চলমান সংবাদ

ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের অভিযান

-এস আলম অয়েল মিলে সেয়াবিন তেল বোতলজাতকরণ বন্ধ

 ৫ লিটারের তেলের মোড়কে অতিরিক্ত মূল্য লেখা দেশের শীর্ষ স্থানীয় শিল্প গ্রুপ ‘এস আলম’র এডিবল অয়েল মিলে সয়াবিন তেল পরিশোধন কার্যক্রম ও বোতলজাতকরণ কার্যক্রম বন্ধ দেখা গেছে। এছাড়া ওই মিলে পাঁচ লিটারের একটি বোতলের মোড়কে মূল্য ৮৩৫ টাকা লেখা দেখা গেছে, যা সরকারি হিসেবে হওয়ার কথা ৭৯৫ টাকা। ওই মিলে খোলা সয়াবিন ও পাম তেল সরবরাহ প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকলেও ড্রামের গায়ে পাম অয়েলের মেয়াদ ও ড্রাম প্রতি মূল্য ইত্যাদির স্টিকার দেখা যায়নি। দেশের বড় বড় তেল কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে কৃত্রিম মজুদ করে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই মিলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে এসব অসঙ্গতির চিত্র দেখা গেছে। ভোজ্যতেল কারসাজি ঠেকাতে সরকারের নজরদারির অংশ হিসেবে এস আলম এডিবল অয়েল মিলে এই অভিযান চালানো হয়। তবে এ সময় কোনো জরিমানা বা মামলা করা হয়নি। তবে কারখানার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য পরিশোধন যন্ত্র সাময়িক বন্ধ রাখায় আপাতত বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি করা হচ্ছে না। রোববার (১৩ মার্চ) চট্টগ্রামের মইজ্জারটেক এলাকার ওই কারখানায় অভিযান চালানো হয়। এতে নেতৃত্ব দেন ভোক্তা অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. ফয়েজ উল্লাহ। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও নগর পুলিশের সহায়তায় অভিযানের সময় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক নাসরিন আক্তার, সহকারী পরিচালক মো. আনিছুর রহমান ও চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক দিদার হোসেন উপস্থিত ছিলেন। অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সেখানে সয়াবিন তেলের বোতলজাতকরণ কার্যক্রম বন্ধ দেখতে পান। তবে প্রতিদিন ট্রাকে করে সয়াবিন ও পাম তেল মিলের বাইরে যাওয়ার দৃশ্য দেখতে পেয়েছেন কর্মকর্তারা। ভোক্তা অধিদপ্তর সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার সহকারি পরিচালক মো. দিদার হোসেন বলেন, ‘সয়াবিন তেলের মূল্যবৃদ্ধি বা মজুদের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চট্টগ্রামে এস আলম অয়েল মিলেও অভিযান চালানো হয়েছে। সেখানে রিফাইনারি সেকশন ও তেল বোতলজাতকরণ কার্যক্রম বন্ধ দেখা গেছে। এই কার্যক্রম কেন বন্ধ রয়েছে জানতে চাওয়া হলে উক্ত প্রতিষ্টানের কর্মকতারা প্রথমে জানিয়েছিলেন যে, বোতলজাত তেলের অর্ডার নেই তাই উৎপাদন বন্ধ। পরে তারা বক্তব্য সংশোধন করে জানান যে, মেশিনারিজ মেইনটেইনেন্সের কারণে গত দুইদিন ধরে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে এবং আগামী আরো এক সপ্তাহ লাগতে পারে মেইনটেইনেন্স সম্পন্ন করে উৎপাদনে যেতে। তবে কার্যক্রম বন্ধ রাখার বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, রিফাইনিং মেশিন বন্ধ থাকার বিষয়ে ঢাকায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠাবো। এসময় ওই কারখানার বিরুদ্ধে মামলা বা জরিমানা করা হয়নি। তিনি বলেন, ওই মিলে সয়াবিন তেলের ঘাটতি দেখা যায়নি। খোলা সয়াবিন ও পাম তেল নির্দিষ্ট ডিও অনুসারে মিলের বাইরে যাচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ২৮০টির মত ট্রাক মিল থেকে বাইরে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা। খোলা পাম অয়েলে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও ড্রামের গায়ে পাম অয়েলের মেয়াদ ও ড্রাম প্রতি মূল্য ইত্যাদির স্টিকার নেই। ড্রামের গায়ে উক্ত তথ্যাদি না থাকার ফলে গরমকালে পাম অয়েলকে সয়াবিন তেল হিসেবে বিক্রয় হতে পারে। তাদের সতর্ক করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অভিযানের সময় পাঁচ লিটারের একটি বোতলের মোড়কে ৮৩৫ টাকা লেখা ছিল। কিন্তু সরকারি হিসেবে হওয়ার কথা ৭৯৫ টাকা। তবে কারখানার লোকজন বলেছে, আগের হিসেবে মোড়কে এ দাম লেখা ছিল। সেসব বোতল বাজারে যায়নি। প্রাথমিকভাবে বিষয়টি দেখতে পাওয়ায় তাদের এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।’ বোতলজাত তেল বিক্রি বন্ধ করে রাখার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কারখানার ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৯ সাল থেকে গত প্রায় আড়াই বছর একনাগাড়ে মেশিন চালু ছিল। শুক্রবার, সরকারি বন্ধের দিন- কখনোই বন্ধ করা হয়নি। মেশিনের প্রোডাকশন কমে গেছে। সেজন্য তিনদিন আগে জরুরি মেইনটেন্যান্সের জন্য আমাদের মেশিন বন্ধ করতে হয়েছে। এটা আবার চালু হয়ে যাবে ২-৩ দিনের মধ্যে।’ প্রসঙ্গত আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার দোহাই দিয়ে গত কিছুদিন ধওেন দেশে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হচ্ছিল। এ পরিস্থিতিতে বাজারে নিয়ন্ত্রণ করতে গত বৃহস্পতিবার সয়াবিনে ২৫ শতাংশ ভ্যাট মওকুফের ঘোষণা দেয় সরকার। পাশাপাশি বাজারে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে অভিযান শুরু করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। # ১৩.০৩.২০২২ চট্টগ্রাম #