চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামে মশার উপদ্রব নিয়ে বিব্রত মেয়র

চট্টগ্রাম নগরীতে মশার অসহনীয় উপদ্রবের কথা অকপটে স্বীকার করে এ নিয়ে লজ্জিত বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এমন পরিস্থিতির জন্য তিনি জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় নগরীর বিভিন্ন খাল-নালায় দেয়া বাঁধের কারণে পানি আটকে থাকাকে দায়ী করেছেন। খাল-নালা দিয়ে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ সমস্যার সমাধান হবে বলেও জানান মেয়র। মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে বুধবার (২৩ মার্চ) দুপুরে আন্দরকিল্লার পুরাতন নগর ভবনের কেবি আবদুচ ছত্তার মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মেয়র রেজাউল এসব কথা বলেন। গত এক বছরে নিজের কর্মকান্ড সম্পর্কে এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। মশার উপদ্রব সম্পর্কে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, মশার উপদ্রবের কথা অস্বীকার করছি না। মশা নিধনের ওষুধ প্রয়োগের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল একটি ফর্মূলা দিয়েছেন। সেটা আমরা প্রয়োগ করছি। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ওষুধও প্রয়োগ করছি। কিন্তু মশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। অবস্থা এমন হয়েছে, দিনেও মশা, রাতেও মশা। মশা নিয়ে আমি খুবই বিড়ম্বনায় আছি।’ তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের জন্য শহরের ৩৬টি খালে বাঁধ দেয়া হয়েছে। এ কারণে খাল-নালায় পানি জমাট বেঁধে আছে। পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমি কয়েকদিন আগে ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়েছিলাম। সেখানে সাধারণ মানুষের কাছে লজ্জায় পড়েছি। বিব্রত হয়েছি। খালের বাঁধে পানি জমে আছে। ঢিল ছুঁড়ে মারলাম, মনে হল কয়েক হাজার কোটি মশা উড়ছে। অথচ তিন দিন আগে সেখানে মশার ওষুধ ছিটানো হয়েছে। তিনি বলেন, হাজার কাজ করলেও পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক না হলে মশার উপদ্রব কমবে না। জলাবদ্ধতার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। সামনের বর্ষায় জলাবদ্ধতা আরও ‘ভয়াবহ’ হবে জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ আমি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি। কয়েকদিন আগেও সমন্বয় সভা করেছি। সব সংস্থা একসঙ্গে বসেছিলাম। কিন্তু একটা বিষয় আমি বারবার বলছি যে, গত বর্ষায় যদি একগলা পানিতে থাকি, এবার পানি মাথার ওপর উঠবে। এপ্রিলের শেষে যদি খালের বাঁধ খুলে দেয়া না হয়, তাহলে আমি জীবন দিয়েও মানুষকে জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা করতে পারব না।’ খাল-নালায় পড়ে প্রাণহানি ঠেকাতে বেস্টনি দেয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সড়কের পাশে মানুষের চলাচল আছে, এমন এলাকায় উন্মুক্ত খাল-নালার পাড়ে আমরা কোথাও গ্রিল দিয়ে, আর কোথাও দেওয়াল তুলে দিচ্ছি। কিন্তু নগরীতে সিডিএসহ বিভিন্ন সংস্থা উন্নয়ন কাজ করছে। ডিপিপিতে লেখা আছে, যেসব এলাকায় উন্নয়ন কাজ হচ্ছে, সেখানে রক্ষাণাবেক্ষণের পুরো দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সংস্থার। সুতরাং সেখানে সিটি কর্পোরেশনের যাবার সুযোগ নেই।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নালা-খাল দখলকারী যতই প্রভাবশালী হোক, উচ্ছেদের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। আগের মেয়রের আমলে করা সৌন্দর্যবর্ধন চুক্তি নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সৌন্দর্যবর্ধনের নামে অনেকে সিটি কর্পোরেশনের কাছ থেকে জায়গা বরাদ্দ নিয়েছে, গাছ তিনটা লাগিয়েছে, এরপর দোকান বানিয়ে ভাড়া দিয়েছে। আমি জরিপ করেছি। এ ধরনের অনেক চুক্তি আমি বাতিল করেছি। সময়সীমা শেষ হওয়ার পর অনেকগুলো আর নবায়ন করা হয়নি। যেগুলো আছে সেগুলোর সময় বাড়ানো হবে না।’ মেয়র রেজাউল করিম বলেন, প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার দেনা এবং নানা সমস্যা মাথায় নিয়ে মেয়রের দায়িত্ব নিই। স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। মেয়র হিসাবে নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে রেজাউল বলেন, গত এক বছরে আড়াই হাজার কোটি টাকার একটি বড় প্রকল্পের অনুমোদন হয়েছে। বহদ্দারহাটের বারইপাড়া নতুন খাল খননের কাজ শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে স্থবির হয়ে থাকা পোর্ট কানেকটিং (পিসি) রোডের কাজ প্রায় সম্পন্ন করা হয়েছে। নগর ভবন নির্মাণ ও সড়ক উন্নয়ন বাতি প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নগরের উন্নয়নে ফুটপাত, বাণিজ্যিক ভবন, কিচেন মার্কেট উন্নয়ন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আধুনিক যান ও যন্ত্রপাতি কিনতে প্রকল্প প্রণয়ন করা হচ্ছে। এক বছরের কর্মকান্ডে নিজেকে সফল নাকি ব্যর্থ মনে করেন, এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘নিজের সফলতা-ব্যর্থতা নিজে পরিমাপ করা কঠিন। নগরবাসী এটা পরিমাপ করবেন। নিরন্তর নগরবাসীর সেবা করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি চাই একটি সুন্দর, পরিবেশবান্ধব, স্বাস্থ্যসম্মত, নান্দনিক শহর হিসেবে চট্টগ্রামকে গড়ে তুলতে চাই। সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র গিয়াস উদ্দিন, আব্দুস সবুর লিটন ও আফরোজা কালাম এবং সচিব খালেদ মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী। ওই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি য়েরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি।

# ২৩.০৩.২০২২ চট্টগ্রাম #