বিজ্ঞান প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ভাবনা (১৪৮):আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে 

-বিজন সাহা

বিজন সাহা (ফাইল ফটো)

গত ৮ মে আমরা কবিগুরু রবি ঠাকুরের জন্মদিন পালন করলাম। ছোটবেলা থেকেই ২৫ শে বৈশাখ, ১১ জ্যৈষ্ঠ এ সব বিশেষ দিন ছিল আমাদের জীবনে যদিও পালন করতাম সাধারণত রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত জয়ন্তী। সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুই বদলে গেল, এক সময় ২৫ শে বৈশাখ অন্য দিনগুলোকে ছাপিয়ে গেল। এরপর দুই বাংলায় দুই পঞ্জিকার টানা হেঁচড়ায় কোনটা আসল আর কোনটা নকল সেটা নিয়ে দোটানায় পড়লাম বাইরে থাকার ফলে। এখন আর এ নিয়ে ভাবি না। রবীন্দ্রনাথ জীবনে এমন ভাবে জড়িয়ে গেছেন যে প্রতি দিনই মনে হয় ২৫ বৈশাখ। নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের সাথে যিনি মিশে থাকেন তাঁকে কি আর একটা দিনে বন্দী করে রাখা যায়? এখানে একটি বিষয় আমাকে খুবই অবাক করে। যদিও বাংলা ভাষার জন্য রক্ত দিয়ে বীর বাঙালি স্বাধীন দেশ পেল – কিন্তু বিনিময়ে তারা ৮ ফাল্গুন পেল না, পেল ২১ ফেব্রুয়ারি। একই কথা বলা যায় ২৬ মার্চ বা ১৬ ডিসেম্বরের ক্ষেত্রে। অন্য দিকে ১ লা বৈশাখ, ২৫ শে বৈশাখ, ১১ ই জ্যৈষ্ঠ এই তিনটি দিন বাংলায় রেখে আমরা অনবরত দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগছি।

আজকাল দুই বাংলাতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। সেটা যে শুধু তাঁর কাজকর্ম নিয়ে গঠনমূলক সমালোচনা তাই নয়, এসব লেখা বা বক্তব্যের অনেকটাই ব্যক্তিগত পর্যায়ে চলে যায়। তবে যেকোনো আলোচনা তা যত অপ্রিয়ই হোক না কেন সেটা রবীন্দ্রনাথকে প্রাসঙ্গিক রাখে, তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কে আমাদের আগ্রহী করে তোলে। এর একটা ভালো দিক হল এ ধরণের সমালোচনার কারণে শুধু জন্মদিনের বা মৃত্যু বার্ষিকীতে কবিকে স্মরণ করা হয় না, তিনি অনবরত আমাদের আলোচনায় থাকেন। আমাদের অবশ্যই তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগের জবাব দিতে হবে যুক্তি প্রমাণ সহকারে, কিন্তু এ নিয়ে মন খারাপ করলে চলবে না।

আজকের লেখাটির একটা বড় অংশই এখন থেকে পাঁচ বছর আগে রবি ঠাকুরের জন্মদিন উপলক্ষ্যে লিখেছিলাম। এরপর দেখেছি তাঁকে নিয়ে যাই লিখি, ঘুরে ফিরে সব একই রকম হয়ে যায়। তার মানে এই নয় যে নতুন করে বলার কিছু নেই। আছে, অনেক কিছুই আছে। তবে এখনও যেহেতু সেদিনের কথাগুলো প্রাসঙ্গিক তাই ঐ লেখাকে ঘিরেই হবে আজকের লেখা। অবশ্যই নতুন সংযোজন সহ।

রবীন্দ্রনাথ আমার জীবনে ঠিক কখন প্রবেশ করেছেন সেটা বলতে পারব না, ঠিক যেমন বলতে পারব না আমি কখন আকাশ বা বাতাসের সাথে পরিচিত হয়েছি। যতদিন নিজেকে মনে পড়ে ততদিনই তিনি আমার সঙ্গে ছিলেন সঙ্গী হয়ে। আমাদের গ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালীগঙ্গাকে কোন মতেই ছোট নদী বলা যাবে না, বিশেষ করে আমার ছোটবেলায় বর্ষায় তার যে প্রলয়ঙ্করী রূপ ছিল তাতে তো নয়ই। কে জানে আমি ছোট ছিলাম বলে নদীকে বড় মনে হত, নাকি সে সত্যি সত্যি তখন মস্ত বড় ছিল! তারপরেও শিশুকালে যখনই তাঁর

আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে
বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে

