মতামত

আইন মেনেই বলছি

-উত্তর পুরুষ

“আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল শুধাইল না কেহ ।” রবি ঠাকুরের এই গান শুনলে কার না মন ব্যাকুল হয় বলেন তো? হৃদয় নিয়ে শুধু মাত্র এই গান লিখেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ক্ষান্ত হন নাই, তাঁর অসংখ্য গানে এই হৃদয়ের উল্লেখ আছে- আছে হৃদয়ের ব্যাকুলতার কথা। রবি ঠাকুরের কথা না হয় থাক। হৃদয় নিয়ে বাংলার প্রায় সব বাঙ্গালী কবি হৃদয় ছোঁয়া  কবিতা লিখেছেন। এই যেমন ধরেন কবি জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন- হে হৃদয়/ নিস্তব্ধতা?/চারিদিকে মৃত সব অরণ্যেরা বুঝি?/ মাথার ওপরে চাঁদ/ চলছে কেবলি মেঘ কেটে পথ খুঁজে- (হে হৃদয়: জীবনানন্দ দাশ ) । যাকগে, এইসব কবিতার কথা থাক। তবে কবিতার কথা শেষ করা যায় না যদি না আরও দুই একটি কথা না বলি। তা হচ্ছে, হৃদয় ঘটিত ব্যপার স্যাপার তো আছেই। কত কথাই না পত্র পত্রিকায় আসে।

তবে আজ আমি হৃদয়ের গোপন গোলাপ রবে না গোপনে- এই বিষয়ে কিছু বলতে আসি নাই। আমি বলছিলাম স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডলের কথা। আপনারা বলবেন দেখেন ভাই উনার তো জামিন হয়ে গেছে, আর কি বলতে চান আপনি? না বিশেষ কিছুই না। শুধু বলতে চাই এই ধরনের ঘটনার শুরু আজকে শুরু হয় নি। অনেক বছর ধরেই ঘটছে, কখনো আমাদের চোখের সামনে অথবা আড়ালে। ভাবুন তো রামুর ঘটনার কথা, ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়ার নাছির নগরের কথা, সুনামগঞ্জের কথা, কিম্বা দেশের বিভিন্ন স্থানে সরস্বতী পূজায় ঘটনা । এগুলো আমাদের চোখের সামনে ঘটেছে তাই উল্লেখ করলাম। আড়ালেও অনেক ঘটনা ঘটছে যা আমরা জানি না। রাষ্ট্র কি পদক্ষেপ নিয়েছে এই সব ঘটনার নেপথ্য নায়কদের বিরুদ্ধে? আমার তো জানা নেই। যারা আমাদের দেশের সহজ সরল কিশোরদের বিপথে নিয়ে যাচ্ছে তাদের কি কিছু বলেছি? কোন ব্যবস্থা নিয়েছি?

যারা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে বলে মিছিল করেছে, যারা ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িকতা ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কিছু আমরা বলছি। ভাইরে, গোড়ায় যেতে হবে। অসুখের উতপত্তি স্থানে হাত দিতে হবে। না হলে অসুখ সাময়িকভাবে সারলেও আবার হবে। কই এ ভাবে তো আমরা কেউ ভাবি না। আর না ভাবলে যা হবার তাই হবে। টিপ নিয়ে হবে, বিজ্ঞান নিয়ে হবে, পূজা নিয়ে হবে। এবং হতে থাকবে। আমি বলার কে? যারা ক্ষমতায় আছেন আর ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন এই বাঘ আপনাদের খাবে প্রথমে। কথায় বলে না বাঘের পিঠে চড়লে আর নামা যায় না। আসে পাশের দেশ গুলোর দিকে চোখ রাখলে বুঝা যায়।

থাকগে, এই সব বলে কোন লাভ নাই। কে শুনে কার কথা। সবাই নিজের আখের গুছানোয় ব্যস্ত। শ্রীলঙ্কা দেখেন কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে । নেপালের অবস্থা খারাপের দিকে। পকিস্থানের কথা নাই বা বললাম। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী সব দেশেই মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। কোথাও বলছে গোমুত্রের মত উপকারি ওষুধ আর কিছু নাই, কোথাও বলছে ওষুধ খাওয়া যাবে না-এগুলো হারাম। কত কথাই না বলা হচ্ছে । ভাইরে ভাই আমি এইসবের মধ্যে নাই। দেখেন তো আমাদের মাদ্রাসা গুলোতে কি পড়ানো হয় তা কি কেউ জানে? একটা বই দেখলাম মাদ্রাসার ‘ আদর্শ মুসলিম গণিত শিক্ষা। এই বইএর পাতায় যা আছে তা শিখলে তা যে কোন কোমলমতি শিশুর মাথা নষ্ট হয়ে যাবে। কি করবেন বলেন কারও কোন মাথা ব্যাথা নাই।

এই ভাবে চলতে থাকলে হৃদয় মন্ডল কেন সব বিজ্ঞান শিক্ষকের এই অবস্থা হবে। হয়তো একদিন বলা হবে বিজ্ঞান শিক্ষার দরকার নাই। দেশে তালেবানী শাসন কায়েম হলেই চলবে।

ভাই, আমি একটু বেশি বলে ফেললাম। বুঝতে পারছি না, কোনটা বললে আইনের মধ্যে বলা হয়, আর কোনটা না। ঠিক আছে বাদ দেন এই সব কথা। বরং গান শুনি- হৃদয় দেয়া ছলে/ হৃদয় গেছে দলে/আমি তো মরেছি/

পাথর ভালোবেসে ।

এত সব কিছুর মধ্যে ভাল থাকার চেষ্টা করেন সবাই।