ বিএনপি-জামায়াত কখনও গণতান্ত্রিক দল হতে পারে না-মন্তব্য করে তিনি বলেন, যাদের নেতা যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী; তাদের উত্তরসূরীরা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করতে চায়। কিন্তু তাদের সে স্বপ্ন কখনোই বাস্তবায়ন হবে না। নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকার নির্বাচিত হবে। স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্রের যদি কেউ সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে থাকে সে হলো জিয়াউর রহমান। জিয়া ছিল পাকিস্তানি। তার মা-বাবার কবর পাকিস্তানে। তার জন্মই পাকিস্তানে। সে-ই সবচেয়ে বেশি দেশের ক্ষতি করেছে। জাতীয় সরকারের তত্ত্বকে ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি এখন বলছে জাতীয় সরকারের কথা। জাতীয় সরকার করতে হলে আগে কথা দেন-নির্বাচনের বাইরে কোনো অগণতান্ত্রিক সরকারের কাছে কখনও ক্ষমতা হস্তান্তর হবে না। আর কোনোদিন অবৈধ শক্তি ক্ষমতায় যেতে পারবে না-সংবিধানে আমরা সেটা রেখেছি। যদি কেউ অবৈধভাবে ক্ষমতা নেয়, নেওয়ার চেষ্টা করে, ষড়যন্ত্র করে কিংবা হুমকি দেয়-তাদের প্রধান শাস্তি হবে মৃত্যুদন্ড। ওদের েেচহারা জনগণের সামনে উন্মোচিত করতে হবে। অপকর্ম করলে মাফ নাই। ফাঁসিতে ঝুলতে হবে। সুতরাং লোভ করো না।’ বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘জাতীয় সরকারের নামে জিয়াউর রহমানের মতো ক্ষমতা দখল করবি- সেটা হবে না। তোরা (বিএনপি) নির্বাচনে আসলে আসবি, না আসলে আসবি না। সত্তরের নির্বাচনে বিপ্লবী দল ন্যাপ প্রার্থী দিল, হঠাৎ কি হল তারা নির্বাচন থেকে সরে গেল, আজ ন্যাপ কোথায় ? ন্যাপের আজ অস্তিত্ব নেই। সুতরাং অস্তিত্ব বাঁচাতে হলে নির্বাচনে আসতে হবে।’ তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কায় দুর্ভিক্ষ হয়েছে। আমরা কখনও শ্রীলঙ্কার মতো হবো না। যতদিন জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকবেন ততদিন জনগণ কষ্টে থাকবে না। আওয়ামী লীগ ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে। তিনি বলেন, দেশে করোনার মহামারি হয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে। তারপরও দেশ সুন্দরভাবে চলছে জননেত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, ‘পরিস্কারভাবে বলছি, আগামী সংসদ নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে। যারা জাতীয় সরকারের কথা বলছে, তারা অসাংবিধানিক পথ খুঁজছে। যেসব সুশীল জাতীয় সরকারের ফর্মুলা দিচ্ছে, তারা অগণতান্ত্রিক সরকারের মন্ত্রী-উপদেষ্টা হওয়ার পথ খুঁজছে। জাতীয় সরকারের স্বপ্ন দিবাস্বপ্ন হয়েই থাকবে। আওয়ামী লীগ সরকার কচুপাতার পানি নয় যে ধাক্কা দিলেই পড়ে যাবে। যারা জাতীয় সরকারের কথা বলছেন তাদের বলব, নিয়মতান্ত্রিক-গণতান্ত্রিক পথ অনুসরণ করুন। আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিন।’ সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল। চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দীন বাচ্চুর সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল। নগর যুবলীগের চার যুগ্ম আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা, ফরিদ মাহমুদ, মাহবুবুল হক সুমন ও দিদারুল আলম অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। সম্মেলন মঞ্চে ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সংসদ সদস্য এম এ লতিফ, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, যুবলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈম, মোহাম্মদ বদিউল আলম, সাংঠনিক সম্পাদক কাজী মাজহারুল ইসলাম, সাইফুর রহমান সোহাগসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা। সম্মেলন স্থলের বাইরের মাঠ চট্টগ্রাম মহানগরীর ৪১ টি প্রশাসনিক ও ২ টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। সবমিলিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। সম্মেলনস্থলে প্রবেশের ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ পালন করা হয়। ডেলিকেট কার্ড ব্যতিত কাউকে ভিতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। নগর যুবলীগের বিদায়ী কমিটির তিন নেতা মহিউদ্দীন বাচ্চু, দেলোয়ার হোসেন খোকা ও ফরিদ মাহমুদ অনুষ্ঠানের মঞ্চেই আওয়ামী লীগের সদস্যপদ পূরণ করেন। আওয়ামী লীগের সদস্য পদ শেখ ফজলুল করিম সেলিম তাদের হাতে তুলে দেন। এর মধ্য দিয়ে তারা যুবলীগ থেকে বিদায়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। প্রসঙ্গত ২০০৩ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে চন্দন ধরকে সভাপতি ও মশিউর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে নগর যুবলীগের কমিটি হয়। সেই কমিটি বিলুপ্ত করে ২০১৩ সালের ৯ জুলাই আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ১০১ সদস্যের কমিটির মেয়াদ ছিল ৯০ দিন। এর মধ্যে সম্মেলন করে নিয়মিত কমিটি করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সেই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হল ৯ বছর পর। # ৩০.০৫.২০২২ চট্টগ্রাম #