চলমান সংবাদ

জাহাজ ভাঙ্গা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের মানবন্ধনে পুলিশের বাধা

– জাহাজ-ভাঙ্গা শ্রমিকদের জীবনমান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি

গত ৩১ জানুয়ারী রাত ১টায় কবির স্টিল শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে আরিফুল ইসলাম সুজন নামে একজন কাটার ম্যান কর্মরত অবস্থায় লোহার পাত পড়ার কারনে মারাত্মক আহত হয়ে কর্মস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। উক্ত দুর্ঘটনার প্রতিবাদে আজ সকাল ১১টায় জাহাজ ভাঙ্গা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের উদ্যোগে  চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে এক মানববন্ধন কর্মসূচী আহ্বান করা হয়। পুলিশের বাধার মুখে উক্ত কর্মসূচী পরবর্তীতে বিক্ষোভ সমাবেশে রুপ নেয়।

উক্ত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন,জাহাজ শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক এ এম নাজিম উদ্দিন,বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় সংগঠক ফজলুল কবির মিন্টু, জাহাজ ভাঙ্গা শ্রমিক নেতা মোহাম্মদ আলী, বিএফটিউসির চট্টগ্রাম জেলার সাধারন সম্পাদক কে এম শহিদুল্লাহ প্রমুখ শ্রমিকনেতা।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন,জাহাজ ভাঙা শিল্পে বার বার দুর্ঘটনা ঘটলেও মালিক ও সরকার নির্বিকার। কেবল ২০২১ সালেই এই শিল্পে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ১৩ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। বিগত তিন বছরে ৪৬ জন শ্রমিক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন এবং শতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছে।  নেতৃবৃন্দ প্রশ্ন করেন, আর কত শ্রমিক মারা গেলে এবং আহত হলে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প খাতে দুর্ঘটনা বন্ধ হবে এবং জাহাজ ভাঙ্গা শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী জাহাজ কাটার আগে বর্জ্য, বিষাক্ত গ্যাস এবং বিস্ফোরক মুক্ত করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা যথাযথভাবে অনুসরন করা হয়না। ভৌগলিক সুবিধার কারনে বিশ্বের বেশীর ভাগ বড় জাহাজ এখানে কাটা হয়। কিন্তু বড় জাহাজ কাটার জন্য যে ধরনের আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা প্রয়োজন অধিকাংশ ইয়ার্ডে তা ব্যবহার করা হয়না। শ্রম আইনের ৯০(ক) ধারা মতে সেফটি কমিটি গঠন বাধ্যতামূলক হলেও এখনো পর্যন্ত কোন ইয়ার্ডে সেফটি কমিটি গঠন করা হয়নি। ফলে প্রতিনিয়ত মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে শ্রমিকেরা কাজ করছে। দুঃখজনক হলেও জাহাজ-ভাঙ্গা শ্রমিকদের কর্মস্থান আজ কবরস্থানে পরিনত হয়েছে।

বাংলাদেশে বিদ্যমান শ্রমআইন অনুযায়ী কোন সুবিধাও জাহাজ-ভাঙ্গা শ্রমিকেরা পাচ্ছেনা। ২০১৮ সালে মজুরি বোর্ডের রোয়েদাদ অনুযায়ী এই সেক্টরের শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি মাসিক ১৬০০০ টাকা এবং দৈনিক ৬১৫ টাকা। মজুরি বোর্ডের রোয়েদাদ কার্যকর করা শ্রম আইনের ১৪৮ ধারা অনুযায়ী বাধ্যতামূলক হলেও মালিকেরা তা মানছেনা। জাহাজ-ভাঙ্গা শিল্পের মালিকরা এত বেশী প্রভাবশালী যে, তারা একের পর এক অনিয়ম করে গেলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার মত সৎ সাহস সংশ্লিষ্ট সরকারী কর্মকর্তারা দেখাতে পারেননা।

রাতের বেলায় কাজ না করার জন্য হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকলেও মালিকেরা তা মানেননা। শ্রমিকেরা এখনো দৈনিক মাত্র ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজ করে থাকে। শ্রমিকদের উৎসব বোনাসও দেয়া হয়না। অনেক ইয়ার্ডে সময়মত মজুরিও পাওয়া যায়না। এত অনিয়ম,অবিচার ও নির্যাতন সহ্য করেও শ্রমিকেরা প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে। জাহাজ-ভাঙ্গা শিল্প আজ এক চরম অনিরাপদ কর্মক্ষেত্রে উপনীত হয়েছে। এ থেকে পরিত্রানের জন্য রাষ্ট্র বা মালিকের যেন কোন দায় নেই।

সমাবেশ থেকে আইএলও কনভেনশন ১২১ অনুসরন  করে লস অফ ইয়ার আর্ণিংস হিসাবে নিহতের পরিবারকে কমপক্ষে ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবী জানানো হয়।