চলমান সংবাদ

সেচ ব্যবস্থাপনা ব্যবসার আধিপত্যের জের ধরে প্রকাশ্যে পিটিয়ে-কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় মোরশেদকে, একই পরিবারের গ্রেপ্তার ৫

কৃষিজমিতে সেচ ব্যবস্থাপনা ব্যবসার আধিপত্য বজায় রাখতেই গত ৭ এপ্রিল কক্সবাজারে প্রতিবাদী যুবক মোরশেদকে প্রকাশ্য দিবালোকে নির্মমভাবে পিটিয়ে-কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। হত্যার আগে মারধর সহ্য করতে না পেরে আকুতি জানিয়ে মোরশেদ হত্যাকারীদের বলেছিলেন, ‘এখন বেশি ক্লান্ত লাগছে, একটু পর ইফতার করব। ইফতার পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখো, আমি রোজা ভেঙে মরতে চাই’। কিন্তু হত্যাকারীরা তাকে সে সুযোগ দেয়নি। ঘটনার দিন বাসা থেকে ইফতার সামগ্রী কিনতে বের হওয়া মোরশেদকে অত্যন্ত নৃশংসভাবে রড দিয়ে পিটিয়ে, কিরিচ দিয়ে কুপিয়ে এবং হাতুড়ি দিয়ে অন্ডকোষে আঘাত করে খুন করা হয় মোরশেদকে। মোরশেদ হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে একই পরিবারের পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও ক্যাম্পে র‌্যাব-৭’র অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। শুক্রবার ভোররাতে টেকনাফের এক আত্মীয়’র বাড়ি থেকে আসামিদের গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- কক্সবাজার পিএমখালী ইউনিয়নের মাইজপাড়ার মৃত মনির আহমদ ফকিরের তিন ছেলে মাহমুদুল হক (৫২), নুরুল হক (৫৩) ও মোহাম্মদ আলী (৫০) এবং মাহমুদুলের দুই ছেলে আব্দুল আজিজ (২৮) ও আবদুল্লাহ (৩০)। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ সূত্রে কী কারণে, কিভাবে মোরশেদকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে তা সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন র‌্যাব-৭’র অধিনায়ক। গত ৭ এপ্রিল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে প্রকাশ্য দিবালোকে কক্সবাজার সদর উপজেলার চেরাংঘর এলাকায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মোরশেদ আলী (৪০) নামে এক ব্যক্তিকে খুন করা হয়। স্থানীয়দের ধারণ করা ভিডিওতে মোরশেদের ইফতারির কথা বলে প্রাণভিক্ষার আবেদন ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে এ হত্যাকান্ড নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। এ ঘটনায় মোরশেদের ভাই জাহেদ আলী বাদি হয়ে ২৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। র‌্যাব চট্টগ্রাম জোনের প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ বলেন, কৃষিজমিতে সেচের পানি সরবরাহের ব্যবসা দীর্ঘসময় ধরে মোরশেদের পরিবারের নিয়ন্ত্রণে ছিল। কয়েকবছর আগে প্রভাব দেখিয়ে সেই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নেয় মাহমুদুলের পরিবার। তারা কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করত। মোরশেদ বিদেশে থাকা অবস্থায় এই ব্যবসার হাতবদল হয়। তিনি বিদেশ থেকে ফিরে কৃষকদের কাছ থেকে জোরপূর্বক অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয়টি শুনে প্রতিবাদ করতে থাকেন। তিনি আবারও ব্যবসা তাদের পরিবারের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করলে মাহমুদুল ও তার পরিবারের সদস্যরা ক্ষুব্ধ হন। এর জের ধরে তাকে খুনের সিদ্ধান্ত নেয় মাহমুদুলের পরিবার। র‌্যাব কর্মকর্তা ইউসুফ বলেন, ‘ঘটনার দিন মোরশেদ বাজারে ইফতারি কিনতে যাচ্ছিলেন। প্রকাশ্য দিবালোকে বাজারে দুইদিকের রাস্তা বন্ধ করে তাকে ঘিরে ফেলা হয়। আবদুল্লাহ ও আজিজ লাঠি, লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে তাকে ফেলে দেয়। মাহমুদুল হক কিরিচের কোপ দিয়ে ডান হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। মোহাম্মদ আলী হাতুড়ি দিয়ে অন্ডকোষে উপর্যুপুরি আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। হত্যাকারীরা এতটাই প্রভাবশালী যে, বাজারের লোকজন ঘটনা দেখেও ভয়ে প্রতিরোধ করতে আসেনি। এরপরও মোহাম্মদ আলী ১৫-২০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে বীরদর্পে চলে যায়।’ তিনি বলেন, হত্যাকান্ডের পর পাঁচজন টেকনাফে গিয়ে আত্মগোপন করেন। গ্রেপ্তার করতে আসামিদের ওপর নজরদারি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে র‌্যাব। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব জানতে পারে, উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিতে ঢাকা যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে আসামিরা। অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে কক্সবাজার সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। পরে থানার মাধ্যমে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
# ১৫.০৪.২০২২ চট্টগ্রাম #