চলমান সংবাদ

তারুণ্যের চোখে স্বাধীনতার স্বপ্ন ছিল বলেই আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ – আনিসুল হক

জমে উঠেছে চট্টগ্রামের অমর একুশে বইমেলা। গত দুবছর বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে বইমেলার আয়োজন করা যায়নি। এবছর সংক্রমণ হার কম থাকায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন-চসিক’র উদ্যোগে সৃজনশীল প্রকাশনা পরিষদ, চট্টগ্রাম নাগরিক সমাজের সহযোগিতায় নগরীর এম.এ ষ্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম চত্ত্বরে বইমেলা আয়োজন করা হয়েছে। শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ছুটিরদিনে চট্টগ্রামের প্রকাশক, সংস্কৃতিসেবী, ছাত্র-ছাত্রী, বিভিন্ন বয়সের ও শ্রেনী-পেশার বইপ্রেমীদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি বইমেলায় উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিনের অবরুদ্ধতার অবসান ঘটানো এই বইমেলা যেন সকলের মিলনমেলায় পরিনত হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) নগরীর এম.এ ষ্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম চত্ত্বরে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত অমর একুশে বই মেলার ষষ্ঠ দিনে তারুণ্যের উৎসবের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও কথা সাহিত্যিক আনিসুল হক বলেছেন, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে তরুণরাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তারুণ্যের চোখে মুখে স্বাধীনতার স্বপ্ন ছিল বলেই আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ। এ প্রজন্মের তরুণরা ৭১এর মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি, তাই বলে দেশের প্রতি ভালবাসা কোন অংশে কম নয়, দেশকে জানতে বুঝতে শিখেছেন প্রতিনিয়ত। তারাই আগামী দিনের উজ্জ্বল নক্ষত্র, তাদের নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে আগামীর বাংলাদেশ। তিনি বলেন, তরুণদের মাঝে লুকিয়ে আছে অমিত সম্ভাবনা। স্বপ্নবাজ তরুণদের চোখে মুখে সব স্বপ্নের সূচনা ধরা দিয়েছে আলোর ঝলকানি হয়ে। তারা তাদের জ্ঞানকে শানিত করে মেধাও উদ্ভাবনী শক্তির স্ফুরণ ঘটিয়ে নতুন আবিস্কারের মাধ্যমে দেশ ও মানবতার কল্যাণ সাধন করছেন। সৃজনশীল কর্মকান্ডে তাদের বেশী বেশী অংশগ্রহনের সুযোগ অবারিত করে দিতে হবে, তাহলে তারা যে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মাধ্যমে সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি ও সামর্থ্য অর্জন করবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়ছে, উন্নয়নের বহুমুখী খাতগুলো তারুণ্যের পদচারনায় মুখর। তাদের শৌর্য বীর্য সাহস ও উদ্দীপনায় পৃথিবীতে আসছে নিত্য পরিবর্তন। তাই তরুণদের জ্ঞান অর্জনের জন্য পড়ার সাথে সাথে চিন্তা ও লেখার চর্চা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বইমেলা কমিটির আহ্বায়ক ও কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু। প্রধান বক্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা ইন্দু নন্দন দত্ত, আলোচক চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, ফিল্ড হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ডা. বিদ্যুৎ বডুয়া, সাংস্কৃতিক সংগঠক নজরুল করিম চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শিরিন আকতার, সাংবাদিক শুকলাল দাশ, অধ্যাপক সামশুদ্দীন শিশির। সভাপতির বক্তব্যে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, তরুণ প্রজন্ম আমাদের সম্পদ। এই তরুন সমাজই উন্নত সমৃদ্ধ আধুনিকায়ন বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। তাই তরুণ সমাজকে দেশ প্রেমে জাগ্রত হতে হবে। তিনি বলেন, আমরা বাঙ্গালিরা উৎসবের জন্য অধীর হয়ে থাকি। তাই শোকের দিন একুশে ফেব্রুয়ারিকে আমরা একটা উদ্দীপনের দিন করে ফেলেছি। তরুণরা যেভাবে উৎসব আবিস্কার বা পুনরাবিস্কার করছেন তার মূলে হলো তারুণ্যের স্বাভাবিক প্রাণশক্তি ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা। তারুণ্যের এই মেধাশক্তিকে মানুষের জন্য পরিবর্তন, সাম্য ও মানবিকতা প্রতিষ্ঠার জন্য যারা ব্যবহার করবেন তারা টিকে থাকবেন, তারা প্রতিবছর তারুণ্যের উৎসবে যোগ দিতে পারবেন। তিনি আরো বলেন, বর্তমান ডিজিটাল যুগে তরুণরা বই পড়া থেকে অনেক দূরে চলে গেছেন তাই পড়ুয়াদের সংখ্যা বাড়লেই সমাজ থেকে অন্ধকার দূর হবে। তিনি বলেন, যেকোনো সংকট কালে তরুণরাই জাতিকে পথ দেখিয়েছে। তাদের সাহসী ও সময়োপযোগী কর্মকা-ের ফলেই দেশের অগ্রগতি ত্বরান্বিত হচ্ছে। তিনি বইমেলায় আগত কিশোর -কিশোরী ও তরুণদের হাতে বই দিতে এবং বই পড়তে উৎসাহ প্রদানের জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করে বোধন আবৃত্তি পরিষদ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয় সরকারি কমার্স কলেজ ও কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ। অনুষ্ঠান শেষে লেখক আড্ডায় অংশ নেন খ্যাতিমান কথা সাহিত্যিক আনিসুল হক। আড্ডা সঞ্চালনায় ছিলেন ড. আদনান মান্নান।
# ২৫.০২.২০২২ চট্টগ্রাম #