চলমান সংবাদ

চট্টগ্রাম নগরীর নালা-খাল, রাস্তা আবর্জনায় ভরপুর

ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে নগরীর খাল, নালা-নর্দমাগুলো। এসব খাল-নালায় পানি নিষ্কাশন প্রক্রিয়া প্রায় বন্ধ। প্রতিদিনের ফেলা আবর্জনায় খাল-নালার প্রায় পুরোটাই ভরে গেছে। সামান্য বৃষ্টিতে এবং জোয়ারের সময় পানি প্রবাহের পথ রুদ্ধ হয়ে নগরীর বড় অংশজুড়েই সৃষ্টি হয় মারাত্মক পানিবদ্ধতা। তবে সেবা সংস্থাসমূহ বলছে, নালা-নর্দমা ও খাল পরিষ্কার করার কয়েকদিনের মধ্যে আবারো ভরাট হয়ে যায়। ভরাটের উপকরণের বেশিরভাগই গৃহস্থালী বর্জ্য, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মালামাল ও পলিথিন। সুন্দর নগরী গড়ে তুলতে নগরবাসীকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। চট্টগ্রামের সিটি মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষন করে নগরীর হেলদি সিটি হিসেবে পরিচিত জামালখান ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট এম এ নাসের সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেসবুক পোস্টে লিখেন, ‘২১ নং জামালখান ওয়ার্ডের হেমসেন লেন ও লিচু বাগান ড্রেনের ২টি ছবি দিলাম মাত্র, বাকি ছোট-বড় সবকটি ড্রেনের একই অবস্থা, আমরা এলাকাবাসী অস্বাস্থ্যকর ও দূষণের সাথে বসবাস করছি। বিগত ৬/৭ বৎসরে চসিক (চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন) ড্রেন পরিস্কারের কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে এমন তথ্য এলাকাবাসীর জানা নেই! ২ বৎসর পূর্বে সিডিএ’কে জলাবদ্ধতা নিরসণ প্রকল্পের আওতায় সামান্য কিছু কাজ করতে দেখেছি মাত্র। পরিবেশ দূষণ রোধ ও মশক নিয়ন্ত্রণে ড্রেনসমূহের মাটি উত্তোলন সরাসরি আপনার সার্বিক তদারকিতে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে সংশ্লিষ্ট করে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।’ নগরীর হেলদি সিটির যদি এই চিত্র হয়, তাহলে নগরীর অন্যান্য এলাকার চিত্র কি হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। এদিকে চট্টগ্রাম নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বেহালদশা লক্ষনীয়। যেখানে-সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে ময়লা-আবর্জনা। সিটি কর্পোরেশন নির্ধারিত ২৬৩টি জায়গায় খোলা ডাস্টবিন রয়েছে। এর বাইরে আরও শতাধিক স্পটে প্লাস্টিক ও কন্টেইনারের অস্থায়ী ডাস্টবিন রয়েছে। তবে দিনের পর দিন এসব ময়লা পরিষ্কার করা হয় না বলে অভিযোগ নগরবাসীর। প্রায় ৭০ লাখ মানুষের বসবাসের এই জনবহুল শহরটিতে এখনও গড়ে ওঠেনি আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। শহরের যত্রতত্র দেখা যায় ময়লা-আবর্জনার স্তুপ। এতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, হুমকির মুখে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। বৈজ্ঞানিক পন্থায় আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার কথা বলছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসণে চলমান মেগা প্রকল্পের কাজের জন্য খাল-নালার বিভিন্ন অংশে বাঁধ দেয়া হয়েছে। সেখানে ময়লা-আবর্জনা জমে থাকার কারণে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমি বেশ কয়েকবার প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে বলেছি, বর্ষা শুরু আগে এসব বাঁধ খুলে দেয়ার জন্য। তা না হলে বর্ষা মৌসুমী জলাবদ্ধতা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। মেয়র বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরবাসীকে নাগরিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। শুধু চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। আমরা নাগরিক হিসেবে আমাদের যে দায় রয়েছে, সেটা কি আমরা পালনে সচেষ্ট হতে হবে। খাল-নালায় ময়লা-আবর্জনা না ফেলার জন্য জনসাধারণকে সচেতন করতে হবে। তারপরও যদি কেউ এ নির্দেশনা অমান্য করে, তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, খাল দখল হয়ে যাওয়া নগরীর জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ। এগুলো পুনরুদ্ধার ও দখলমুক্ত করে পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে সিটি কর্পোরেশন কাজ করে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, ‘নগরীর খালসমূহকে পুনরুদ্ধার করে সংক্ষণের পাশাপাশি পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে সেনাবাহিনী। জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের আওতায় খাল উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযান এখনও চলমান রয়েছে। চসিক’র পরিচ্ছন্নতা বিভাগ সূত্র জানায়, জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ’র মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ শুরুর পর থেকে সিটি কর্পোরেশন নগরের খাল ও বড় নালা থেকে ময়লা-আবর্জনা ও কাদা অপসারণের কাজ বন্ধ রেখেছিল। সিডিএ’র প্রকল্পের কাজ চলমান থাকলেও প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এ জন্য নগরবাসী সিডিএর পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশনের গাফিলতিকে দায়ী করে আসছিল। সম্প্রতি সিডিএ’র প্রকল্পের আওতার বাইরে থাকা খাল ও নালাগুলো পরিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেয় সিটি কর্পোরেশন। ৪১টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা খাল ও নালাগুলোর একটি তালিকা করেছেন। খাল ও নালা-নর্দমার ৫৯৮টি অংশ চিহ্নিত করা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের উপপ্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরী বলেন, আসন্ন বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা রোধে নগরীর খাল-নালা থেকে ময়লা-আবজর্না পরিস্কারের কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। জলাবদ্ধতা নিরসণে সিডিএ’র প্রকল্পের আওতার বাইরে অনেক নালা-খাল আছে, সেগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না করায় নগরীতে বারবার জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে সৃষ্ট দুর্ভোগের জন্য নগরবাসী সিটি কর্পোরেশনকে দায়ী করে আসছে। এ অবস্থায় সিডিএ’র প্রকল্পের বাইরে থাকা খাল ও নালাগুলো পরিষ্কারের জন্য মেয়র মহোদয় নির্দেশ দিয়েছেন। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ দুটি খাল চাক্তাই ও মহেশখাল ময়লা-আবর্জনায় ভরাট হয়ে যাওয়ায় বাকলিয়া, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা, মুরাদপুর, প্রবর্তক মোড়, বহদ্দারহাট, শোলকবহর, ষোলশহর, নাসিরাবাদ, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, রাজাখালী, সাগরিকা, আগ্রাবাদ, হালিশহরের বিভিন্ন এলাকা ডুবে যায়। এছাড়া কলাবাগিচা, হিজড়া, মির্জা, বির্জা, মরিয়মবিবি, মধ্যম-বদর, জামালখান সাবএরিয়া খাল-ছরা দখল ও ভরাট হয়েছে সবচেয়ে বেশি। তাছাড়া মহানগরীজুড়ে নালা-নর্দমাগুলো ময়লা-আবর্জনা ভরাট হয়ে আছে।
# ০৫.০৪.২০২২ চট্টগ্রাম #