কবিতাটি সুর করে পড়তাম আমাদের সেই বিশাল নদী ভেসে উঠত চোখের সামনে আর কেমন করে যেন ছোট হয়ে যেত। গরু আর গাড়ি অনায়াসে পার হয়ে যেত সেই নদী আর আমার কল্পনায় তার দুই ধারের কাশবন ফুলে ফুলে হয়ে যেত সাদা।

এটা ছিল কল্পনার জগৎ। আর যেটা ছিল নিত্যদিনের দেখা সেটা আমার জ্যাঠামশাই। তখনকার দিনে আজকের মত স্মার্টফোন নামে অল ইন ওয়ান ছিল না। আলাদা ঘড়ি, আলাদা ক্যালেন্ডার, আলাদা অ্যালার্ম। আগে পরিবার ছিল একান্নবর্তী কিন্তু ডিভাইস ছিল আলাদা আলাদা। এখন ঠিক উল্টো। পরিবার আলাদা কিন্তু ডিভাইসগুলো একান্নবর্তী পরিবারভুক্ত। যাহোক, বছর শেষ না হতেই কলকাতা থেকে আসত আসছে বছরের রঙ বেরঙের ক্যালেন্ডার। তাতে থাকতো ঠাকুর-দেবতার ছবি। আর স্বর্গের ঠাকুরদের সাথে থাকতেন আমাদের মর্ত্যের ঠাকুর – রবি ঠাকুর। নজরুলের ছবিও থাকতো। রবীন্দ্র নজরুল দুজনেই টিনের ঘরের দেওয়াল থেকে আমাদের গতিবিধির দিকে নজর রাখতেন। তখন এতো কিছু বুঝতাম না। সে সময় রবি ঠাকুর যতটা না তাঁর সাহিত্য দিয়ে তার চেয়ে বেশি তার দাড়ি দিয়ে আমাদের সম্মোহিত করতেন। আর যেহেতু আমার জ্যাঠামশাইয়ের ছিল সেই রাবিন্দ্রীক দাড়ি, তাই কবি ছিলেন আমার জ্যাঠার মত বা ঠিক তার উল্টোটা।

মায়ের উদ্যোগে বাড়িতে গানের চর্চা ছিল। দিদি, রতন গান গাইত, আমিও শুরু করেছিলাম

ওগো নদী, আপন বেগে পাগল-পারা
আমি স্তব্ধ চাঁপার তরু গন্ধভরে তন্দ্রাহারা

গানটি দিয়ে, যদিও পরে গানের চর্চাটা বাদ হয়ে যায় পাড়ার বন্ধুদের ঠাট্টায়। এখন বুঝি আমার শ্রবণ শক্তির অভাবে। আমার বউ আর ছেলেমেয়েরা যাদের প্রায় ১০০% শ্রুতিশক্তি, বলে আমার কানে নাকি ভালুক দাঁড়িয়েছিল (রাশিয়ার একটি জনপ্রিয় প্রবাদ – কারো শ্রবণ শক্তি খারাপ হলে মানে মিউজিক শুনে সেটা ঠিকমত গলায় তুলতে না পারলে এটা বলা হয়)। গান বাদ দিয়ে আমি তবলা শিখতে শুরু করি। রতন গান গাইত। ও বুলবুল ললিতকলা অ্যাকাডেমিতে রবীন্দ্র সঙ্গীত শিখত। তাই প্রতিদিন সকাল বিকাল ওর সাথে তবলা বাজাতাম। এভাবে রবি ঠাকুর হন আমাদের নিত্য দিনের সাথী। তবে তখন বা এর পরে অনেক বছর পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বাইরে বাইরে, ওই দেওয়ালে ঝুলানো “কেবলই ছবি শুধু পটে আঁকা”। অনেক পরে, যখন জীবনটাকে একটু একটু করে বুঝতে শুরু করলাম তখন কোন এক সময়ে তিনি আমার ঘরে এলেন “বাহির হয়ে এসো তুমি যে আছ অন্তরে” এর উল্টো পথে। অথবা এমনও হতে পারে আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলেন দেখতে তাঁকে পাইনি।

আমি রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ নই, এমন কি একজন শিক্ষিত বাঙ্গালী হওয়ার জন্য রবীন্দ্রনাথকে যতটুকু পড়া দরকার সেই পড়াশুনা আমার নেই। তার চেয়েও বড় কথা আমার ঠিক আদর্শ ব্যক্তি বলে কেউ নেই। এটা মনে হয় আমাদের পদার্থবিদদের বৈশিষ্ট্য। আমাদের প্রচলিত বিশ্বাসকে অস্বীকার করেই সামনে এগুতে হয়। অনেক বিশাল মানুষদের কাঁধে ভর করে দূর দিগন্ত তাকিয়ে দেখলেও তাঁদের অস্বীকার করে বা তাঁদের কাজকে পরিবর্তন বা পরিশোধন করেই নিজের স্থান দখল করে নিতে হয় সূর্যের নীচে। তাই আমাদের পক্ষে কাউকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা যথেষ্ট কষ্টসাপেক্ষ, তা তিনি নিউটন হন আর আইনস্টাইনই হন। এসবের পরও রবীন্দ্রনাথ আমার জীবনে আর দশজন থেকে আলাদা। আমার আলো, আমার আঁধার, আমার সুখ, আমার দুঃখ, আমার জীবন – সব।

