মতামত

আইন মেনেই বলছি 

উত্তর পুরুষ

কয়েকদিন ধরে বেশ শোরগোল হচ্ছে। কথা বলছে সবাই। জানেন, বুঝেন এমন সমঝদার ব্যক্তিও বলছেন আবার মানেন না, করেন না এমন সমঝদার ব্যক্তি ও বলছেন। এটা আবার কি রকম? হা, আমাদের সবাই এই রকমই। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা একটা বিষয় নিয়ে ভাবেন, ভাবনাটা অন্যের মধ্যে সঞ্চালিত করতে চান। এই সংখ্যাটা নগন্য। হাতে গোনা কয়েকজনকে পাবেন এই দলে। অন্যদিকে আর একদল লোক আছেন তাঁরা বলেন অনেক, কিন্তু নিজে কখনো তা করেন না, তা মেনে চলেন না। অর্থাৎ উল্টোটাই করেন। এই দলে সদস্য  সংখ্যা বেশি। যাকগে, মানুষের গীবত গেয়ে লাভ নাই। তবে না বলে ও পারি না, এই আর কি। ভাই বুঝেন তো । কোন ধরনের মানুষের কথা বলতে চাইছি। সব কথা কি বলা যায়? তার উপর আইন মেনে?

যা বলার চেষ্টা করছিলাম তা হচ্ছে গিয়ে কিছু মানুষ এখন খুব সরব। কেন তারা সরব ? এটা শহীদদের আত্মদানের মাস, ভাষা আন্দোলনের মাস, কাজেই সবখানে বাংলা চালু করতে হবে। প্রথম আক্রোশ সাইনবোর্ডের উপর। খুব বক্তৃতা, বিবৃতি দিচ্ছেন। ঐ যে বললাম, একদল লোক কথা বলেন খুব। আরে ভাই এখন বলছেন কথা।  খুব সঠিক বলছেন। পত্র- পত্রিকা তো আপনাদের এমন সাংঘাতিক সাংঘাতিক কথা ও ছাপাতে চায়। এতে পত্রিকার কাটতি বাড়ে। লোকজন শুনতে চায়। ব্যবসা ভাল হয়। কোন অসুবিধা নাই। একদল কথা বলবে আর একদল এটা নিয়ে ব্যবসা করবে। অসুবিধা কি। কিন্তু এই কদিন কেন? সারা বছর কোথায় থাকেন? ভাই, কথা হচ্ছে গিয়ে এনারা সারা বছর সময় পান না। কত বিষয় নিয়ে উনাদের কথা বলতে হয়, তার কি কোন সীমানা আছে। তার উপর আছে রাজনীতি নিয়ে কথা। দেখবেন কোনদিন উনারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে এক ফোটা বৃষ্টির জল মাথায় লাগান নি, কাদা মাটিতে হাঁটেন নি, ঘামে কাপড় ভেজান নি। উনারা সারাক্ষন বলে চলছেন এটা করবেন, সেটা করবেন, রাজনীতি এমন হওয়া উচিৎ, তেমন হওয়া উচিৎ । ভাই, আপনারা মনে করছেন আমার মনে হয় তাদের উপর রাগ আছে। নারে ভাই ব্যক্তিগত ভাবে কোন রাগ নাই। কিন্তু সারা বছর আপনি কিছু বলবেন না, করবেন না, এই কয়দিন মাঠ গরম করবেন। কোন মানে আছে? 

খবর নিয়ে দেখেন এই বকাউল্লাহদের অনেকের ছেলে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে। বাবা মায়ের সাথে কথায় কথায় ইংলিশ বলে। আহা, আমার ছেলে স্কুল শেষ করে বিদেশে গিয়ে লেখা পড়া করবে। কি আনন্দ। তো আপনার আনন্দ নিয়ে আপনি থাকেন। এই সব লম্বা কথা বলেন কেন ভাই? এখন তো আবার ডিজিটাল যুগ। সবাই অনলাইনে কথা বলছে, গান করছে, কবিতা পড়ছে। থাক, আজ আর গান কবিতা নিয়ে কথা বলতে চাই না। এক অনলাইন সভায় দেখলাম বক্তা বলছেন – ‘আমাদের বাংলা ফন্ট আছে, ইচ্ছা করলেই বাংলায় মেইল করতে পারি, চিঠি লিখতে পারি, গদ্য লিখতে পারি। কাজেই সবার প্রতি আহ্বান আসুন আমরা ডিজিটালি যা করি সেখানেও যেন বাংলা ব্যবহার করি।’ আমি তো ভাই মুখ্যু সুখ্যু মানুষ, বলতে জানি না। শুধু শুনি। উনার কথা শুনে মুগ্ধ এক্কেবারে। কোথায় একদল লোক সাইনবোর্ড এর লেখা নিয়ে পাগল আর কিনা এই ভদ্রলোক ডিজিটালে হাত দিয়েছেন। কি সাংঘাতিক। আমার চোখ ছানা বড়া। তা ঐ চোখ নিয়ে উনার নাম কি দেখার চেষ্টা করলাম। ল্যাপটপের লেখা বেশ ছোট । কাছে গিয়ে দেখতে হয়। তো কি আর করা, ল্যাপটপের স্ক্রীনের কাছে গিয়ে দেখলাম উনার নিজের নাম টি ইংলিশে লেখা। ভাবেন তো একবার। কি ধরনের হিপোক্র্যাট ? বাবারে নিজে যা বলবি তা তো করে দেখাবি। নাকি শুধুই কথা বলবি।

যাকগে, আমার এতো কথা বলার দরকার কি। যার যা খুশি বলেন। আমরা তো শোনাউল্লাহ। শুধু শুনে যাব। এটাই তো আমাদের কাজ। কাজের মধ্যে দুই -খাই আর শুই। এখন বলব -কাজের মধ্যে জানি – শোনা আর  খানি ।  

আবার দেখেন, ২১ ফেব্রুয়ারীকে আমরা শহীদ দিবস বলি। ভাষার জন্য যারা জীবন দিয়েছেন তাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। শহীদ মিনারে গিয়ে পুষ্প স্তবক অর্পণ করি। কিন্তু একদল লোক আবার এটাকে ভাষা দিবস বলার চেষ্টা করছে। এরা হচ্ছে তারাই যারা মনে করে না ভাষার জন্য শহীদ হতে পারেন। এরা সেই সব লোক যারা একাত্তরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিল, স্বাধীনতা মেনে নেয় নি। মনে মনে পাকিস্তানের মত করে দেশ চালাতে চায় । আর কিছু লোক বুঝে না বুঝে তাদের সাথে তাল মেলায়। ভাইরে কি আর বলি এই সব কথা। কেউ কিছু বলে না। এই সব নিয়ে। বলে না বললে ভুল বলা হয় বলতে ভয় পায়। পাছে আবার আইনের বিরুদ্ধে চলে যায়। কি একটা অবস্থা দেখেন

থাক এই সব নিয়ে আমি ও কিছু বলি না, বলতে চাই না। আমি আইনের মেনেই চলতে চাই। চলেন, এই সব না ভেবে নাকে শর্ষে তেল দিয়ে ঘুমাই। কিছু লোক তাই তো চায়, নাকি?