চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামে টিসিবি’র ফ্যামিলি কার্ডে পণ্য বিক্রি শুরু রয়েছে নানা অভিযোগ

সারাদেশের মত চট্টগ্রামেও ফ্যামিলি কার্ডে নায্যমূল্যে টিসিবি’র পণ্য বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কিন্তু সরকারের এই বিশেষ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে চট্টগ্রামের নিম্ন আয়ের বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠী। সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ভোটার না হলে মিলছে না টিসিবির ‘ফ্যামিলি কার্ড’। ফ্যামিলি কার্ডের আওতায় না আসলে টিসিবির পণ্য নেয়া যাবে না। যার ফলে নিম্ন আয়ের ও ভাসমান মানুষ সরকারের এই বিশেষ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া কার্ড বিতরণে স্বজনপ্রীতির অভিযোগও পাওয়া গেছে। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সরকার এই বিশেষ সুবিধা দিলেও সেটির সুষ্ঠু বণ্টন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক টিসিবি’র রেশন কার্ড বিরতণে কোনও অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন। নিম্নবিত্ত ও স্বল্প আয়ের সকল মানুষ টিসিবি’র রেশন কার্ডের  আওতায় আসবেন জানিয়ে তিনি বলেন, নিম্নবিত্ত ও স্বল্প আয়ের লোকজন টিসিবি’র রেশন কার্ডের মাধ্যমে ন্যায্য ও সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারবেন। তাছাড়া তিনি এই কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে টিসিবির ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রয়ের মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে সক্ষম হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

রবিবার (২০ মার্চ) চট্টগ্রামের সিটি কর্পোরেশন এলাকা, ১৫ টি উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায় ও ১৫ টি পৌরসভা এলাকায় একযোগে শুরু হয় এ কার্যত্রম। চট্টগ্রামের মোট ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৮২ টি পরিবার এ ফ্যামিলি কার্ডের পণ্য পাবে। টিসিবি’র পণ্য কিনতে সকাল থেকেই কার্ডধারীদের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। প্রখর রোদে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে ক্রেতাদের। কেউ কেউ নির্দিষ্ট সময়ে যথাস্থানে ট্রাক না থাকারও অভিযোগ করেছেন। এছাড়াও কিছু কিছু স্থানে সকাল থেকে পণ্য বিক্রি হলেও ছিলো সিরিয়াল ভঙ্গ করে পণ্য বিক্রির অভিযোগ। সিটি কর্পোরেশন এলাকায় নি¤œ আয়ের বড় এই জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে ফ্যামিলি কার্ড বিতরণ টিসিবির সেবাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আগে যে কেউ লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবির পণ্য কিনতে পারতেন। এখন ফ্যামিলি কার্ডের নিয়ম চালু হওয়ায় কার্ডধারী ছাড়া অন্য কেউ পণ্য কিনতে পারবে না। নগরীর আতুরার ডিপো এলাকায় ২০ বছর ধরে বসবাস করেন আকতার আহমেদ। সিটি কর্পোরেশনে তার পরিবারের কেউ ভোটার নন। আকতার বললেন, ‘সাশ্রয়ের জন্য অনেক সময় টিসিবির পণ্য কিনতে পারতাম। এখন তো আর কিনতে পারবো না।’ জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে এই ফ্যামিলি কার্ড বিরতণ করা হচ্ছে। আর তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরদের মাধ্যমে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তালিকায় একই পরিবারের একাধিক সদস্য, কাউন্সিলরদের আত্মীয়-স্বজন, স্বচ্ছল ও সরকারি সুবিধাভোগী লোকজনদের উপকারভোগীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দলীয় অনুগতদের দেওয়া হয়েছে ফ্যামিলি কার্ড-এমন অভিযোগও উঠেছে। অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে তালিকায় উপকারভোগী হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য সরকারি নির্দেশনা থাকলেও সেটি মানা হচ্ছে না। ২১নং জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন বলেন, ‘তালিকা প্রস্তুতে অনিয়ম হয়নি। ওয়ার্ডের ভোটার হলে যাচাই-বাছচাই করে কার্ড দেওয়া হচ্ছে। ভোটারের বাইরে কার্ড দেয়ার সুযোগ নেই। তবুও যারা দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় বসবাস করছে তাদেরকে দেওয়া হয়েছে। তবে এর সংখ্যা খুব কম। টিসিবি চট্টগ্রাম আঞ্চলিক প্রধান জামাল উদ্দিন বলেন, ‘ফ্যামিলি কার্ডের তালিকা জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে হয়েছে। আমরা শুধু পণ্য সরবরাহ করব। কার্ডের বাইরে আমরা কাউকে পণ্য দেবো না।’ এদিকে রোববার (২০ মার্চ) সকালে নগরের দুই নম্বর গেইট সংলগ্ন সামারা কনভেনশন সেন্টার, জেএমসেন হল, কর্ণফুলীর শিকলবাহা এলাকায় টিসিবি’র পণ্য বিতরণ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। এসময় তিনি কার্ড বিরতণে কোনও অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। অন্যদিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী রোববার সকালে শুলকবহর ওয়ার্ডের একটি কমিউনিটি সেন্টারে ভূতর্কী মূল্যে নি¤œ আয়ের মানুষের কাছে টিসিবির নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রয়ের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এসময় তিনি বলেন, রোজার আগে হুড়োহুড়ি করে পন্য কেনার প্রতিযোগিতার কারণে এক ধরণের অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছে। তিনি অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে এই সুযোগ নিতে না পারে এব্যাপারে সচেতন থাকার আহ্বান জানান। জানা গেছে, রমজান মাসে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৮২ জনকে টিসিবি’র পণ্য বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। চট্টগ্রাম জেলায় ৮৪ জন ডিলারের মাধ্যমে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ড, ১৫ উপজেলার ১৯১টি ইউনিয়ন, ১৫ পৌরসভায় টিসিবির পণ্য স্বল্পমূল্যে বিক্রি করা হবে। প্রতিজনকে ২ কেজি চিনি, ২ কেজি মসুর ডাল, ২ লিটার সয়াবিন তেল, ২ কেজি ছোলা দেওয়া হবে। প্যাকেজিং প্রক্রিয়া যথাযথ ও স্বচ্ছ হচ্ছে কি-না তা তদারকি করতে জেলা প্রশাসনের ৬ জন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মনিটরিং করছেন। উপজেলা পর্যায়েও সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ মনিটরিং টিম স্থানীয়ভাবে টিসিবি’র কার্যক্রম তদারকি করছেন। প্রথম দফার এ কার্যক্রম ৩০ মার্চ পর্যন্ত চলবে। দ্বিতীয় দফার কার্যক্রম ১৫ এপ্রিল থেকে শুরু হবে। প্রথম দফায় যারা কার্ড দিয়ে মালামাল নিচ্ছেন, একই ব্যক্তিকে দ্বিতীয় দফায় একই রকম মালামাল আরও কয়েকটি আইটেমসহ দেয়া হবে।

# ২০.০৩.২০২২ চট্টগ্রাম #