চলমান সংবাদ

চবিতে নিয়োগ বাণিজ্য সংক্রান্ত ফোনালাপ কান্ড ফার্সি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল

-তদন্ত কমিটি গঠন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষক, কর্মকর্তা নিয়োগে অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি নিয়োগ বাণিজ্য সংক্রান্ত পাঁচটি চাঞ্চল্যকর অডিও ফাঁস হয়। এতে ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য অর্থ লেনদেনের ব্যাপারে আলোচনা করতে শোনা যায়। এ নিয়ে চবি ছাত্র সংগঠনসমূহ, শিক্ষক সমিতিও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে ও বিবৃতি দিয়েছে। এ ঘটনায় উপাচার্যের অভিযুক্ত পিএসকে অপসারণ করে আগের কর্মস্থলে ফেরত পাঠানো হয়েছে এবং একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে চবি কর্তৃপক্ষ। তবে ফার্সি বিভাগের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুধু নয়, অন্যান্য বিভাগেরও নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি জানিয়েছে চবি ছাত্রলীগের একটি অংশ। এদিকে শনিবার (৫ মার্চ) চট্টগ্রাম শহরে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩৭তম সিন্ডিকেট সভায় ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়। সভায় নিয়োগ বোর্ডের সুপারিশ বাতিল, তদন্ত কমিটি গঠন ও ভবিষ্যতে যেকোনও নিয়োগ পরীক্ষার কমপক্ষে ১০ দিন আগে প্রার্থীদের চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. একেএম মাইনুল হক মিয়াজীকে আহ্বায়ক করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্য সচিব করা হয় ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এসএস মনিরুল হাসানকে। এছাড়া এ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন- সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাসিম হাসান ও অধ্যাপক ড. কাজী এসএম খসরুল আলম কুদ্দুসী। সংবাদ সম্মেলনে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও সততার স্বার্থে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের নিয়োগ বোর্ডের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে। অডিও ক্লিপটি সংবাদমাধ্যমে প্রচার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিয়েছে। ইতোমধ্যে আমার সহকারী খালেদ মিছবাহুল মোকর রবীনকে উপাচার্য দফতর থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ৩ কর্মদিবসের মধ্যে খালেদ মিছবাহুল মোকর রবীন ও তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী আহমদ হোসেনকে কারণ দর্শনোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। উপাচার্য বলেন, আমরা জড়িতদের চিহ্নিত করেছি এবং এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। জড়িতদের এক বিন্দুও ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা ইতোমধ্যে হাটহাজারী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি। প্রয়োজনে আরও গভীরভাবে তদন্তের জন্য আমরা দুদকের সহযোগীতাও চাইবো। তিনি বলেন, আমি উপাচার্যের দায়িত্ব নিয়েছি সততার সঙ্গে কাজ করার জন্য। আমি অন্যায়কে ছাড় দেবো না। আমাদের নিয়োগ বোর্ড সম্পূর্ণ সততা এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করে আসছে। তাই অর্থ লেনদেনের কোনও সুযোগ নেই। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. সেলিনা আক্তার, প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়াসহ প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা। অন্যদিকে ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করলেও অন্যান্য ৮ বিভাগে মোট ২৪ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার (৫ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেট আটকে দিয়ে অবরোধ শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রুপ ভার্সিটি এক্সপ্রেসের নেতাকর্মীরা। প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয় বলেন, সিন্ডিকেট সভায় শুধু ফারসি বিভাগের নিয়োগটিই বাতিল করা হয়েছে। যেহেতু একটি নিয়োগের ক্ষেত্রে অর্থ লেনদেনের ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে, সেহেতু অন্য পদগুলোর ক্ষেত্রেও অর্থ লেনদেনের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আমরা সিন্ডিকেট সভার সব সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় তিনদিন ধরে নীরব থাকলেও গত রোববার (৬ মার্চ) রাষ্ট্রীয় উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. সেলিনা আখতার ও সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. সজীব কুমার ঘোষ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, চবির ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের অডিও ফাঁস হওয়ার ঘটনায় চবি শিক্ষক সমিতি গভীরভাবে মর্মাহত ও উদ্বিগ্ন। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকসহ অন্যান্য নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ শিক্ষক সমাজ ও অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণœ করেছে। আরও বলা হয়, এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি অক্ষুণœ রাখার স্বার্থে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি প্রয়োজনে রাষ্ট্রীয় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করে দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি জোর দাবি জানাচ্ছে। ফাঁস হওয়া ফোনালাপে বলা হয়, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে একজন প্রার্থীর কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা দাবি করা হয়। তবে প্রার্থী যদি চট্টগ্রামের বাইরের হয় তাহলে তাকে গুনতে হবে ২০ লাখ টাকা। এছাড়া তৃতীয় শ্রেণীর একটি চাকরির জন্য ১০-১২ লাখ টাকা লাগে এবং চতুর্থ শ্রেণীর চাকরির জন্য দিতে হয় ৮ লাখ টাকা। এছাড়া আরও বলা হয়, ম্যাডাম (উপাচার্য)যদি চাকরি দিতে অসম্মতি জানায় তাহলে প্রধানমন্ত্রীও যদি ব্যক্তিগতভাবে সুপারিশ করেন, কোনো কাজ হবে না। এটাই শেষ কথা। কারণ, ম্যাডাম নিজেও তো আসছেন অনেক টাকা খরচ করে। এখন আপনার যদি সম্মতি থাকে এবং ম্যাডাম যদি রাজি হন, তাহলে একটা চুক্তিকরা যায়।
# ০৭.০৩.২০২২ চট্টগ্রাম #