চলমান সংবাদ

মুক্তিযুদ্ধের একটি রক্তাক্ত অধ্যায় মুজাফফরাবাদ গণহত্যা দিবস ৩ মে

১৯৭১ সালের ৩ মে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তাদের এদেশীয় দোসদের সহায়তায় চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার মুজফফারাবাদে হিন্দুঅধ্যুষিত তিন শতাধিক নারী-পুরুষকে নির্বিচারে হত্যা করে। পুড়িয়ে দেয়া ৫ শতাধিক ঘর-বাড়ি, লুটপাট করা হয় শত শত বাড়ি-ঘর। সম্ভ্রম হারায় অনেক মা-বোন। সেই থেকে প্রতিবছর ৩ মে মুজাফফরাবাদ গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর নজিরবিহীন পৈশাচিকতা ও বর্বরতার স্বাক্ষী মুজাফফরাবাদ গণহত্যা মুক্তিযুদ্ধের একটি রক্তাক্ত অধ্যায় হলেও এদিন গণহত্যার শিকার শহীদরা এখনো ইতিহাসে উপেক্ষিত। মুজাফফরাবাদ গ্রামবাসীর জন্য ৩ মে একটি কালোদিন। গ্রামবাসী এখনো ভুলতে পারেনি সেই দুঃসহ স্মৃতি। তাই প্রতিবছর ৩ মে ফিরে এলে স্বজন হারানোর বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠেন মুজাফরাবাদবাসী।

জানা যায়, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে সনাতন ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত মুজাফফরাবাদের ৯৫ শতাংশ ভোটার আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। ৭১’র ২৫ মার্চ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর দমন শুরু হলে চট্টগ্রামের বহু লোক মোজাফফারাবাদে তাদের আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। দেশ মাতৃকাকে পাকিস্তানী শত্রুমুক্ত করতে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া যোদ্ধাদের নানাভাবে সহযোগীতা করায় এবং স্বাধীনতাকামী বাঙালি হিন্দুদের হত্যা করতেই সেইদিন মুজাফফরাবাদে গণহত্যা চালায় পাকিস্তানী বাহিনী।

এবারও মুজাফফরাবাদ গ্রামের নিহত তিন শতাধিক শহীদের স্মরণে আগামী ৩ মে মুজাফরাবাদ সমন্বয় ও বধ্যভূমি সংরক্ষণ পরিষদের উদ্যোগে পটিয়া উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় দিবসটি পালন করা হবে। মুজাফফরাবাদ গণহত্যা দিবস’ পালন উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো মুজাফফরাবাদ গ্রামে দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সকাল ৮টায় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ প্রাঙ্গণে শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধানুষ্ঠান, শহীদ বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও গার্ড অব অনার প্রদান, বিকেলে গণসংগীতানুষ্ঠান, সন্ধ্যায় স্মরণসভা, মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা প্রদান।

এলক্ষ্যে এক প্রস্তুতিমূলক সভা গত ১২ এপ্রিল সন্ধ্যায় স্থানীয় জন্মাষ্টমী পরিষদের হলরুমে উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক বনগোপাল চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন সদস্য সচিব সঞ্জয় চৌধুরী, সাবেক সভাপতি পলাশ দত্ত, প্রদীপ কর, বধ্যভূমি সংরক্ষণ পরিষদের সম্পাদক বিপ্লব সেন, প্রাক্তন সম্পাদক ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্পাদক জয়প্রকাশ দত্ত, যুগ্ম আহ্বায়ক বিপ্লব চৌধুরী ও সুধীর দত্ত এবং টিটন মজুমদার।

সভায় বক্তারা আগামী ৩ মে উদযাপনে গ্রামবাসীসহ সকলের সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার লক্ষ্যে গ্রামের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণে প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষিকবৃন্দের সহযোগিতা কামনা করা হয়।

# ১৫.০৪.২০২২ চট্টগ্রাম #