পড়ুন:  বিজ্ঞান ভাবনা (১৪৯): মে ২০২৪ - বিজন সাহা

পড়াটা আমার অন্যতম প্রধান শখ বলে বাংলা, রুশ, ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, জার্মান সাহিত্য, বিশেষ করে ক্ল্যাসিকাল সাহিত্য পড়া আছে বেশ খানিকটা। রুশ দেশ অনেক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে গেছে। কিন্তু পুশকিন সেখানে সব সময়ই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁকে বাদ দিয়ে রুশ ভাষা, রুশ সাহিত্য ভাবা যায় না, যদিও তলস্তয়, দস্তয়েভস্কিসহ বহু শক্তিশালী  লেখক, কবি জন্ম নিয়েছেন এই দেশে। শেক্সপীয়ারও তাই ইংরেজি সাহিত্যে। বাংলায় তেমনি রবীন্দ্রনাথ। এদের বাদ দিয়ে এসব ভাষা ভাবা যায় না। এরা যেন নতুন প্রাণ জুগিয়েছেন এসব ভাষায়, সংস্কৃতিতে। এ কারণেই হয়তো পাকিস্তানী শাসকেরা চেয়েছিল আমাদের রবীন্দ্রনাথ থেকে মুক্তি দিতে, তাদের দেশীয় দোসররা এখন সেটা করছে। চাইছে আমাদের বাঙালিয়ানাকে ধর্মের লেবাসে ঢেকে দিতে। তাই আমরা যদি জাতি হিসেবে টিকে থাকতে চাই রবীন্দ্রনাথ ছাড়া অন্য কোন পথ নেই। তাঁকে শুধু জাতিগত নয়, ব্যক্তিগত পর্যায়ে গ্রহণ করা ছাড়া গতি নেই। উনি বাঙালির আলো-বাতাস, বাঙালির সবুজ মাঠ, লাল সূর্য, বাংলার নীলাকাশ, রবীন্দ্রনাথ – সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা বাংলার আরেক নাম।

এ তো গেল সেই সব মানুষদের একজনের কথা যারা রবীন্দ্রনাথের মধ্যে মুক্তি খুঁজে পায়। কিন্তু সবাই কি তা পায়? না, পায় না। তাই বার বার বিভিন্ন অজুহাতে তাঁকে ঘরছাড়া করার চেষ্টা চলেই যাচ্ছে। সেটা হয়েছে তাঁর জীবদ্দশাতেও। কেন? কারণ তিনি রচনা দিয়ে, সৃষ্টি দিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের সামনে হিমালয় সম এক চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন যেটা অতিক্রম করার সাধ্য প্রায় কারোই নেই। আর কোন মানুষই, বিশেষ করে যারা নিজেরাও সৃজনশীল, পছন্দ করে না তাকে এমন কারো সাথে তুলনা করা হোক যে সব সময়ই ধরাছোঁয়ার বাইরে, যার সাথে তুলনা তাকে গর্বিত করে কিন্তু একই সাথে সে এটাও বোঝে এই তুলনা শুধু তাকে মাটিতে নামিয়ে আনার জন্য। একদিকে তিনি আমাদের জন্য গর্বের জায়গা তৈরি করে দিয়েছেন, বাংলা ভাষাকে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, অন্য দিকে তিনি সাহিত্য ও সংগীতের বিভিন্ন অঙ্গন এমন ভাবে জুড়ে বসে আছেন যে অনেকেই সেখানে স্বাচ্ছন্দ্যে নিঃশ্বাস ফেলতে পারে না। তিনি ছিলেন জমিদার। তিনি অত্যাচারী তো ছিলেনই না, উল্টো প্রজাদের উন্নয়নের জন্য তিনি জমিদারি বিলিয়ে দিয়েছেন। তবে রবীন্দ্র বিরোধীরা এই জমদারীর জন্য তাঁকে এক হাত নিতে ভুল করে না। অন্য দিকে জমিদার না হয়েও তিনি যেন বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে এক বিশাল জমিদারীর অধিকারী। বাংলা সাহিত্যকে উন্নতির নতুন পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে, সেটাকে কুক্ষিগত না করেও নিজের শিল্প কর্ম তিনি সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে গেছেন, যেটা উপভোগ করা যায়, যা থেকে ঋদ্ধ হওয়া যায় কিন্তু যাকে অস্বীকার করা যায় না, যাকে ডিঙ্গিয়ে যাওয়া যায় না।

