চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামে হরতালের সমর্থনে পথসভায় বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে

-বাম জোট এ হামলার জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করেছে।

 সোমবার (২১ মার্চ) রাত ৮টার দিকে নগরীর চকবাজার থানার জিইসি মোড়ে চশমা বিতানের সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলার প্রতিবাদে বামজোট মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় নগরীর সিনেমা প্যালেস চত্বরে সমাবেশের ডাক দিয়েছে। পথসভায় উপস্থিত চট্টগ্রাম জেলা সিপিবির সহকারি সাধারণ সম্পাদক নুরুচ্ছফা ভূঁইয়া সারাবাংলাকে জানান, হরতালের সমর্থনে বাম জোট সোমবার বিকেল ৪টা থেকে ট্রাকে করে নগরীর ১৫টি পয়েন্টে পথসভার আয়োজন করেছিল। ১৪টি পথসভা শেষ করে জিইসি মোড়ের কামাল স্টোরের সামনে এসে পথসভা শুরু করে। সভার শেষপর্যায়ে ২০-৩০ জন তরুণ-যুবক এসে ট্রাক ঘিরে ফেলে। তারা প্রথমে মাইক টেনে নামিয়ে ফেলে। ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে। ট্রাকের একপাশে থাকা জোটের নেতাকর্মীদের বাঁশ দিয়ে বেধড়ক পেটাতে শুরু করে। এর একপর্যায়ে হামলাকারীরা ট্রাকের চালকের কাছ থেকে চাবি কেড়ে নেয়। পরে চালক তাদের অনুরোধ করে চাবি ফেরত নেয়। ট্রাক চলে যাবার সময়ও হামলাকারীরা পেছনে ধাওয়া করে বলে তিনি জানান। নুরুচ্ছফা ভূঁইয়া বলেন, ‘আমাদের ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের বেশি মারধর করেছে। আমরা প্রতিবাদ করতে গেলে তারা আমাকে টেনেহিঁচড়ে ট্রাক থেকে নামিয়ে ফেলে। এসময় তারা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। কয়েকজন জয় বাংলা স্লোগানও দিয়েছে।’ জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি অ্যানি সেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘জিইসি মোড়ে ওমরগণি এমইএস কলেজের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সবসময় আড্ডা দেয়। হামলাকারীরা ওই কলেজের ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। আড্ডাস্থল থেকে উঠে এসেই তারা হামলা করেছে। তারা আমাদের অন্তঃত ১৫ জন ছাত্র কর্মীকে বেধড়কভাবে মারধর করেছে। টহল পুলিশ ছিল সেখানে। পুলিশের সামনেই মেরেছে।’ জানতে চাইলে ওমরগণি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান তারেক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি জিইসি মোড়ে ছিলাম। ট্রাকে করে মিছিল নিয়ে উনাদের (বামজোট) চলে যেতে দেখেছি। হামলার বিষয়টি আমার জানা নেই। ছাত্রলীগের কেউ হামলার সঙ্গে জড়িত নয়। এরপরও উনারা যেহেতু অভিযোগ করছেন বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব।’ এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস জাহানকে একাধিকবার ফোন করেও সাড়া মেলেনি। এদিকে সোমবার বিকেলে নগরীর আন্দরকিল্লা, চকবাজার, গুলজার মোড়, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, আতুরার ডিপো, অক্সিজেন, বায়েজিদ, শেরশাহ, টেক্সটাইল, দুই নম্বর গেইট, ওয়াসা, কাজীর দেউড়ি, জামালখান এলাকায় পথসভা ও প্রচারপত্র বিলি করেন বামজোটের নেতাকর্মীরা। ট্রাকে মিছিল করে নেতাকর্মীরা বিভিন্ন পয়েন্টে যান। বাম গণতান্ত্রিক জোট চট্টগ্রাম জেলার সমন্বয়ক ও সিপিবির জেলা সভাপতি অশোক সাহা, বাসদ একাংশের জেলা সদস্য সচিব শফিউদ্দিন কবির আবিদ, বাসদের আরেক অংশের জেলা ইনচার্জ আল কাদেরি জয়, জেলা সিপিবির সহকারি সাধারণ সম্পাদক নুরুচ্ছফা ভূঁইয়া ও সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য উত্তম চৌধুরী, বাসদ নেতা জাহেদুন্নবী কনক, হেলাল উদ্দিন, আকরাম হোসেন, রায়হান উদ্দিন, আহমেদ জসিম, জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি অ্যানি সেন, ছাত্রফ্রন্ট নেতা প্রীতম বড়ুয়া ও ঋজু লক্ষী অবরোধ বিভিন্ন পথসভায় বক্তব্য রাখেন। অশোক সাহা বলেন, ‘দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার আজ পুরোপুরি সিন্ডিকেটের দখলে চলে গেছে। বাজারের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সরকার বরং বাজার সিন্ডিকেটের পাহারাদারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম ৫০ থেকে ৮০ ভাগ বেড়েছে। বাজার সিন্ডিকেট জনগণকে জিম্মি করে ফেলেছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে জনগণকে রাস্তায় নামতে হবে।’ শফিউদ্দিন কবির আবিদ বলেন, ‘ট্রাকের সামনে সাধারণ মানুষের ভিড় আর হাহাকার দেখি। একদিকে সরকারের তথাকথিত উন্নয়নের বুলি, আরেকদিকে জনগণের দুর্দশা। সরকার নিজেই পণ্যের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। সরকার নিজেই টিসিবির পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। এ অবস্থায় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। আমরা জনগণকে রাজপথে নেমে হরতাল সফল করার আহ্বান জানাচ্ছি।’ উল্লেখ্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বাম গণতান্ত্রিক জোট ২৮ মার্চ ভোর ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত সারাদেশে আধাবেলা হরতাল আহ্বান করেছে।