চলমান সংবাদ

হেফাজতের সাবেক নায়েবে আমির মুফতি ইজাহারের দুই বছরের সাজা

সম্পদের হিসাব জমা দিতে না পেরে দুই বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড মাথায় নিয়ে কারাগারে গেলেন হেফাজতে ইসলামের সাবেক সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি ইজাহারুল ইসলাম। সম্পদের বিবরণী জমা না দেওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় (৪৯/২০১৩) মুফতি ইজাহারে বিরুদ্ধে এ রায় দিয়েছেন চট্টগ্রামের একটি আদালত। রোববার (২০) চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুনসী আবদুল মজিদের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার পর তিনি একই আদালতে জামিন আবেদন করেন। বিকেলে ওই আবেদনের শুনানি শেষে আদালত তা নামঞ্জুর করেন। হেফাজতে ইসলামের সাবেক নায়েবে আমির মুফতি ইজাহারুল ইসলাম চট্টগ্রামের লালখান বাজারের আল জামেয়াতুল ইসলামিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। ওই মাদ্রাসার বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগ রয়েছে। উপস্থিতিতেই আদালত রায় ঘোষণা করে। রায় ঘোষণার পর আদালতের হাজির থাকা মুফতি ইজাহারুল ইসলামকে কারাগারে পাঠানো হয়। দুদক’র স্পেশাল পিপি কাজী সানোয়ার আহমেদ লাভলু বলেন, ‘সম্পদের বিবরণী দাখিল না করায় মুফতি ইজহারের বিরুদ্ধে দুদক আইনের ২০০৪ এর ২৬ (২) ধারায় দোষী সাবস্ত হওয়ায় তাকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকার অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। এই জরিমানা দিতে না পারলে তাকে আরও ২ মাস কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। রায় ঘোষণার সময় আসামি আদালতের হাজির ছিলেন, পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।’ আদালত সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ১৭ জুন সম্পদের হিসাব চেয়ে মুফতি ইজাহারুল ইসলামকে নোটিশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই বছর ২৮ জুলাই মুফতি ইজাহারুল ইসলামের বরাবর নোটিশ পাঠায় দুদক। এতে সাত কার্যদিবসের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু সাত কার্যদিবস অর্থাৎ ওই বছরের ৭ আগস্টের মধ্যে সম্পদের হিসাব না দেওয়ায় দুদক চট্টগ্রামের উপ সহকারী পরিচালক সিরাজুল হক বাদি হয়ে ওই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর মুফতি ইজাহারুলের বিরুদ্ধে খুলশী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ২০১৪ সালের ২১ এপ্রিল দুদকের বর্তমান উপ পরিচালক এইচ এম আকতারুজ্জামান মামলাটির তদন্ত শেষে তার বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করে। ২০১৪ সালের ২৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র গ্রহণের পর তার বিচার শুরু হয়। মামলায় ৯জন সাক্ষীর মধ্যে ৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত ২০২২ সালের ২০ মার্চ মুফতি ইজহারের বিরুদ্ধে এ রায় দেন। বিতর্কিত ও উগ্র সাম্প্রদায়িক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সাবেক সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি ইজাহারুল ইসলাম চট্টগ্রামের লালখান বাজারে পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত জামিয়াতুল উলুম আল-ইসলামিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। ওই মাদ্রাসার বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগ রয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় প্রতিষ্ঠিত ওই মাদ্রাসায় ২০১৩ সালের ১০ জুলাই ভয়াবহ গ্রেনেড বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে তিনজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন হয়। মাদ্রাসায় গ্রেনেড বিস্ফোরণের ঘটনায় দায়ের করা তিনটি মামলায় মুফতি ইজহার ও তার ছেলে হারুন ইজহারসহ বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়। বিস্ফোরক, এসিড নিয়ন্ত্রণ আইন ও একটি হত্যাসহ তিনটি মামলা বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১৩ সালের অক্টোবরে ইজহারপুত্র মুফতি হারুনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক হারুন ইজহারের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন কারাগারে বন্দি ছিলেন। মুফতি ইজহারকেও পরবর্তীতে একই অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনিও দীর্ঘ সময় কারাগারে ছিলেন।
# ২০.০৩.২০২২ চট্টগ্রাম #