চলমান সংবাদ

যমুনা শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে অগ্নিবিস্ফোরনে শ্রমিক আহত হওয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ

– জাহাজ-ভাঙ্গা শ্রমিকদের জীবনমান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

জাহাজ-ভাঙ্গা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের মানববন্ধন কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখছেন জাহাজ-ভাঙ্গা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের আহ্বায়ক শ্রমিক নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা তপন দত্ত

গতকাল ২৫ ডিসেম্বর রবিবার সীতাকুন্ড উপজেলার শীতলপুরে অবস্থিত  যমুনা ব্রেকিং ইয়ার্ডে অগ্নিবিস্ফোরনে ৪জন শ্রমিক  মারাত্মকভাবে আহত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। জাহাজ ভাঙা শিল্পে বার বার দুর্ঘটনা ঘটলেও মালিক ও সরকার নির্বিকার। কেবল ২০২১ সালেই এই শিল্পে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ১২ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এভাবে ধারাবাহিক মৃত্যুর প্রতিবাদে জাহাজ-ভাঙ্গা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের উদ্যোগে অদ্য ২৬ ডিসেম্বর ২০২১ সকাল সাড়ে ১১ টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানব বন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করা হয়েছে। জাহাজ-ভাঙ্গা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের কোষাধ্যক্ষ রিজওয়ানুর রহমান খানের সভাপতিত্বে  অনুষ্ঠিত উক্ত মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাহাজ-ভাঙ্গা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের আহ্বায়ক তপন দত্ত, বিলস এর সিনিয়র কর্মকর্তা পাহাড়ি ভট্টাচার্য, বিএফটিইউসি চট্টগ্রাম জেলার সাধারন সম্পাদক শ্রমিকনেতা কে এম শহিদুল্লাহ, জাহাজ ভাঙ্গা শ্রমিক নেতা মোহাম্মদ ইদ্রিছ, সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন পরিবহন শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি উজ্জ্বল বিশ্বাস, হাসিবুর রহমান বিপ্লব, মোঃ পারভেজ প্রমুখ এবং সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন টিইউসি চট্টগ্রাম জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ইফতেখার কামাল খান এবং জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুর রহমান মজুমদার মানববন্ধন কর্মসূচী সঞ্চালনা করেন বিলস কর্মকর্তা ও  শ্রমিক নেতা ফজলুল কবির মিন্টু।

নেতৃবৃন্দ বলেন, ২০১৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৮ বছরে কমপক্ষে ১১০জন ও দুই শতাধিক মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে যাদের অধিকাংশ স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতেছে।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন ২০২১ সনে ইতিমধ্যে ১২ জন শ্রমিক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে এবং ৩০ জনের বেশি মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে।  বছরের পর বছর জাহাজ-ভাঙ্গা শিল্প খাতে দুর্ঘটনা এবং শ্রমিকের মৃত্যুর হার ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পেলেও দায়ী মালিক বা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী জাহাজ কাটার আগে বর্জ্য, বিষাক্ত গ্যাস এবং বিস্ফোরক মুক্ত করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা যথাযথভাবে অনুসরন করা হয়না। ভৌগলিক সুবিধার কারনে বিশ্বের বেশীর ভাগ বড় জাহাজ এখানে কাটা হয়। কিন্তু বড় জাহাজ কাটার জন্য যে ধরনের আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা প্রয়োজন অধিকাংশ ইয়ার্ডে তা ব্যবহার করা হয়না। শ্রম আইনের ৯০(ক) ধারা মতে সেফটি গঠন বাধ্যতামূলক হলেও এখনো পর্যন্ত কোন ইয়ার্ডে সেফটি কমিটি গঠন করা হয়নি। ফলে প্রতিনিয়ত মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে শ্রমিকেরা কাজ করছে। জাহাজ-ভাঙ্গা শ্রমিকদের কর্মস্থান আজ কবরস্থানে পরিনত হয়েছে। যার সর্বশেষ শিকার যমুনা শিপ ইয়ার্ডের ৪ জন হতভাগ্য শ্রমিক।

বাংলাদেশে বিদ্যমান শ্রমআইন অনুযায়ী কোন সুবিধাও জাহাজ-ভাঙ্গা শ্রমিকেরা পাচ্ছেনা। ২০১৮ সালে মজুরি বোর্ডের রোয়েদাদ অনুযায়ী এই সেক্টরের শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি মাসিক ১৬০০০ টাকা এবং দৈনিক ৬১৫ টাকা। মজুরি বোর্ডের রোয়েদাদ কার্যকর করা শ্রম আইনের ১৪৮ ধারা অনুযায়ী বাধ্যতামূলক হলেও মালিকেরা তা মানছেনা। জাহাজ-ভাঙ্গা শিল্পের মালিকরা এত বেশী প্রভাবশালী যে, তারা একের পর এক অনিয়ম করে গেলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার মত সাহস সরকারী কর্মকর্তারা দেখাতে পারেননা।

রাতের বেলায় কাজ না করার জন্য হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকলেও মালিকেরা তা মানেননা। শ্রমিকেরা এখনো দৈনিক মাত্র ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজ করে থাকে। শ্রমিকদের উৎসব বোনাসও দেয়া হয়না। অনেক ইয়ার্ডে সময়মত মজুরিও পাওয়া যায়না। এত অনিয়ম,অবিচার ও নির্যাতন সহ্য করেও শ্রমিকেরা প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে। জাহাজ-ভাঙ্গা শিল্প আজ এক চরম অনিরাপদ কর্মক্ষেত্রে উপনীত হয়েছে। এ থেকে পরিত্রানের জন্য রাষ্ট্র বা মালিকের যেন কোন দায় নেই।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, মালিকেরা ব্যবসা এবং মুনাফা বুঝে কিন্তু শ্রমিকের জীবনের নিরাপত্তা বুঝেনা। রাষ্ট্র এবং মালিকদের এমন নির্লিপ্ততা আর মেনে নেয়া সম্ভব নয়। শ্রমিকের রক্তে রঞ্জিত জাহাজ-ভাঙ্গা ইয়ার্ডে যদি আর একজন শ্রমিকও আহত বা নিহত হয় তা দেশের শ্রমিক শ্রেণী মেনে নেবেনা।
সমাবেশ থেকে আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার দাবী জানানো হয়। মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহরের মূল মূল সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

# ২৬/১২/২০২১, চট্টগ্রাম #