চলমান সংবাদ

ভারতঃ হিন্দি বলা নিয়ে শাহি ফরমান ও বিরোধ

অমিত শাহ চান বিভিন্ন রাজ্যের মানুষ নিজেদের মধ্যে হিন্দিতে কথা বলুক। প্রতিবাদে সোচ্চার দক্ষিণ ও পূর্ব ভারত।

হিন্দি নিয়ে অমিত শাহের মন্তব্যের জেরে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। হিন্দি নিয়ে অমিত শাহের মন্তব্যের জেরে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে সংসদে একটি সরকারি ভাষা কমিটি আছে। তার ৩৭ তম বৈঠকে অমিত শাহ যা বলেছেন, তা নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। অমিত শাহ সোজাসাপটা বলেছেন, ”প্রধানমন্ত্রী মোদী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সরকার চালানো হবে সরকারি ভাষার মাধ্যমে। তার ফলে হিন্দির গুরুত্ব বাড়বে। সময় এসেছে, সরকারি ভাষাকে দেশের ঐক্যের জন্য ব্যবহার করার।” তিনি বলেছেন, ”বিভিন্ন রাজ্যের মানুষ যখন একে অন্যের সঙ্গে কথা বলবেন, তখন তারা যেন অন্য ভাষায় কথা না বলেন, সরকারি ভাষাতেই কথা বলেন।” অমিত শাহ বলেছেন, ”ইংরাজির বিকল্প হবে হিন্দি, অন্য কোনো স্থানীয় ভাষা নয়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বহু কাজ হিন্দিতে হচ্ছে।”

বিরোধীদের প্রতিবাদ

অমিত শাহ এই মন্তব্য করার পরই অ-হিন্দিভাষী রাজ্যগুলির নেতারা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তামিলনাড়ুর মুখ্যমনত্রী স্ট্যালিন বলেছেন, ”বিজেপি ভারতের বহুত্ববাদী চরিত্র নষ্ট করে দিতে চাইছে।” কর্ণাটকের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা সিদ্ধারামাইয়া বলেছেন, ”হিন্দি কোনোদিনই সরকারি ভাষা ছিল না। আমরা সেটা হতেও দেব না। যখনই জোর করে হিন্দি চাপানোর চেষ্টা হয়েছে, তখন সেটা ভালো হয়নি।”

প্রখ্যাত সুরকার এ আর রহমান একটা ছবি টুইট করেছেন। ছবিটি হলো, থামিঝানানগু বা ‘গডেস তামিল’-এর। তামিল জাতীয় সঙ্গীতের রচনা যিনি করেছিলেন, সেই সুন্দরম পিল্লাইয়ের লেখা থেকে নামটা নেয়া।

তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, ”হিন্দিকে আমরা সম্মান করি। কিন্তু আমরা হিন্দি চাপিয়ে দেয়ার বিরোধী।”

ভারতে হিন্দি চাপিয়ে দেয়া নিয়ে বিতর্ক

ভারতে জোর করে হিন্দি চাপিয়ে দেয়া নিয়ে বিতর্ক বহুদিনের। স্বাধীনতার আগে থেকে এনিয়ে বিতর্ক চলছে। চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারি ১৯৩৭ সালে যখন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে হিন্দি চালু করতে চেয়েছিলেন, তখন প্রবল প্রতিবাদ হয়। ১৯৪০ সালে প্রতিবাদের মুখে সেই সিদ্ধান্ত থেকে প্রশাসন সরে আসে।  এরপর ১৯৬৫ সালে তামিলনাড়ুতে হিন্দি চাপিয়ে দেয়া নিয়ে তীব্র ছাত্রবিক্ষোভ হয়।

সংবিধান সভায় হিন্দিকে জাতীয় ভাষা করা নিয়ে দীর্ঘ বিতর্ক হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়, ইংরাজি ১৫ বছরের জন্য সরকারি ভাষা থাকবে। তবে জওহরলাল নেহরু সরকার আইন করেন যে, ইংরাজি সরকারি ভাষা হিসাবে থাকবে এবং সংসদে ইংরাজিতে জ হবে।

গত পঁচিশ বছর ধরে সংসদে হিন্দি বিতর্ক বারবার উঠেছে। হিন্দিভাষী সাংসদরা দাবি করেছেন, সংসদের কাজ হিন্দিতে করতে হবে। প্রবল প্রতিবাদ করেছেন দক্ষিণ ভারতের সাংসদরা। হিন্দিতে বলা নিয়েও বিতর্ক হয়েছে। সভা পরিচালনার কাজে স্পিকারকে দেখা গেছে হিন্দি ও ইংরাজি দুইটি ভাষার ব্যবহার করতে। সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় স্পিকার থাকাকালীন সিংহভাগ সময় ইংরাজি ব্যবহার করতেন। বর্তমান স্পিকার ওম বিড়লা আবার সিংহভাগ সময় হিন্দিতেই কথা বলেন। আবার সাবেক মন্ত্রী পি চিদাম্বরম সবসময়ই ইংরাজি ব্যবহার করেন।

হিন্দি নিয়ে প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, সঙ্ঘ পরিবারের এজেন্ডাই হলো ‘হিন্দি, হিন্দু, হিন্দুস্তান’। সেই কর্মসূচি রূপায়ণ করতে চাইছেন অমিত শাহরা। কিন্তু অমিত শাহ হিন্দি নিয়ে এই কথা বলার পরই অন্যবারের মতোই প্রবল বিরোধ এসেছে দক্ষিণ ভারত থেকে।

জিএইচ/এসজি (পিটিআই, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ইন্ডিয়া টুডে)