চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামে মেট্রোরেল প্রকল্প এক বছরের মধ্যে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের লক্ষ্যে সমন্বয়ের ওপর গুরুত্বারোপ তথ্যমন্ত্রীর

চলতি বছরের মধ্যে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষ করে আগামী বছরের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাতে মেট্রোরেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে পারেন সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর পরিবহন মাস্টারপ্ল্যানসহ মেট্রোরেলের সমীক্ষার জন্য প্রিলিমিনারি সার্ভে কাজ’ সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ নির্দেশ দেন। মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে এই মতবিনিময় সভা ও প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। মেট্রোরেল কীভাবে নদীর ওপারে নেয়া যায় তা পরিকল্পনা করা উচিত মন্তব্য করে তথ্য মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকে কলকাতার পর চট্টগ্রামই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর। সারাদেশে ১০০টি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ চলছে। দেশ শিল্পোন্নত দেশে পরিণত হচ্ছে। শিল্প খাতে বাংলাদেশ অনেকদূর এগিয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু টানেল থেকে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত মেট্রোরেল যেতে পারে। যেহেতু সেখানে শাটল চলাচল করে। এ ছাড়াও নদীর ওপাড়ে কীভাবে মেট্রোরেল নিয়ে যাওয়া যায় এসব বিষয় মাথায় রেখে পরিকল্পনা করা উচিত। তবে এ প্রকল্পে সমন্বয়ে জোর দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সঙ্গে আলাদা বসার পরিকল্পনা হয়েছে। রেলওয়ে, ওয়াসা, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সবার সঙ্গে আলাদা বসার পর একটি পরিকল্পনা নিতে হবে। সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করতে হবে। দেশ ছোট, তাই মাল্টিপল ব্যবহার করতে হবে। এটা আমার জায়গা এটা কাউকে ব্যবহার করতে দেব না। এ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মেট্রোরেল বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও এসব বিষয় আসবে। সেটি থেকে আমাদের সরে আসতে হবে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় মতামত দেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুল মালেক, যুগ্ম সচিব মাহবুবুর রহমান, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, সাঊেশ মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়াল অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শিরীণ আখতার, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল আলম, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাহবুবুল আলম, কোইকা’র ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর ইয়ংয়ান কিন। উপস্থিত ছিলেন কোরিয়ার ফার্স্ট সেক্রেটারি জেং ইউল লি, প্রফেসর ইলজন চ্যাং, কোইকা’র প্রতিনিধি চ্যাউন কিম, জিং বো চুই, মো জেন কং, চট্টগ্রাম কোরিয়ান এসোসিয়েশন’র চেয়ারম্যান জিনহুক পাইক। চট্টগ্রামে মেট্রোরেল প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ করছে কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি-কেইকা। এ কাজে মোট ৭৬ কোটি টাকার বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে। এরমধ্যে কোইকো ৫১ কোটি টাকা ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ২৬ কোটি টাকা দেবে। প্রসঙ্গত গত ৪ জানুয়ারি রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভায় বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে মেট্রোরেল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় চট্টগ্রাম নগরীতে পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন ও মেট্রোরেল বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে। কোরিয়ান প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই চট্টগ্রামের মেট্রোরেলের প্রাথমিক কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। সভায় সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ পাতাল রেলপথে মেট্রোরেল চলাচলের প্রস্তাব দিয়ে বলেন, চট্টগ্রাম শহরে পাহাড় আছে, নদী আছে, সমুদ্রও আছে। এই ভৌগলিক অবস্থানটা মাথায় রেখে মেট্রোরেলের পরিকল্পনা করতে হবে। এটাকে যদি আন্ডারগ্রাউন্ড করা হয়, তাহলে সুবিধা হবে। সড়কের ওপর হলে চাপ আরও বাড়বে। নিচে হলে ওপরের অর্ধেক মানুষ নিচে চলে যাবে। এতে শহরের ওপর চাপ কমবে।’ মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহরের মূল যে অংশ, চকবাজার, বহদ্দারহাট এরকম আরও অনেক এলাকায় এখন সড়কের ওপর দিয়ে মেট্রোরেল নিয়ে যাওয়াটা কঠিন হবে। হয়ত সম্ভব হবে না। বহদ্দারহাটের পর কালুরঘাট দিয়ে হয়ত সড়কের ওপর দিয়ে মেট্রোরেল যেতে পারবে, কিন্তু বহদ্দারহাট থেকে চকবাজার হয়ে শহরের দিকে হতে পারবে না। এ কারণে এটা আন্ডারগ্রাউন্ড হলে বেশি উপকার হবে।’ সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, ‘চট্টগ্রামে অনেক মেগাপ্রকল্পের কাজ চলছে। সেখানে অনেক বিদেশি নাগরিক কাজ করেন। তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার একটা বিষয় আছে, কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নকারীদের সঙ্গে পুলিশের সমন্বয়হীনতা আছে। তাদের কাছ থেকে প্রস্তাবগুলো আসে খুবই বিক্ষিপ্তভাবে, এতে নিরাপত্তার পরিকল্পনা বিঘিœত হয়। ট্রাফিক সিস্টেম এবং সিকিউরিটি- এই দু’টি বিষয় মাথায় রাখতে হবে এবং এখন থেকেই সক্ষমতা বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ।’

# ০৮.০২.২০২২ চট্টগ্রাম #