চলমান সংবাদ

অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ স্থগিত

হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি ও টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক’র মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ সাময়িক স্থগিত করেছেন আদালত। তার আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতে শুনানি শেষে তা স্থগিত করা হয়।

বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আবদুল মজিদের আদালত এই আদেশ দেন। আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছে আদালত। তবে আদালতে ওসি প্রদীপ কুমার দাশের স্ত্রী চুমকি করণের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। মামলার বাদী ও দুদক’র সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য প্রদীপ কুমার দাশকে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কড়া নিরাপত্তায় চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়। প্রদীপ কুমার দাশকে বিকেলে চট্টগ্রাম আদালত থেকে প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় উপস্থিত অনেকেই তাকে ‘চোর চোর’ বলে সম্বোধন করেন।

দুদক’র আইনজীবী মাহমুদুল হক মাহমুদ বলেন, ‘প্রদীপ দম্পতির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল আজ (বৃহস্পতিবার)। তবে হাইকোর্টে এ মামলার বিরুদ্ধে একটি আবেদন শুনানির অপেক্ষায় আছে বলে জানান তার আইনজীবীরা। সেটি নিষ্পত্তির আগ পর্যন্ত ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ স্থগিত রাখার জন্য আদালতে আবেদন জানান তারা।

শুনানি শেষে আদালত তা সাময়িকভাবে স্থগিত করেন। তবে স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ চলবে বলে আদেশ দেন বিচারক। মামলার বাদী রিয়াজ উদ্দিন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি মামলার বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও নথিপত্র আদালতে উপস্থাপন করেছেন।’

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৬ জুলাই ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছিলেন তদন্ত কর্মকর্তা দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন। এতে সাক্ষী করা হয় ২৯ জনকে। আসামিদের বিরুদ্ধে ৪৯ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫৭ টাকার তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় ছয়তলা বাড়ি, ষোলশহরের বাড়ি, ৪৫ ভরি স্বর্ণ, একটি প্রাইভেট কার, একটি মাইক্রোবাস, ব্যাংক হিসাব ও কক্সবাজারে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে চুমকির নামে।

তার বিরুদ্ধে ২ কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকার জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জনের হদিস পায় দুদক। একই বছরের ১ সেপ্টেম্বর আসামি প্রদীপের উপস্থিতিতে অভিযোগপত্রের শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। গত ২৯ জুন চট্টগ্রামের সিনিয়র স্পেশাল জজ ও মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালত প্রদীপ কুমার দাশের অবৈধ সম্পদ দেখভালের দায়িত্ব কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২০ সেপ্টেম্বর একই আদালত মামলার এজাহারে উল্লিখত সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেন।এরপর ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠন করা হয় এবং মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২’র তৎকালীন সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেন।

সম্মিলিতভাবে এই দম্পতির বিরুদ্ধে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়।

গত ৩১ জানুয়ারি অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ খান হত্যা মামলা প্রদীপ ও লিয়াকতকে মৃত্যুদন্ড এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল। এরআগে ২০২০ সালের ৩১ জুলাই কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিনড্রাইভ সড়কের চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা। হত্যাকান্ডের চারদিন পর ৫ আগস্ট সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে আদালতে হত্যা মামলা করেন। মামলায় টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ নয়জনকে আসামি করা হয়।

# ১৭.০২.২০২২ চট্টগ্রাম #