চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আবদুল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা রোববার থেকে শুরু

শত বছরের ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রামের আবদুল জব্বারের বলীখেলা ও তিন দিনের বৈশাখী মেলা শুরু হচ্ছে রোববার থেকে।করোনভাইরাসের সংক্রমণের কারণে দুইবছর বন্ধ থাকার পর এবারের আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা পর অবশেষে ঐতিহ্যবাহী এই বলিখেলা ও বৈশাখী মেলা শুরু হচ্ছে। প্রতিবছর পাঁচদিন মেলার আয়োজন হলেও এবার রমজানের কারণে সময় দুইদিন কমানো হয়েছে। রোববার ভোর থেকে শুরু হওয়া বৈশাখী মেলা চলবে বুধবার ভোর পর্যন্ত। ইতিমধ্যে মেলা শুরুর আগেই দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে গৃহস্থালি ও লোকজ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে আসতে শুরু করেন দোকানিরা। শনিবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে নগরীর কে.সি.দে সড়কে দেখা গেছে, বেশ কয়েকজন দোকান সাজিয়ে বিকিকিনিও শুরু করে দিয়েছেন। স্বল্পসংখ্যক হলেও ক্রেতার আনাগোনাও চোখে পড়েছে। মেলায় এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি এসেছে মাটির তৈরি সরঞ্জাম। মাটির তৈরি ঘর সাজানোর বিভিন্ন ধরনের আসবাব, সৌখিন জিনিসপত্র, শিশুদের খেলনা পুতুল, টাট্টু ঘোড়া নিয়ে বসেছেন দোকানিরা। ঝাড়ু, হাতপাখাসহ দু’য়েকটি গৃহস্থালি সামগ্রীর দোকানও দেখা গেছে। কাঠের তৈরি খাট, আলমিরা, আলনাসহ আরও নানা আসবাবপত্র নিয়েও বসেছেন কয়েকজন দোকানি। করোনার সংক্রমণের কারণে গত দুই বছর বলিখেলা ও মেলা হতে পারেনি। এবার মেলার ১১৩তম আসর হওয়ার কথা থাকলেও বলিখেলার ভেন্যু লালদিঘী মাঠ সংস্কারের কারণে বন্ধ থাকায় এ আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। আয়োজকরা বলিখেলা ও মেলা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী নিজে দায়িত্ব নিয়ে বলিখেলা ও মেলার আয়োজন করেন। আবদুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী বলেন, লালদিঘীর মাঠ বন্ধ থাকায় ১২ বৈশাখ অর্থাৎ ২৫ এপ্রিল সোমবার বিকেল তিনটায় লালদিঘীর পাড়ের গোলচত্বরে সড়কে বলিখেলা অনুষ্ঠিত হবে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর মেলার উদ্বোধন করবেন। মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এতে প্রধান অতিথি থাকবেন। এদিকে নগরীর বলিখেলা ও বৈশাখী মেলাকে কেন্দ্র করে যানজটের আশঙ্কা করছে নগর পুলিশ। যানবাহনের চাপ সামলানে নগর পুলিশের পক্ষ থেকে বেশকিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে কয়েকটি দ্বিমুখী সড়কের একপাশ পুরোপুরি যানবাহনমুক্ত রাখার ঘোষণা এসেছে। শনিবার দুপুরে এক বিজ্ঞপ্তিতে সিএমপি’র ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, লালদীঘি আবদুল জব্বারের বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা উপলক্ষে লোকজনের সমাগম এবং গাড়ি ডাইভারশনের কারণে এ এলাকায় স্বাভাবিকের তুলনায় যানবাহনের চাপ বেশি থাকবে। এলাকার সড়কসমূহে স্বাভাবিক চলাচলকারী যানবাহনের চালক ও যাত্রী সাধারণকে জরুরি প্রয়োজনে এই এলাকার সড়ক এড়িয়ে বিকল্প সড়ক ব্যবহারের জন্য পরার্মশ দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে দেশের যুব সমাজকে সংগঠিত করতে ১৯০৯ সালে বদরপাতির আব্দুল জব্বার সওদাগর নগরীর লালদীঘি মাঠে কুস্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। পরে যা আব্দুল জব্বারের বলী খেলা নামে পরিচিত ও বৈশাখী মেলায় পরিণত হয়। বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে ১২ বৈশাখ জব্বারের বলী খেলা অনুষ্ঠিত হয়। জব্বারের বলীখেলা একটি জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যমন্ডিত প্রতিযোগিতা হিসেবে বিবেচিত। বলীখেলাকে কেন্দ্র করে লালদীঘি ময়দানের আশপাশে প্রায় তিন কিলোমিটারজুড়ে বৈশাখী মেলার আয়োজন হয়। ১২ বৈশাখের দুই-তিন দিন আগে থেকে লালদীঘির মাঠ ও আশপাশের এলাকা নানা গ্রামীন ও হস্ত তৈরি পণ্যে ভরে ওঠে। তিন দিনের মেলা হলেও সপ্তাহব্যাপী নানা পণ্যের পসরা সাজিয়ে চলে বিকিকিনি। বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ এবং একই সঙ্গে বাঙালি যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলা, শক্তিমত্তা প্রদর্শনের মাধ্যমে তাদের মনোবল বাড়ানোর প্রেরণা থেকেই এই বলীখেলার আয়োজন। জব্বার মিয়ার বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা চট্টগ্রামের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও অহংকারে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় লোকজ উৎসব হিসেবে এটিকে চিহ্নিত করা হয়।
# ২৩.০৪.২০২২ চট্টগ্রাম #