চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে হু হু করে

মার্কেট-রাস্তাঘাট-দোকানপাট স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই মাঝখানে কয়েকমাস কম থাকলেও চট্টগ্রামে ফের চোখ রাঙাচ্ছে করোনাভাইরাস। হু হু করে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। যেখানে গত ডিসেম্বরে পুরো মাসে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৩৭, সেখানে বৃহস্পতিবারের প্রতিবেদনে শুধু একদিনেই চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২৬০ জন। গত ৭ দিন ধরে ধারাবাহিকভাবে প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এদিকে করোনা ভয়াবহ এ সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের পক্ষ থেকে ১১টি বিধি-নিষেধ আরোপ করা হলেও চট্টগ্রামের মার্কেট থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট, দোকানপাট ও ফুটপাতের অধিকাংশ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে উদাসীনতা লক্ষ্য করা গেছে। তাই স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে এবার কঠোর হবে জেলা প্রশাসন। মাঠে থাকবেন ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আগামী শনিবার (১৬ জানুয়ারি) থেকে মাঠে নামছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে তারা কঠোর অবস্থানে থাকবেন বলে জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যলয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ৬ জানুয়ারি থেকে ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্তের সংখ্যা বেড়েছে ক্রমবর্ধমান হারে। গত ৮ দিনে করোনা আক্রান্ত ছিল যথাক্রমে ৫৩, ৮২, ৭৬, ১০৪, ১১৯, ২০৭, ২২২ ও ২৬০। বৃহস্পতিবারের (১৩ জানুয়ারি) প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে চট্টগ্রাম জেলায় গত একদিনে ১৬টি ল্যাবে দুই হাজার ৫৩২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৬০ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি। মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে জেলায় দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ১৫০ শতাংশ। বৃহস্পতিবারের হিসাবে দৈনিক নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্ত রোগীর হার ১০ দশমিক ২৬ শতাংশ। নতুন রোগীদের মধ্যে ২২৬ জন চট্টগ্রাম মহানগরীর বাসিন্দা, বাকি ৩৪ জন বিভিন্ন উপজেলায় থাকেন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় মোট এক লাখ তিন হাজার ৮৯২ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে এক হাজার ৩৩৫ জন মারা গেছেন। করোনা চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে করোনার সংক্রমণ ‘পিক টাইমে’ পৌঁছাবে। এই সময়ে সংক্রমণ ও করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রোগী ভর্তির পরিমাণ বাড়বে অনেক বেশি। ফলে এখন থেকেই নাগরিকদের সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। নগরীর বিভিন্ন মার্কেট ও এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জহুর হকার মার্কেট, নিউ মার্কেট, রিয়াজউদ্দিন বাজার, সেন্ট্রাল প্লাজা এবং আশপাশের এলাকায় অধিকাংশ পথচারীর মুখে মাস্ক নেই। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মার্কেট কর্তৃপক্ষ বা ব্যবসায়ীরা নেয়নি কোনো ব্যবস্থা। এর মধ্যে নগরীতে চলছে দুটি মেলা। নগরীর হালিশহরে চলছে চিটাগং উইম্যান চেম্বার অব কমার্সের বাণিজ্য মেলা ও কাট্টলীর নূরুল ঘশ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে চলছে তাঁত ও বস্ত্র মেলায়। এসব মেলাও দর্শনার্থী ও স্টলে থাকা মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন বালাই ছিল না। অনেককে মাস্ক না-পরেই কেনাকাটা ও বেচাকেনা করতে দেখা গেছে।করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ার তথ্য জানার পরও সচেতন নয় বেশিরভাগ মানুষ। ফলে সরকারের আরোপ করা বিভিন্ন বিধিনিষেধ কার্যকরের ক্ষেত্রে এসব শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। জনসচেতনতা প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. সুশান্ত বড়–য়া বলেন, সচেতন থাকা ও স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন বিকল্প নেই। সচেতন না হলে, সরকারসহ সকল স্বাস্থ্যকর্মীর সব ধরণের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে।
# ১৩.০১.২০২২ চট্টগ্রাম #