শিল্প সাহিত্য

এই বসন্তে পিকেল বল  

–  ইকবাল জুয়েল

পর্ব ২ – জেন
 কয়েকবার নামধরে ডাকবার পরেও জেন’এর   কোনো সাড়া  পাওয়া যাচ্ছেনা।  সবেমাত্র অফিস থেকে বাড়ি ফিরেছে  তার স্বামী জেসেন। কিছুটা আতঙ্কে, কিছুটা অনুশোচনায়, স্থানীয় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ফোন করলো। ১৫ মিনিটেই হাজির এম্বুলেন্স। অ্যাম্বুলেন্স এ থাকা সময়ই কিছুটা চিকিৎসা হয়েছে, তাই জরুরি বিভাগে নেবার কিছুক্ষণের মধ্যেই জেন’এর জ্ঞান ফিরে এসেছে। বালিশে পিঠ দিয়ে উঠে বসেছে।
কাল রাত থেকেই অভিযোগ করছিলো, বুকের ডান দিকে, নিচের থেকে একটা ব্যাথা খুব কষ্ট দিচ্ছিলো।  হঠাৎ ছুরি বসিয়ে দেবার মতো।
– চলো হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে। জেসন বার বার অনুরোধ করার পরেও জেন রাজি হয়নি। ভাবছিলো রাতটা কোনোমতে পার করতে পারলে হলো।  সকালে ডাক্তারকে ফোন করে একটা ব্যবস্থা করে নেয়া যাবে।
ব্যাথা সহ্য করার প্রচন্ড মানসিক শক্তি জেন-এর।  স্বামীর সাথে গতরাতে ৮ টা পর্যন্ত Pickle Ball খেলেছে। টানা তিন ঘন্টা খেলার জন্য, শরীরটা ক্লান্ত হয়ে পড়ে।  কিন্তু শেষের দিকে একটি জোরালো শট মারতে গিয়ে কি যেন হয়ে গেলো। ডান বুকের নিচের দিক থেকে প্রচন্ড মোচড় দিয়ে উঠে আবার থেমে গেলেও, জেন বুঝেছিলো, অবস্থা সুবিধের নয়, অনেকদিন কষ্ট দেবে।
সত্তর এর কাছাকাছি বয়স।  সদা হাস্যময়ী জেন-কে সবাই খুব পছন্দ করে।  ছোটোখাটো হালকা পাতলা শরীর কিন্তু Pickle-Ball এর কোর্টে নামলে অন্যরকম একটি মানুষ। কিছুতেই হার মানতে রাজি নয়।  ছ-ফুট দু’ ইঞ্চি ব্রায়ান কে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ে। আমরা পাশের বেঞ্চে বসে ওর খেলা দেখি, আর শিশুর-আনন্দে উল্লসিত হয়ে পড়ি। হয়তো ভাবছেন বানিয়ে বলছি, হাহাহা। মোটেই না।
Pickle Ball খেলাটির সূচনা হয় ১৯৬৪ সালে।  ওয়াশিংটন স্টেটের এক কংগ্রেসম্যান Joel Pritchard তার ব্যাবসায়ী বন্ধু Bill Bell কে সাথে নিয়ে ব্যাডমিন্টন কোর্টে এর সূচনা করে।  যদিও প্রথম দিকে খেলাটি কিছু মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো, অধুনা খেলাটি খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিশেষ করে, মেট্রো-আটলান্টাতে খেলাটি নিয়ে তুমুল হৈচৈ শুরু হয়েছে। আটলান্টায় লন-টেনিস আর গল্ফ অনেক দিন ধরে অত্তান্ত জনপ্রিয়। প্রায় প্রতিটি পার্কেই একটি টেনিস পার্ক রয়েছে, যেখানে  দুই থেকে আটটি টেনিস কোর্ট রয়েছে। টেনিস এখানকার একটি social-sport।  নিছক আড্ডা দিতেই যেন অনেকে টেনিস ক্লাব গুলোতে যোগ দেয়। মেট্রো-আটলান্টাতে রয়েছে তিনটি অত্তান্ত জনপ্রিয় লীগ। অথচ অনেক দিনের এই জনপ্রিয় খেলাটিকে পিছে ফেলে যে খেলাটি এগিয়ে চলেছে, সেটি হলো এই Pickle Ball।
Pickle Ball-এর নিয়ম কানুন টেবিল-টেনিস আর লন-টেনিস এর একটি মিশ্র খেলা।  তবে ব্যাতিক্রম হলো, নেটের দুই পাশে আছে কিচেন, সেখানে পা দেয়া যাবেনা যদি বল সেখানে পড়ে। অর্থাৎ বল যদি কোর্টের মাঝখানে পরে আর আপনি কিচেনে পা দিন, তাহলে আপনি পয়েন্ট হারাবেন। টেবিল-টেনিসের মতো কোনাকুনি সার্ভিস করতে হবে, তবে লন-টেনিসের মতো যে কেউ শট নিতে পারবে, অর্থাৎ, অল্টারনেট করতে হবেনা। সার্ভার পয়েন্ট পেলে জায়গা বদল করে নেবে। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার হলো, এই খেলাটি যুবক, বৃদ্ধ, নারী পুরুষ সমানে খেলতে পারে।  Pickle ball এমন একটি খেলা যেখানে শারীরিক শক্তির চেয়ে Game-Control অনেক বেশি প্রয়োজন। শট সিলেকশন, প্যাডেল পজিশন, ফুট ওয়ার্ক, গেম-স্ট্রাটেজি, ইত্যাদি আরো মূল্যবান। তবে মজার ব্যাপার হলো, এই খেলাটি শেখা খুব সহজ, তার জন্য বেশী প্রশিক্ষণের দরকার নেই, যেটা টেনিসে সচরাচর দেখা যায়না।
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে আর পুরোপুরি সুস্থ হতে তিন সপ্তাহ পার হয়ে গেলো। এই তিন সপ্তা জেসন একা একা পার্কে এসেছে। খেলার বদলে সে বেচারাকে বন্ধুদের হাজারো প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে। তিন সপ্তাহ পরে জেন কে দেখে আমরা সবাই খুব আনন্দিত। জেন এসেছে! সবাই এগিয়ে এসে ওকে অভিনন্দন জানায়। মিষ্টি একটি হাসি দিয়ে বললো
– হাসপাতালে বসে তোমাদের কথা খুব মনে হচ্ছিলো। ব্রায়ান কোথায়? দেখছি না যে?
– ব্রায়ান গিয়েছে হাসপাতালে, হয়তো তোমাকে সঙ্গে দিতে।
সবাই হো হো করে হাসিতে ফেটে পড়লো।
জেন কিছু বুঝতে না পেরে বোকার মতো তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
– কেন কি হয়েছে ওর?!
             চলবে . . .
(এপ্রিল, ২০২২)