চলমান সংবাদ

জাহাজ ভাঙ্গা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের সভা

-নিহত শ্রমিকের ব্যাপারে মিথ্যাচার না করার আহবাণ

গত ৩১ জানুয়ারী রাত ১টায় কবির স্টিল শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে আরিফুল ইসলাম সুজন নামে একজন কাটার ম্যান কর্মরত অবস্থায় লোহার পাত পড়ার কারনে মারাত্মক আহত হয়ে কর্মস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। উক্ত দুর্ঘটনার প্রতিবাদে আজ ১০ ফেব্রুয়ারী বিকাল ৩টায় জাহাজ ভাঙ্গা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের উদ্যোগে এক সভা সংগঠনের এনায়েত বাজারস্থ অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। ফোরামের যুগ্ম আহবায়ক এবং জাতীয় শ্রমিক লীগের সহ সভাপতি সফর আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় বক্তব্য রাখেন, টিইউসি চট্টগ্রাম জেলা কমিটি সভাপতি তপন দত্ত, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক এ এম নাজিম উদ্দিন, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ নুরুল্লাহ বাহার, ফোরামের কোষাধ্যক্ষ রিজওয়ানুর রহমান খান, বাংলাদেশ মুক্ত শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক নুরুল আবসার, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় সংগঠক ফজলুল কবির মিন্টু, ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরিফুল ইসলাম, জাহাজ ভাঙ্গা শ্রমিক নেতা মোহাম্মদ আলী, বিএফটিউসির চট্টগ্রাম জেলার সাধারন সম্পাদক কে এম শহিদুল্লাহ প্রমুখ শ্রমিকনেতা।

সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন,জাহাজ ভাঙা শিল্পে বার বার দুর্ঘটনা ঘটলেও মালিক ও সরকার নির্বিকার। কেবল ২০২১ সালেই এই শিল্পে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ১৩ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। বিগত তিন বছরে ৪৬ জন শ্রমিক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন এবং শতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছে। ২০২২ সালে ৩১ জানুয়ারী রাত ১টায় কবির স্টিল শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে আরিফুল ইসলাম সুজনের মৃত্যু প্রমাণ করে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের শ্রমিকদের নিরাপত্তা দিতে মালিক এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর সমূহ ব্যর্থ হয়েছে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টে উল্লেখ আছে হতভাগ্য নিহত শ্রমিক উঁচু স্থান হতে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হওয়ার পর মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, চট্টগ্রাম কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক সাংবাদিকদের নিকট উল্লেখ করেছেন নিহত শ্রমিক অসুস্থ্য হয়ে বমি করে। উক্ত বমিতে শ্রমিক পা পিছলে পড়ে যায় এবং পরবর্তীতে হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। উপমহাপরিদর্শক এর এধরনের বক্তব্য পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টের সাথে সম্পূর্ণভাবে সাংঘর্ষিক এবং প্রকৃত সত্যকে আড়াল করার অশুভ প্রচেষ্টা।

তারা বলেন, পূর্বে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প খাতে কোন দুর্ঘটনায় শ্রমিক নিহত হলে দুর্ঘটনার বিষয়কে ধামাচাপা দেয়ার জন্য মালিক পক্ষ থেকে যে ধরনের বক্তব্য দেয়া হতো তার সাথে উপমহাপরিদর্শক এর বক্তব্যের মিল রয়েছে। যা খুবই অনভিপ্রেত। একটি সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তার এ ধরনের পক্ষপাতমূলক বক্তব্য এবং সত্যকে ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প সেক্টরে নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে পতিবন্ধকতা তৈরি করবে বলে সভায় অভিমত ব্যক্ত করা হয়। সভায় জাহাজ ভাঙ্গা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের পক্ষ থেকে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক কর্মকান্ডের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানোর পাশাপাশি কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে একটি শক্তিশালী উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন পূর্বক প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে উপ মহাপরিদর্শক সাহেবের পক্ষপাতমূলক বক্তব্য এবং আচরণের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য জোর দাবি জানানো হয়। সভায় আইএলও কনভেনশন ১২১ অনুসরন করে লস অফ ইয়ার আর্ণিংস হিসাবে নিহতের পরিবারকে কমপক্ষে ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবী জানানো হয়।

# ১০/০২/২০২২, প্রেস বিজ্ঞপ্তি #