চলমান সংবাদ

চরম অগ্নিঝুঁকিতে চট্টগ্রামের অধিকাংশ ভবন-মার্কেট গরীবের মার্কেট হকার মার্কেটে ভয়াবহ আগুন

 চট্টগ্রাম নগরীর স্বল্প আয়ের মানুষের মার্কেট হিসেবে পরিচিত জহুর হকার্স মার্কেটে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে গেছে প্রায় ৪০টি দোকান। শুক্রবার (১১ মার্চ) রাত ১০ টার দিকে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস প্রায় দেড় ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টা দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্টরা। মার্কেটটি হিসেবে পরিচিত। তৈরি পোশাকের খুচরা বাজার জহুর হকার্স মার্কেটটি গরিব-মধ্যবিত্তের স্বল্পমূল্যের পোশাকের বাজার হিসেবে পরিচিত। এখানে কয়েক হাজার ছোট-বড় দোকান আছে। এর আগে ২০১৯ সালের ১৯ অক্টোবর জহুর হকার্স মার্কেটে আগুনে শতাধিক দোকান পুড়েছিল। ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগরের ৪১টি বিপণিবিতানের অধিকাংশটিতেই অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা নেই। এসব বিপনীবিতানের পাশপাশি অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা না থাকা নগরীর অধিকাংশ ভবন, ১২টি বস্তি অগ্নিকান্ডের ঝুঁকিতে রয়েছে। সম্প্রতি ফায়ার সার্ভিস অগ্নিকান্ডের ঝুঁকিতে থাকা ভবন, কারখানা, বিপণি বিতান, হাসপাতাল চিহ্নিত করেছে। পাশাপাশি বিল্ডিং কোড না মেনে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত ও অগ্নি দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে থাকা ভবনের তালিকা তৈরি করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-চউক। চউক’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস্ বলেন, চট্টগ্রামে অনেক ভবন, বিপণিবিতান অগ্নিকান্ডের ঝুঁঁকিতে আছে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁঁকিতে আছে আবাসিক ভবনের অনুমতি নিয়ে বাণিজ্যিক হিসেবে ব্যবহার করা ভবনগুলো। সম্প্রতি চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স নগরের ৪১টি ওয়ার্ডকে আটটি জোনে ভাগ করে জরিপ চালায়। জরিপ অনুযায়ী, ২০ হাজারের বেশি বহুতল ভবন থাকলেও তার ৯০ শতাংশের বেশি ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না। ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা জানান, ভবনের কাজ শুরুর আগে ফায়ার সার্ভিস থেকে অনাপত্তিপত্র নিতে হয়। কিন্তু নগরের অধিকাংশ ভবন মালিকের কাছে অনাপত্তিপত্র নেই। এদিকে বহুতল ভবনের পাশাপাশি ৪১টি বিপণিবিতান এবং ১২টি বস্তি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফায়ার সার্ভিস নগরের ৪২টি ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট চিহ্নিত করেছে। এসব মার্কেটের মধ্যে রিয়াজ উদ্দিন বাজার, জহুর হকার্স মার্কেট, টেরিবাজার ও তামাকুমন্ডি লেইনে আড়ত, পাইকারি বাজার ও খুচরা মার্কেট রয়েছে। এ বাজারগুলোতে আগুনের কারণে হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হতে পারে। এছাড়া ভেড়া মার্কেট, চালপট্টি, শুঁটকিপট্টি, খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জ, ওমর আলী মার্কেট ও মিয়া খান নগর পুরনো জুট মার্কেট, হাজারী গলি আগুনের ঝুঁকিতে আছে। হাজারী গলিতে ছোট-বড় শতাধিক দোকান আছে। সেখানে আগুন নেভানোর কোনও ব্যবস্থা নেই। হকার্স মার্কেটে আগুনের বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাপ্তাহিক বন্ধের দিন থাকায় শুক্রবার মার্কেট বন্ধ ছিল। হকার্স মার্কেটের মাঝামাঝিতে আদালত ভবনের পাহাড়সংলগ্ন দোকান ও গুদামে আগুন লাগে। আগুন লাগার সাথে সাথেই খুব দ্রুতই আশেপাশে ছড়িয়ে যায়। দোকান ও গুদামগুলোর প্রায় সবই সেমিপাকা। তবে আগুন পুরো মার্কেটে ছড়িয়ে পড়ার আগেই ফায়ার সার্ভিসের টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। আগুন দ্রুত নেভানো সম্ভব হওয়ায় খুব বেশি দোকানে তা ছড়াতে পারেনি। জহুর হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফজলুল আমিন জানান, শুক্রবার মার্কেট বন্ধ ছিল। দারোয়ানরা জানিয়েছেন, হঠাৎ বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে। আনুমানিক ৪০-৫০টি দোকানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।’ ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক ফারুক হোসেন শিকদার জানান, আগুন লাগার খবর পেয়ে চারটি ইউনিটের ১২টি গাড়ি প্রায় দেড় ঘণ্টার মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। উৎসুক জনতার কারণে আমাদের বেগ পেতে হয়েছে। আশেপাশে পানির উৎস না থাকায় পাশের লালদীঘি থেকে পানি আনা হয়েছে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে আগুন আমাদের নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনে ২৬টি দোকান পুরোপুরি দোকান পুড়ে গেছে। আগুনে হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আগুনের সূত্রপাত কীভাবে ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে তদন্ত চলছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের প্রায় সব বহুতল ভবনও মার্কেটই আগুনের ঝুঁকিতে আছে। মার্কেটে আগুনের ভয়াবহতা খুব বেশি হয়। কারণ একটা মার্কেটের সঙ্গে অন্য মার্কেট সংযুক্ত এবং একাধিক গোডাউন ও সরু রাস্তার পাশাপাশি অগ্নিপ্রতিরোধ, অগ্নিনির্বাপণ, অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। ফলে কোনো রকম দুর্ঘটনা হলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা দুরূহ হয়ে ওঠে।
# ১২.০৩.২০২২ চট্টগ্রাম #