মতামত

আইন মেনেই বলছি

-উত্তর পুরুষ

কাক একটা পাখি। বাংলায় বলি কাক। আবার স্থানীয় ভাষায় বলি কাউয়া। যে নামেই ডাকি না কেন কাক নিয়ে কত কথাই না বলি আমরা। বেচারা কাক। ডেকে উঠলে না হয় একটু কানে লাগে, কিন্তু তাতে কি? কানে আমদের কত কিছুই না লাগে সব কিছু নিয়ে কি বলি? বলি না। কিন্তু যত দোষ নন্দ ঘোষ। সব কাকের ঘাড়ে। কাকের ডাক কর্কশ। কাক দেখতে কুৎসিত । কাক কাল।  কাক ময়লা খায়। কত কিছুই না বলি । আবার বলি, বেচারা কাক। তার উপর আবার কাকের শ্রেনী বিন্যাস করি দাঁড় কাক, পাতি কাক। এইসব আর কি ? আমরা কারো ডাকে বিরক্ত হলেই বলি-আরে কাকের মত চিৎকার করছিস কেন ? আরে ভাই কাক তো একটা পাখি নাকি? কত যে উপকারি পাখি তা যেখানে কাক নাই তারাই জানে। বড় শহরগুলোর ময়লা কাক পরিস্কার করে। এটা একটা বড় কাজ না? আপনি, আমি বিনা পয়সায় করব? পয়সা দিলেও করব না। আরে এটা আমার কাজ নাকি? এটা তো সুইপারের কাজ। বলেন তো কত জ্বালা । যাকগে, কাকের যে এত গুণগান করছি, তার জন্য কাক আমার জন্য কিছু করবে কি ? কিচ্ছুই না। সুজন সখি সিনেমার গানটা তো মনে আছে আপনাদের । না না, সব সখিরে না। ঐ গানটা ভাই, বুঝলেন না- ‘ আরে কথায় বলে গাছে বেল পাকিলে/ তাতে কাকের কী/ ওরে কাকের কাকা ডাকে/ যদি একে একে/ গাছের বেল ঝরিয়া যায়/ তাতে দোষের কী?’ থাক, থাক,  কাকের প্রশংসা করার দরকার কি, বলেন? মানুষের প্রশংসা করলে না হয় কিছু কাজের কাজ হত। বিরোধী পক্ষ হলে ও একটা পুরস্কার তো পেতাম। আরে ধুর, এই আমার এক বদ অভ্যাস। কি কথা বলতে কি কথা বলে ফেলি , মনেই থাকে না। বিরোধী শিবিরে থেকে কেউ কেউ তো বড় সর সরকারী  পুরস্কার ও পায় । কি পায় না?  কথাটা কি মিছা কইলাম, বলেন তো ? 

যাকগে কথায় কথা বাড়ে, শিয়ালে লেজ নাড়ে। যেটা বলছিলাম সেটাই বলি। কথাটা কি, দলের কেউ অপরাধ করার পর জানাজানি হলে ‘উনি’ বলেন কাওয়া করছে। ঐ লোক তো আমার দলের না-কাউয়া। তা ‘উনি’ বলতেই পারেন। কাউয়া করছে। কেন কাউয়ার উপর দোষ দেন? বেচারা কাউয়া একটু খাবার দেখে না হয় ঘরের ভিতর ঢুকে পড়ছে। শিয়াল ও কি ঢুকে নাই ? ঢুকছে তো বটেই কিন্তু দোষটা কাউয়ার।  আপনারা দরজা খুলে দেবেন, উচ্ছিষ্ট খাবার ফেলবেন আর কাউয়া ঢুকবে না, তা কি হয় ? দেখেন তো কারবার টা। এই ধরেন দেশে ইউ পি নির্বাচন চলছে। দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কেউ নির্বাচন করলে বলবেন – ঐ বিরোধী প্রার্থী কাউয়া। আবার দলের লোকেরা বলে ঐ প্রার্থী কাউয়া। এখন কে কাউয়া আর কে কাউয়া না তা বোঝা আমার মত মুখ্যু সুখ্যু মানুষের পক্ষে কষ্টকর। বাদ দেন আমি আবার মানুষ। আমি হলাম গিয়ে ম্যাঙ্গো পিপলদের একজন – দুধ ভাত। শুধু দেখে যাওয়া হল কাজ।

আবার দেখেন কাহিনীটা,  এক ইউ পি  প্রার্থী ১৯৭১ এর পাকিদের দোসর জামাতের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করছে। শুধুই কি তাই? উনি আবার জামাতের বড় নেতার ছেলে আবার অন্য দিকে দলের এম পি সাহেবের শ্যালক। কত দিকেই যে হাত। স্থানীয় লোকজন তো কথা বলে । অবশ্য তারা তো আমার মত ম্যাঙ্গো পিপল, তাদের কথার কি দাম আছে? ঐ জামাতি নেতার পুত্র নির্বাচন করবেই করবে। এক কথার মানুষ আমরা। যা বলি তা করি। নারে ভাই দোষ নিয়েন না আপোষহীন বলি নাই। ঐটা বললে আবার আমার খবর হয়ে যাবে । সব কথা না বলাই ভাল, কি বলেন ?  কিন্তু আমি আবার সব বুঝি না, তাই বলেই ফেলি। পত্রিকায় দেখলাম তিনি মানে ঐ প্রার্থী যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার গায়েবানা জানাজায় ইমামমতি  করেছেন, বালু উত্তোলনের প্রতিবাদকারীদের উপর গুলি ও করেছিলেন । দেখেন বাপের বেটা একটা। বাপ একাত্তর সালে যা করেছিলেন ছেলে স্বাধীন দেশে তা করে হিরো হয়ে গেছেন। একবারেই হিরো হিরালাল।  ঐ প্রার্থী বলেই ফেললেন আমার বাবা রাজাকার হতে পারে, আমি কিন্তু সোনার ছেলে ছিলাম ছাত্র জীবনে। আর এখন তো তাঁতি লীগের নেতা । বাপরে বাপ, লীগের ও শেষ নাই। একটা ফেসবুক লীগ বানিয়ে ফেললেই হল । পৃথিবীর সব লোকই  এই লীগে যোগ দিতে পারতো। কথা কি বেশি বলে ফেললাম? আমি আইনের বাইরে কিছুই বলতে চাই না। আমি শান্তিতে থাকতে চাই। আপনারা ও শান্তিতে থাকেন।