চলমান সংবাদ

সম্পাদকীয়: বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তীঃ গণতন্ত্রের অন্বেষণে বাংলাদেশ – উৎপল দত্ত

আজ ১৬ ডিসেম্বর। বাঙ্গালী জাতি পাকিস্তানের স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী নয় মাস সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা অর্জন করে। এই লড়াই শুধুমাত্র নয় মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম নয়, এর সাথে আছে ১৯৪৮ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসন-শোষন এর বিরুদ্ধে দীর্ঘ চব্বিশ বছর লড়াই সংগ্রাম।

দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে হাজার মাইল ব্যবধানের পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে যুক্ত করে একটি জাতিকে যে শৃঙ্খলিত করে রাখা যায় না তা সেই সময়ের জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদরা প্রথমে বুঝতে না পারলেও অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এই ভ্রান্তি দূর হয়ে যায় এবং এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে জানিয়েছে এভাবে একটি দেশ হয় না। হাজার বছরের সংস্কৃতি, কৃষ্টি , আচার, আচরণ কে বিবেচনায় না নিয়ে শুধু মাত্র একটি সম্প্রদায়ের  জন্য একটি দেশ গড়ার প্রক্রিয়া অর্বাচীনতা ছাড়া অন্য কিছুই নয়। এরপর ধারাবিহিকভাবে লড়াই সংগ্রাম করেছে বাঙ্গালী ।.১৯৫২ সালের ভাষার লড়াই , ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন এর মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছে বাঙ্গালী জাতি কারো বশ্যতা শিকার করে বাঁচতে রাজি নয়। ১৯৬৬ সালে ৬ দফার ভিত্তিতে আন্দোলন শুরু করে ১৯৬৯ সালে গণ অভ্যত্থান এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানী স্বৈরশাসককে পদত্যাগে বাধ্য করেছে। এরপর ১৯৭০ সালে  নির্বাচন ও ১৯৭১ সালের মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।

মানুষের শক্তি দেশকে অগ্রসর করে নিয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে দেশ আগের তুলনায় অনেক বেশি সমৃদ্ধ হয়েছে। গ্রামীণ মহিলাদের ক্ষমতায়ন হয়েছে। হাজার হাজার প্রবাসী দেশে রেমিটেন্স পাঠিয়ে রিজার্ভ স্ফিত করেছে। গার্মেন্টস শিল্প যেমন আয় বৃদ্ধি করেছে ঠিক একই সাথে লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরী করেছে। বাংলাদেশ আজ তলাবিহীন ঝুড়ি নয়। একটি সমৃদ্ধ জনপদ। কিন্তু এটাই শেষ কথা নয়। 

আমরা সংবিধানে চার জাতীয় মূলনীতি সংযোজন করে তার ভিত্তিতে দেশ পরচালনার দায়িত্ব নিয়েছিলাম। কিন্তু স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পর আমরা দেখি সেই সংবিধান আজ ক্ষত বিক্ষত। এই ক্ষত শুধু কাগজে কলমে নয়, আমাদের রাষ্ট্রের চরিত্র ও আজ ক্ষত বিক্ষত। পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অবস্থান নিয়েছে। অর্থনৈতিক সমতা, গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের যে স্বপ্ন মুক্তিযুদ্ধে বাঙ্গালী দেখেছিল তা আজ সুদূর পরাহত। পাকিস্তানের  ২২ ধনী পরিবারের জায়গায় ২২,০০০ ধনী পরিবারের জন্ম হয়েছে, ধনী দরিদ্রের বৈষম্য আজ আগের তুলনায় যে বেড়েছে তা আর পরিসংখ্যান দিয়ে দেখাতে হয় না। পেশী শক্তি ও জবরদস্তি ক্ষমতার প্রধান মিত্রে পরিণত । সমাজের সর্বস্তরে সাধারণ মানুষ আজ অসহিষ্ণুতা, দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তের হাতে বন্দি ।

এই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে মানুষ মুক্তি চায়; পেশি শক্তি, জবরদস্তিমুলক ব্যবস্থার অবসান চায়। সামাজিক ন্যায় বিচার, সমাজের সর্বস্তরে গণতন্ত্রায়ন আজ মানুষের আর্তি । মানুষ আজ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শ্বাস নিতে চায়। এর জন্য প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের অর্জনের কাছে ফিরে যাওয়া। চাই একাত্তরের মত আর একটি জাগরণ এবং ইতিহাস বলে তা অবশ্যম্ভাবী ।