চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত

-মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার

ধর্মান্ধ-সাম্প্রদায়িক অপশক্তিতে প্রতিহত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বিজয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মদানকারী বীর সন্তানদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পনের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোকচিত্র প্রদর্শন, কুচকাওয়াজ, আলোচনা সভা, শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। এসব কর্মসূচিতে তারা সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-মৌলবাদ নির্মূলের শপথ নেন। বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে এবং বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সব বয়সের মানুষের সমাগম ঘটে চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। ফুলে ফুলে ভরে উঠে শহীদ বেদি। হাতে ফুল, মাথায় লাল সবুজের ব্যান্ড ও হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে ভোর থেকে শহীদ মিনারে ছুটে আসেন বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের পাশাপাশি শ্রেণি-পেশার মানুষ। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ৫০ বার তোপধ্বনি দেওয়া হয়। সূর্যোদয়ের পর ভোরে চট্টগ্রাম নগরীর কোর্ট হিলে ৩১ বার তোপধ্বনি বিজয় দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রামের সকল সরকারি, বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এছাড়া বর্ণিল আলোকসজ্জাও করা হয়েছে বিভিন্ন সরকারি ভবনে। সকালে নগর পুলিশের একটি চৌকস দলের ‘গার্ড অব অনারের’ মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী কাউন্সিলরকে নিয়ে প্রথমে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধারাও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার কামরুল হাসান, সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান, পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা ফুল দেন। সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সংস্থার কার্যালয়ের পক্ষ থেকে ফুল দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। কমিউনিস্ট পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, ন্যাপ, বাসদ, যুব ইউনিয়ন, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র মৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, উদীচী, বোধন, প্রমা, খেলাঘরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের নেতৃত্বে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে নগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিজয় দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি সকালে নগরীর নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয় থেকে বিজয় শোভাযাত্রা বের করে। সেই শোভাযাত্রা নিয়ে তারা শহীদ মিনারে গিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। নগর বিএনপির আহবায়ক শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর এই কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন। এদিকে চসিকের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর পর নগরীর টাইগারপাসে অস্থায়ী কার্যালয় প্রাঙ্গনে স্থাপিত জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। নগরীর চকবাজারে প্যারেড মাঠে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কুচকাওয়াজের পর মেয়র শিক্ষার্থীদের সালাম গ্রহণ করেন। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে কুচকাওয়াজের আয়োজন করে। এতে নগরীর বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এসময় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন শারীরিক কসরত প্রদর্শন করেন। বিকেল সাড়ে চারটায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শপথবাক্য পাঠ করান। শপথবাক্য পাঠে ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষের জমায়েত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা পরিষদের উদ্যোগে প্রতিবছরের মতো এবারও বের হয়েছে বর্ণাঢ্য বিজয় র‌্যালি। নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের সামনে থেকে সকাল সাড়ে ১০টায় বিজয় র‌্যালি শুরু হয়। র‌্যালিতে নগর ও জেলা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী, মেরিন একাডেমিসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। দেশাত্মবোধক গান ও বাদ্যের তালে এগিয়ে যাওয়া র‌্যালিতে বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা ছিলেন। র‌্যালির সামনে ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রয়াত রাজনীতিক এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রতিকৃতি। উদীচী চট্টগ্রামের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নগরীর চেরাগি চত্বরে ‘মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র’ প্রদর্শনী ঞয়। বিকেলে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর মঞ্চে পরিবেশন করা হবে গণসঙ্গীত ও দেশাত্মবোধক গান। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন উদ্যোগে সকালে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের শেখ রাসেল চত্বরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার কামরুল হাসান। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন, পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, পুলিশ সুপার রশিদুল হক, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিট কমান্ডার মোজাফফর আহমদ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার এ কে এম সরোয়ার কামাল। এ সময় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা স্মারক ও উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়। বিজয় দিবসে চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে লালদীঘি চত্বরে সংগঠনের চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আলম মন্টুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা.সরফরাজ খান চৌধুরী। প্রধান আলোচক ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেদারুল আলম চৌধুরী বেদার। উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজল আহমেদ, ফোরকান উদ্দিন, মহানগর যুগ্ম সম্পাদক মো. সেলিম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক সাহেদ মুরাদ শাকু, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য সাইফুন্নাহার খুশী প্রমুখ। এসময় জাতির মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। # ১৬.১২.২০২১ চট্টগ্রাম #