চলমান সংবাদ

তিন পার্বত্য জেলার ফলাফলের প্রভাব পাসের হারে সবচেয়ে পিছিয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড

২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় পার্বত্য অঞ্চলের ফলাফল আশানুরূপ না হওয়ায় পাসের হারে দেশের অন্যান্য শিক্ষাবোর্ড থেকে পিছিয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড। রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, এইচএসসিতে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে এবার পাসের হার ৮৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ। পার্বত্য জেলা এবং গ্রামাঞ্চলের পাসের হার কম থাকায় চট্টগ্রাম বোর্ডের সামগ্রীক ফলাফলে প্রভাব পড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আবার জিপিএ-৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও পিছিয়ে আছে মহানগরের বাইরের কলেজগুলো। এবার মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৩ হাজার ৭২০ জন শিক্ষার্থী, এর মধ্যে ১২ হাজার ৫৫৪ জনই মহানগরের। অর্থাৎ ৯১ দশমিক ৫০ শতাংশ মহানগরের। বাকি ১ হাজার ১৬৬ জন মহানগরের বাইরের। রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ফলাফল ঘোষণাকালে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ বলেন, ‘তিন পার্বত্য জেলার কারণে সামগ্রিক ফলাফলে প্রভাব পড়েছে। পার্বত্য অঞ্চলে অবকাঠামোগত সংকট আছে। বিষয়ভিত্তিক দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকেরও সংকট আছে। সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করছে সেখানে শিক্ষার মান বাড়াতে। কিন্তু সেখানে অনেক দুর্গম অঞ্চল আছে। সেই বাস্তবতাও আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। এরপরও সেখানে ফলাফল আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে পার্বত্য জেলাগুলো এখনো পিছিয়ে আছে। সমতলের চেয়ে সেখানে সুযোগ সুবিধা কম, তাছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও মানসম্মত শিক্ষার অভাব রয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলের ফলাফল ভালো হলে অন্যান্য বোর্ডের তুলনায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড এগিয়ে থাকতো। এছাড়া আরও কি কি সমস্যা আছে, সেটা আমরা খতিয়ে দেখব। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছর পরীক্ষা না হওয়ায় শতভাগ পরীক্ষার্থীকে কৃতকার্য ঘোষণা করা হয়েছিল। এবারও করোনা পরিস্থিতির কারণে ২০২১ সালে পরীক্ষা হয়েছে বিলম্বে এবং সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে। এবারের পাসের হারে চট্টগ্রামের ফলাফল সারাদেশের তুলনায় পিছিয়ে পড়লেও ২০২০ সালের পরীক্ষার্থীদের ফলাফল বাদ দিলে এর আগের তিনবছরের চেয়ে এবার ভালো হয়েছে। এবার পাসের হারও বেড়েছে। ২০১৭ সালে পাসের হার ছিল ৬১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। ২০১৮ সালে ৬২ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং ২০১৯ সালের ৬২ দশমিক ১৯ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছিল। এবার পাসের হার বাড়লেও দেশের অন্যান্য শিক্ষাবোর্ডের তুলনায় পিছিয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম। ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৯৬ দশমিক ৫২ শতাংশ, যশোর বোর্ডে ৯৮ দশমিক ১১ শতাংশ, সিলেট বোর্ডে ৯৪ দশমিক ৮০ শতাংশ, বরিশাল বোর্ডে ৯৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ, কুমিল্লা বোর্ডে ৯৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ, দিনাজপুর বোর্ডে ৯২ দশমিক ৪৩ শতাংশ, রাজশাহী বোর্ডে ৯৭ দশমিক ২৯ শতাংশ, ময়মনসিংহ বোর্ডে ৯৫ দশমিক ৭১ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছে। চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড সূত্র জানায়, এবার চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলা মিলিয়ে ২৬৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ৯৯ হাজার ৬২৮ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে পাস করেছে ৮৯ হাজার ৬২ জন। পাসের হারে এবং জিপিএ-৫ অর্জনে ছাত্রীরা এগিয়ে আছে। ছাত্রী পাসের হার ৯১ দশমিক ৮৫ শতাংশ ও ছাত্র পাসের হার ৮৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ। মোট জিপিএ-৫ পাওয়া পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রী ৭ হাজার ৬৭০ জন ও ছাত্র ৬ হাজার ৫০ জন। বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৯২ দশমিক ২০ শতাংশ, মানবিক বিভাগে ৮৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৮৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ। বৃহত্তর চট্টগ্রামের জেলাগুলোর মধ্যে ফলাফলে পিছিয়ে আছে পার্বত্য জেলা রাঙামাটি। সেখানে পাসের হার ৮১ দশমিক ৬২ শতাংশ। খাগড়াছড়ি জেলায় পাসের হার ৮৩ দশমিক ২১ শতাংশ, বান্দরবান জেলায় ৯১ দশমিক ৭৩ শতাংশ, কক্সবাজার জেলায় পাশের হার ৮৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এছাড়া চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা মিলিয়ে পাসের হার ৯০ দশমিক ৭২ শতাংশ। শুধু মহানগরে পাসের হার ৯৩ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং শুধু জেলায় পাসের হার ৮৮ দশমিক ২২ শতাংশ। এদিকে চট্টগ্রাম বোর্ডে শতভাগ পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে এমন কলেজের সংখ্যা দুইটি। এর মধ্যে চট্টগ্রামের পটিয়ার আইডিয়াল কলেজ থেকে শুধুমাত্র একজন পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য হয়েছে। খাগড়াছড়ির মহালছড়ির বৌদ্ধ শিশুঘর হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে চারজন পরীক্ষা দিয়ে সবাই ফেল করেছে। শতভাগ পাস করেছে এমন কলেজের সংখ্যা ১৬টি। এগুলো হচ্ছে- চট্টগ্রাম কলেজ, ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হালিশহর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সেন্টপ্লাসিড্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বাংলাদেশ নৌবাহিনী স্কুল অ্যান্ড কলেজ কাপ্তাই, লামার কোয়ান্টাম কসমো কলেজ, ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ, সেন্ট স্কলাস্টিকাস গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কাফকো স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সাউথপয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কক্সবাজারের বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মেরন সান কলেজ, বোয়ালখালীর পশ্চিম কধুরখীল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং চট্টগ্রাম ল্যাবরেটরি কলেজ। জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকে প্রথম স্থানে আছে সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজ। এই কলেজে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১২৮৫ জন। মহসীন কলেজসহ চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড জিপিএ-ফাইভ প্রাপ্তির দিক থেকে এগিয়ে থাকা ৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা করেছে। বাকি ২৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে- চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ, হাজেরা তুজ ডিগ্রি কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ, চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ, সরকারি কমার্স কলেজ, কক্সবাজার সরকারি কলেজ, পটিয়া সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন মহিলা কলেজ, নৌবাহিনী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মহিলা কলেজ চট্টগ্রাম, বিএএফ শাহীন কলেজ, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হাটহাজারী কলেজ, ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজ, হালিশহর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চট্টগ্রাম বন্দর কলেজ, ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজ, নিজামপুর কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল, আগ্রাবাদ মহিলা কলেজ, মহাজনহাট ফজলুর রহমান স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ।
# ১৩.০২.২০২২ চট্টগ্রাম #