চলমান সংবাদ

সিআরবি এলাকায় যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচল বন্ধে গেইট নির্মান করছে রেলওয়ে, নগরবাসীর ক্ষোভ

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত ও চিরসবুজে ঘেরা মনোমুগ্ধকর এলাকা চট্টগ্রামের সিআরবি এলাকাটি অবরুদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ। একদিকে শতবর্ষী গাছ ও প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস করে বেসরকারি হাসপাতাল নির্মাণের পাশাপাশি এখন সিআরবি’র তিনটি প্রবেশ পথে গেইট নির্মাণ করে সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং (সিআরবি) এলাকায় সকল যানবাহন ও সর্বসাধারনের চলাচল বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নিরাপত্তার অযুহাত দেখিয়ে নগরীর সিআরবি এলাকায় তিন দিকের প্রবেশপথের মূল সড়কে গেট নির্মাণ করছে রেল কর্তৃপক্ষ। কদমতলী পেট্রোল পাম্পের সামনে দিয়ে সিআরবিতে প্রবেশপথে গত কয়েকদিন ধরে গেট নির্মাণের কাজ চলছে। সড়কের দুই পাশের ফুটপাত ঘেঁষে ইতোমধ্যে দুটি পিলার বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। শ্রমিকরা পিলারের পাশে মাটি ভরাটের কাজ করছে। তবে টাইগারপাস হয়ে সিআরবিতে প্রবেশপথ এবং স্টেডিয়ামের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে প্রবেশপথে এখনো নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি। খুব শিগগিরই এই দুটি প্রবেশ পথে গেইট নির্মাণের কাজ শুরু হবে বলে জানা গেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর শতবর্ষী গাছ কেটে সিআরবি এলাকায় বেসরকারি হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা বন্ধে নগরবাসি যখন প্রতিবাদে মূখর ঠিক তখনি অনেকটা লুকোচুরি করেই সিআরবি প্রবেশের সবগুলো পথে গেইট নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। নগরবাসীর শ্বাস নেয়ার অন্যতম উন্মুক্ত স্থান হেরিটেজ ঘোষিত সিআরবি এলাকাটি অবরুদ্ধ করার এই প্রক্রিয়ায় নগরবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। সিআরবির মতো সবুজে ঘেরা প্রাকৃতিক উন্মুক্ত স্থানে সর্বসাধারণের প্রবেশপথে গেট নির্মাণের খবরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রামের সংস্কৃতিসেবী, পরিবেশবিদ থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তাদের অনেকের মতে, চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত সিআরবি নগরবাসীর উন্মুক্ত বিনোদনের স্থান। এখানে উন্মুক্ত মঞ্চে বাঙালির পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু করে বছর জুড়ে কোনো না কোনো সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম নগরবাসীর এমন একটি জনপ্রিয় উন্মুক্ত স্থানে সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার সংকুচিত করে দেওয়া কোনো অবস্থাতেই সমীচিন হবে না। সিআরবির প্রবেশপথে গেইট নির্মাণের বিষয়টি স্বীকার করে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, প্রতিদিন এ সড়কে ভারী যানবাহন চলাচল করে। সিআরবির সড়কটি ভারী যানবাহন চলাচলের উপযোগী নয়। ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে সিআরবি এলাকায় প্রবেশপথের তিন দিকে গেট নির্মাণ করছি। প্রয়োজনে ভবিষ্যতে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করা হতেও পারে। গেট নির্মাণ করা হলেও এখনই যানবাহন কিংবা সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার সীমিত করা হচ্ছে না। ভবিষ্যতে যদি কখনো প্রয়োজন পড়ে তখন হয়তো সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার সীমিত করার বিষয়টি ভাবা হতে পারে। রেলওয়ের গেট নির্মাণ কান্ডে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রামের রাজনীতিবিদ থেকে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। সিআরবির প্রবেশপথে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের গেট নির্মাণ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন সিআরবি রক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ক্যান্টনমেন্ট এলাকার সড়কও সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে। আর সিআরবি এলাকা কোনো ক্যান্টনমেন্টও নয়। নগরবাসীর সাংস্কৃতিক ও বিনোদনের এমন একটি স্থানে সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার কোনভাবেই সীমিত করতে দেয়া হবে না।’ সিআরবি রক্ষার আন্দোলনের অন্যতম নেতা চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, চট্টগ্রামবাসী সবকিছুর বিনিময়ে হলেও সিআরবি এলাকায় এমন কর্মকান্ড রুখে দেবে। এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সিআরবি রক্ষার আন্দোলনে সক্রিয় সংস্কৃতি সংগঠক আবৃত্তিকার প্রনব চৌধুরী বলেন, নগরবাসী শ্বাস নেয়ার অন্যতম উন্মক্ত স্থান, বিনোদন ও সাস্কৃতিক কর্মকান্ডের অন্যতম প্রধান স্থান সিআরবিকে অবরুদ্ধ করার জন্যই এই অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বন্ধ করতেই এই অপচেষ্টা। এই ধরনের কর্মকান্ড মৌলবাদী অপশক্তির। রেলওয়ের কাছ থেকে এই ধরনের কাজ আশঅ করা যায় না। সিআরবি ধ্বংস করে হাসপাতাল নির্মান বন্ধের নগরবাসীর গণ আন্দোলনকে নস্যাৎ করতেই এই গেট নির্মাণ।
# ১৮.০১.২০২২ চট্টগ্রাম #