চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ, সড়ক অবরোধ

বোয়ালখালী উপজেলায় বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলনরত একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে শ্রমিক ও পুলিশসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। এসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এতে বোয়ালখালী ও পটিয়া উপজেলার একাংশে সব ধরনের যানবাহন চলাচল প্রায় ৯ ঘণ্টা বন্ধ ছিল।

সোমবার (৪ এপ্রিল) সকাল ৮টা থেকে নগরীর কালুরঘাট সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে বোয়ালখালীর পূর্ব কালুরঘাট এলাকায় রিজেন্ট টেক্সটাইল কারখানার সামনে শ্রমিকদের বিক্ষোভ শুরু হয়। বিকেল ৫টার দিকে শ্রমিকরা কারখানার সামনে থেকে সরে গেছেন বলে জানায় পুলিশ।

জানা গেছে, রিজেন্ট টেক্সটাইল কারখানায় প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক কাজ করেন। দুই মাসের বেতন বকেয়া রেখে গত ১৬ মার্চ কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে মালিকপক্ষ। বন্ধের নোটিশ পেয়ে ওই সময় শ্রমিকরা আন্দোলনে নামলে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে বেতন পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

শ্রমিক মনির উদ্দিন বলেন, ‘আজ (সোমবার) আমাদের বেতনের জন্য আসতে বলা হয়েছিল। আমরা যথারীতি সকালে আসি। কিন্তু আমাদের কারখানায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। রোজার মাস। বেতন না পেলে আমাদের সংসার চলবে না। বাধ্য হয়ে আমরা কারখানার সামনে বসে থাকি। কিন্তু মালিক পুলিশ ডেকে এনে আমাদের ওপর হামলা করেছে।’

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকাল ৮টার কিছু সময় পরে বিক্ষুব্ধ দুই শতাধিক শ্রমিক কারখানার সামনে রাস্তা অবরোধ করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। পুলিশ এসে তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে চাইলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এসময় শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশও দফায় দফায় লাঠিচার্জ করে। এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। কয়েকজন বোয়ালখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।

আহতদের মধ্যে কারখানার শ্রমিক আবু সহিদ রুবেল (২৭), লিজা (৩০), মো. মামুন (২২), লিজা আকতার (২০) ও রত্না দাশ (২৩) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। পুলিশ সদস্য মো. সজিব (২৭), গোলাম নবী (৫৪), মো. মহিউদ্দীন (২৭), বৃষ্টি বড়ুয়া (২৩), হাসান মাহমুদ রুবেল (২৬) ও যতীন্দ্র ত্রিপুরা (৩৫) আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিক রহমান বলেন, ‘শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটের টুকরা, পাথর ছুঁড়ে মারেন। এতে আমাদের কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। কয়েকজন শ্রমিকও আহত হয়েছেন বলে শুনেছি। দুই মাসের বকেয়া বেতন দেবে বলে শ্রমিকদের কারখানায় এনে মালিকপক্ষ গড়িমসি শুরু করে। এতে শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় নামে। আমরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি।’

পুলিশ কর্মকর্তা তারিক রহমান বলেন, ‘বোয়ালখালীর ফুলতল, শাকপুরা, মিলিটারি পুল, পটিয়ার মনসা এবং আশপাশের এলাকায় গাড়ি চলাচল শ্রমিকদের সড়ক অবরোধের কারণে বন্ধ ছিল। তবে কালুরঘাট সেতুর ওপর যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক ছিল।’

এদিকে, শ্রমিকদের সড়ক অবরোধের কারণে সকাল থেকে কালুরঘাট থেকে বোয়ালখালী হয়ে পটিয়া বাদামতল অভিমুখী সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। তবে কালুরঘাট সেতুর নিচ দিয়ে কধুরখীল অভিমুখী সড়ক দিয়ে যানবাহন স্বাভাবিক ছিল। কালুরঘাট সেতু দিয়ে গাড়ি চলাচল করলেও মূল সড়ক বন্ধ থাকায় ধীরগতি তৈরি হয়। এতে সাধারণ মানুষকে দিনভর দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। বিকেল ৫টার দিকে শ্রমিকরা কারখানার সামনে থেকে চলে যান।

বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল করিম বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসন ও আমরা মিলে মালিক এবং শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে মিটিং করেছি। মালিকপক্ষ ১২ এপ্রিল বেতন দেওয়ার ঘোষণা দিলে শ্রমিকরা শান্ত হন। বিকেল ৫টার দিকে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে কারখানার সামনে থেকে সরে যান। এরপর যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।’

# ০৪.০৪.২০২২ চট্টগ্রাম #