অন্য আরেক দল আছে যাদের বলা যায় পাকিস্তানি শাসকদের দেশীয় ও আধুনিক দোসর। যে কারণে পাকিস্তানি শাসকেরা রবীন্দ্রনাথকে বাতিল করার চেষ্টা করেছিল সেই একই কারণে তারা আজ স্বাধীন দেশে সেটা করে যাচ্ছে। অজুহাত? তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন। সেটা যে একেবারেই পাগলের প্রলাপ আর সেই সময়ের বিভিন্ন নথিপত্র যাচাই করলে সেটার প্রমাণ পাওয়া যায় এই যুক্তি তারা মানে না। এদের প্রধান অস্ত্র বিশ্বাস – অন্ধবিশ্বাস। এরা সেটাকেই প্রমোট করছে। আর এটা করে এরা নিজেরাই বিশ্ববিদ্যালয়ের যে মূল কথা – প্রশ্ন করা, পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে সত্য জানা সেটাকে বিসর্জন দিচ্ছে। অনেকের ধারণা এর পেছনে কাজ করছে রবীন্দ্রনাথের ঈশ্বর ভাবনা বা তিনি মুসলিম নন – সেই সত্য। কিন্তু আমার মনে হয় রবীন্দ্র বিরোধিতার মূলে রয়েছে প্রতিহিংসা। ১৯৭১ সালে আমার বয়স ছিল সাত বছর। সেই সময় আমার সোনার বাংলা গানটি মুক্তিকামী মানুষের মধ্যে যে আবেগ সৃষ্টি করেছে সেটা অন্য কোন গান করেনি, যদিও প্রচুর জনপ্রিয় গান সে সময় রচিত হয়েছিল। আমার সোনার বাংলা গানটি দেশকে মাতৃ রূপে আমাদের সামনে হাজির করেছে। এর আকাশ, এর বাতাস, ফাগুনে বাংলার আমের বনের ঘ্রান, এর ছায়া সুনিবিড় বটমূল এ সব মানুষকে এমন ভাবে আবেগ তাড়িত করেছে যে সে নিজের জন্য, নিজের মা, নিজের মাটির জন্য প্রাণ দিতেও দ্বিধা করেনি। আপাত দৃষ্টিতে বাংলাদেশের এই শান্ত রূপ বাংলাদেশের শান্তি প্রিয় শান্ত ছেলেদের অস্ত্র হাতে যুদ্ধ রণাঙ্গনে পাঠিয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে এই গানের অবদান তাই অনস্বীকার্য। আর এ কারণেই বাইরে যাই বলুক যারা এখনও বাহাত্তরের সংবিধানের বাংলাদেশে বিশ্বাস করে না, সেটা মেনে নিতে পারে না তারা যে বিভিন্ন অজুহাতে রবীন্দ্র বিরোধিতা করবে তাতে অবাক হবার কী আছে?

আজকাল আমরা প্রায়ই বাংলা সংস্কৃতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করি। আমরা যারা রবীন্দ্র প্রেমী বলে দাবি করি তাদের বেশির ভাগই রবীন্দ্রনাথকে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত মানুষের ড্রয়িং রুমে ধরে রাখতে চাই। সাহিত্যের ক্ষেত্রে সেটা হয়তো সঠিক পদক্ষেপ। কিন্তু গানের ক্ষেত্রে? রবীন্দ্রনাথ নিজেই গ্রাম বাংলার মানুষের মধ্যে গানের সুর খুঁজেছেন। আবহমান কাল ধরে বাংলার গ্রামে যে কীর্তন, যে বাউলের সুর শোনা গেছে তিনি নিজের গানের জন্য সাদরে সেটা বরণ করেছেন। বাংলার সাধারণ মানুষ তাঁর সোনার বাংলা গাইতে গাইতে দেশ স্বাধীন করেছে। তাই আমার বিশ্বাস শিক্ষিত অশিক্ষিত সবাই রবীন্দ্রনাথের গানে নিজেদের প্রাণের সুর ফিরে পাবে, এই গানের সুরেই তাদের বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতির ভুবনে ফিরিয়ে আনা যাবে। আমার মনে হয় আমরা যদি নিজেদের কাছের ও পাশের মানুষদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের প্রতি ভালোবাসা জাগাতে পারি, তাহলে শত বাধা শত বিঘ্নতার মধ্য দিয়েও আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকব, পশ্চিমের হাঙ্গর সংস্কৃতি বা আরবের অন্তহীন মরুভূমি এই সুজলা সুফলা বাংলাকে গ্রাস করতে পারবে না।

গবেষক, জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ
শিক্ষক, রাশিয়ান পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি, মস্কো