চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামের উন্নয়ন হলে বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে- প্রধানমন্ত্রী

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রামকে বাংলাদেশের অর্থনীতির ‘প্রাণশক্তি’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সত্যিকার অর্থে আমাদের বাণিজ্য নগরী হলো চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামের উন্নয়ন হলে বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে। এতে কোনও সন্দেহ নেই। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি সর্বক্ষেত্রে চট্টগ্রামের বিরাট অবদান রয়েছে। তাই আমি চট্টগ্রামকে সবসময় খুব গুরুত্ব দিয়ে থাকি। চট্টগ্রামে আগে অনেক অফিসের প্রধান কার্যালয় ছিল। ৭৫’র এর পরের সরকারগুলো সেসব ঢাকায় নিয়ে আসে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রাম আবার প্রাণ ফিরে পায়।’ বুধবার (১৬ মার্চ) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২ প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। কর্ণফুলীসহ চট্টগ্রামে নদীগুলোর সুরক্ষায় শিল্প কারখানায় সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি বিষয়ে নজর রাখতে হবে- কর্ণফুলী, হালদা, সাঙ্গু নদীগুলো যেন দূষণ না হয়। কর্ণফুলীর দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। এখন অনেক শিল্প কল-কারখানা হচ্ছে। প্রত্যেক শিল্প কারখানায় অবশ্যই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সঠিক ব্যবস্থা নিতে হবে। কর্ণফুলী নদী যেন কোনোভাবে দূষিত না হয়। সে ব্যবস্থা অবশ্যই রাখতে হবে। সাথে অন্য নদীগুলোরও সুরক্ষা দিতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘চট্টগ্রামে মানুষের পানির চাহিদা পূরণে আমরা প্রকল্প নিয়েছি এবং বাস্তবায়ন করেছি। শুধু চট্টগ্রামে নয় ঢাকাতেও পরিশুদ্ধ পানির চাহিদা পূরণ করা হয়েছে। চট্টগ্রামে পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থার জন্য প্রকল্প নিয়েছি। ড্রেনেজ ও স্যানিটেশন মাস্টারপ্ল্যান করেছি। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী চট্টগ্রামে পয়:নিষ্কাশনের প্রথম পর্যায় বাস্তবায়ন হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে আরো ৫টি পয়:বর্জ্য শোধনাগার হবে। তিনি বলেন, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে। এটা একান্তভাবে দরকার। হাউজিং সোসাইটি ও শিল্প কারখানায় জলাধার যেন থাকে। বর্ষার পানি সংরক্ষণে নজর দিতে হবে।’ ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরতা কমানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশ ভূমিকম্প প্রবণ এলাকায়। তাই ভূগর্ভস্থ পানি যেন না কমে যায় তা নিশ্চিত করতে হবে। এটা হয়ত বাইরে থেকে দেখা যায় না, কিন্তু ভূগর্ভস্থ পানি আমাদের ভূমিকম্প থেকে রক্ষা করতে পারে। আমরা নদীগুলোও ড্রেজিং করছি। যাতে নৌপথ সুরক্ষিত হয় এবং নদীর পানি ধারণক্ষমতা বাড়ে।’ ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল লাইন, মীরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর, বাঁশখালী-আনোয়ারা ও মহেশখালী ও কক্সবাজারে শিল্পাঞ্চলসহ বিভিন্ন চলমান প্রকল্প গ্রহণের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘শুধু মীরসরাই শিল্পনগরী নয় চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এতে অঞ্চলটা সুরক্ষিত থাকবে এবং পর্যটনের দিক থেকে সুবিধাও হবে।’ কর্ণফুলীতে টানেল নির্মাণের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কর্ণফুলীর নিচে টানেলের কথা বললে মহিউদ্দিন চৌধুরীর কথা মনে পরে। তিনি এটা সবসময় চেয়েছিলেন। উনার একটা দাবিও ছিল। এ টানেলের কাজ প্রায় এখন সমাপ্তির পথে। দুর্ভাগ্য, তিনি আর আমাদের মাঝে নেই। বাংলাদেশে যতগুলি সিটি কর্পোরেশন করা হয়েছে, এর মধ্যে একমাত্র চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মহিউদ্দিন চৌধুরীর আমলে ছিল অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী।’ নগরীর রেডিসন ব্লু চিটাগাং বে ভিউতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকোশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ। অনুষ্ঠানে এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রামকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। মীরসরাই ইকোনমিক জোনে অনেক মাদার ইন্ডাস্ট্রি হবে। সেখানে কী ইউটিলিটি সেবা লাগবে তার জন্য একটা কম্প্রিহেনসিভ প্রজেক্ট হবে। সেখানে পানি লাগবে। প্রয়োজনে চাঁদপুর থেকে মেঘনা নদীর ১০০ কোটি লিটার পানি এনে তা পূরণ করা হবে। চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসনে সিটি কর্পোরেশনের শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারে উল্লেখ করে মো. তাজুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রামের নেতারা সম্মিলিত দায়িত্ব নিয়ে নেতৃত্ব দিলে জলাবদ্ধতা, মশা কিছুই থাকবে না। সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী চট্টগ্রামে মেট্রোরেলের ঘোষণা দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘একটি পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে ওঠারা সকল সম্ভাবনা চট্টগ্রামের রয়েছে। পানির জন্য যে হাহাকার অতীতে ছিল তা আপনার নির্দেশনায় মিটে গেছে। তবে নগরীর খালগুলো থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদ এবং মাটি উত্তোলনের কাজে গতি না আসলে আগামী বর্ষায় আবার জলাবদ্ধতায় চরম ভোগান্তি হতে পারে। জলাবদ্ধতা প্রকল্পের বাইরে থাকা অন্য খালগুলো অর্ন্তভুক্ত না হলেও সংকট মিটবে না। এ বিষয়ে আপনার নির্দেশনা প্রার্থনা করছি।’ # ১৬.০৩.২০২২ চট্টগ্রাম #