চলমান সংবাদ

সংক্ষিপ্ত আয়োজনে চট্টগ্রামে বাংলা নববর্ষ উদযাপন

নানা বিধি-নিষেধের মধ্যে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত পরিসরে বাংলা নতুন বছরকে বরণ করেছে চট্টগ্রামবাসী। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বর্ষবরণের আয়োজনে আরোপ করা হয় নানা বিধি-নিষেধ ও সময় সংক্ষিপ্ততার শর্ত। করোনার কারণে দুই বছর বাংলা বর্ষবরণের আয়োজন না থাকায় চট্টগ্রামবাসী এবার ব্যাপক আয়োজনের আশা করেছিল। কিন্তু নানা বিধি-নিষেধ ও বাধ্য-বাধকতায় ঘেরা সংক্ষিপ্ত আয়োজনে অনেকটা হতাশ হয়েছে চট্টগ্রামের সংস্কৃতিপ্রেমী ও সচেতন মহল। এরপরও বাংলা বর্ষবরণের উচ্ছ্বাসে মেতে উঠে চট্টগ্রামবাসী। নগরের ডিসি হিল, সিআরবির শিরীষতলা, শিল্পকলা একাডেমি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে নতুন বছরকে বরণ করার আয়োজন করা হয়। ১৪ এপ্রিল, পহেলা বৈশাখে সকাল থেকে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’ গানে বরণ করে নেন বাংলা নববর্ষকে। তবে রমজান মাস হওয়ায় এবার বসানো হয়নি কোন মেলা, গ্রহণ করা হয় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিভিন্ন এলাকা সিসিটিভির আওতায় আনা হয়। পুলিশ, র‌্যাবের পাশাপাশি সাদা পোশাকে নিয়োজিত ছিলেন নিরাপত্তা কর্মীরা। বর্ষবরণ উৎসবের সকল আয়োজনও করা হয়েছে সংক্ষিপ্ত। অনুষ্ঠান শেষ করতে হয় দুপুরের মধ্যেই। নগরের ডিসি হিলে সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদ উদ্যোগে বর্ষবরণের আয়োজনে সংগীত ভবন, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, বোধন আবৃত্তি পরিষদ, ওডিসি ড্যান্স মুভমেন্টসহ বিভিন্ন সংগঠন নাচ-গান ও আবৃত্তি পরিবেশন করে। সকাল থেকেই বাঙালি নারীর ঐতিহ্য শাড়ি, পুরুষরা পাঞ্জাবি পড়ে অনুষ্ঠানস্থলে সমবেত হন। এদিকে সিআরবির শিরীষতলায় সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল। অন্যাণ্য বছর সেখানে বলিখেলার আয়োজন করা হলেও এবার তা হয়নি। ভায়োলিনিস্ট চিটাগংয়ের শিল্পীরা সমবেতভাবে বেহালার মূর্ছনায় শুরু হয় নববর্ষের আয়োজন। ‘এসো হে বৈশাখ’ গানের সুরে সুরে শুরু হয় বাংলা নববর্ষ আবাহন। এরপর সংগীত ভবন, সুরাঙ্গন বিদ্যাপীঠ, উদীচী, প্রমা আবৃত্তি সংগঠন, বোধন আবৃত্তি পরিষদ, অদিতি সংগীত নিকেতন, সৃজামি, রাগেশ্রীসহ বিভিন্ন সংগঠন সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেয়। এছাড়া চবি চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে সকাল ১০টায় মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। রমজান মাসের কারণে মঙ্গল শোভাযাত্রার রুট সংক্ষিপ্ত করা হয়। চারুকলা অনুষদে এবারের আয়োজন চিত্রশিল্পী রশিদ চৌধুরীকে উৎসর্গ করা হয়। সেই প্রেক্ষিতে চিত্রশিল্পী রশিদ চৌধুরীর স্লোগান ‘শিল্পের প্রয়োজন; বিবেকের জন্য, জীবনের জন্য’কে প্রতিপাদ্য করা হয় এবারের আয়েজন। নানা আয়োজনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) উদযাপন করা হয় বাংলা নববর্ষ-১৪২৯। বৈশাখী শোভাযাত্রা, গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বলীখেলা, মোরগ লড়াই, বউচি খেলা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দিনব্যাপী মুখর ছিল চবি ক্যাম্পাস। পহেলা বৈশাখ সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট থেকে একটি শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয় নববর্ষ উদযাপন। দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্মুক্ত মঞ্চে বর্ষবরণ উৎসব শুরু হয় সংগীতের মাধ্যমে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে হয় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বলীখেলা। চবির জারুলতলায় হয় মোরগ লড়াই এবং চাকসু প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় মেয়েদের বউচি খেলা। এছাড়া বর্ষবরণ উৎসবে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

# ১৫.০৪.২০২২ চট্টগ্রাম #